ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

মাটি ছাড়াই ফুল ফল সবজি চাষ

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২১ মে ২০১৭

মাটি ছাড়াই ফুল ফল  সবজি চাষ

এই পৃথিবীর তিনভাগ জল আর মাত্র এক ভাগ স্থল বা ভূমি। এই একভাগ স্থলেই ৬৫০ কোটির বেশি মানুষের আবাস, আবাদসহ যাবতীয় কার্যক্রম। কিন্তু বিশ্বের বিপুল জনগোষ্ঠীর ক্ষুধা নিবারণে এই এক ভাগ স্থল আদৌ যথেষ্ট নয়। দেশে প্রতিদিন কমছে চাষযোগ্য জমি। ফসলের মাঠে শিল্প আর শিল্পের জায়গায় আবাসন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বসতভিটা তৈরি, অপরিকল্পিত চাষাবাদ, যোগাযোগের জন্য রাস্তা ও শিল্প-কলকারখানা স্থাপনের কারণে দেশে মাথাপিছু চাষযোগ্য জমির পরিমাণ সঙ্কুচিত হচ্ছে। বর্ধিত জনসংখ্যার অব্যাহত খাদ্য চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে তাই শুধু আবাদি জমির ওপর নির্ভর করা যাবে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই কঠিন সত্যটি উপলব্ধি করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। কিভাবে সীমিত জমির উত্তম ব্যবহার করে ফসলের ফলন বাড়ানো যায় এই নিয়ে সারা বিশ্বে চলছে ব্যাপক বিস্তর গবেষণা। এই গবেষণায় সফলতা নিহায়ত কম নয়। এই ব্যাপক বিস্তার গবেষণার ফলাফলস্বরূপ পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষ আজও পেটপুরে খেতে পারে। যদিও এখনও খাদ্য নিরাপত্তার বাইরে আছে শতকোটির বেশি মানুষ, যারা একবেলাও পেটপুরে খেতে পায় না। ফুল-ফল, শাক-সবজি মাটিতে চাষ হবে এটাই স্বাভাবিক, সনাতন ও প্রচলিত পদ্ধতি। কিন্তু বর্তমানে দেশে যে হারে আবাদী জমি কমছে তাতে অনেকের পক্ষে চাইলেই জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ শহর অঞ্চলে পছন্দমতো জমি নিয়ে শাক-সবজি, ফল-মূল আবাদ প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এমনই কঠিন বাস্তবতায় মানুষ যাতে মাটি ছাড়াই বাড়ির আঙিনা, ছাদ, বারান্দা বা খোলা জায়গায় তাদের পছন্দের ফসল, ফুল ও সবজির আবাদ করতে পারে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা। অনেকটা পানিনির্ভর বিকল্প এই ফসল উৎপাদন পদ্ধতি জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে দিন দিন। মাটিবিহীন চাষ কৌশলে উৎপাদন হচ্ছে টমেটো, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, ক্ষীরা, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, অ্যানথরিয়াম, গাঁদা, গোলাপ, অর্কিড, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা ফসল। মাটিবিহীন এই চাষ পদ্ধতিকে বলা হয় হাইড্রোপনিকস এবং একোয়াপনিকস। যেখানে স্বাভাবিক চাষের জমি কম বা জমি একেবারেই নেই, সেখানে পলি টানেল, টব, বালতি, জগ, বোতল, পাতিল, প্লাস্টিকের ট্রে, নেট হাউসে অনায়াসে এসব পদ্ধতিতে সবজি, ফল ও ফুল উৎপাদন করা যাচ্ছে। কৃষক থেকে শৌখিন চাষী সবার কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে এসব পদ্ধতি। এই চাষাবাদে কোন কীটনাশক বা আগাছানাশক প্রয়োজন পড়ে না। অনায়াসে গড়ে তোলা যাচ্ছে অরগানিক ফসলের সম্ভার। হাইড্রোপনিক (ঐুফৎড়ঢ়ড়হরপ) এমনই একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটির পরিবর্তে পানিতে গাছের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করে ফসল উৎপাদন করা হয়। হাইড্রোপনিক পদ্ধতি হলো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটির পরিবর্তে পানিতে গাছের খাদ্য উৎপাদান সরবরাহ করে শস্য উৎপাদনের একটি কৌশল। বাংলাদেশ জনবহুল একটি দেশ এবং প্রতি বছরই আবাদী জমির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যহারে কমে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে উন্নত দেশসমূহের মতো আমরাও হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষ করে বছরব্যাপী বিভিন্ন শাকসবজি, ফলমূল উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মেটাতে পারব। ইতোমধ্যে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, তাইওয়ান, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে বাণিজ্যিকভাবে এ পদ্ধতিতে সবজি ও ফল উৎপাদন করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে সারাবছরই সবজি ও ফল উৎপাদন করা সম্ভব। হাইড্রোপনিকের মাধ্যমে সবজি, ফুল ও ফল চাষে সফল হয়েছেন। এ পদ্ধতিতে সারা বছর পানিতে নিমজ্জিত থাকে এমন এলাকা বা বাড়ির বারান্দা, ছাদ ও উঠানে অধিক শস্য চাষাবাদ করে পারিবারিক চাহিদার অনেকাংশই পূরণ করা সম্ভব। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে বারির কৃষি বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত টমেটো, বেগুন, শশা, মরিচ, শিম, খিরা, লেটুস পাতা, ক্যাপসিকাম, গাঁদা ফুল, চন্দ্রমল্লিকা, ফুলকপি, বাঁধা কপি, স্ট্রবেরি, অর্কিড ও ব্রোকলির মতো বেশকিছু ফসলের চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।
×