ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অতিকথনের রাজনীতি যেন অর্জনের বাধা না হয়

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ২২ এপ্রিল ২০১৭

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অতিকথনের রাজনীতি যেন অর্জনের বাধা না হয়

রাজনীতি একমুখী বা একতরফা হলে অনেক উটকো সমস্যার জন্ম হয়। তখন কেউ কেউ ধরাকে সরা ভাবতেও দ্বিধা করেন না। অথচ আমাদের দেশে সব সময় এমন পরিবেশ ছিল না। যখন তা হয় তখনই কোন না কোন অঘটন ত্বরান্বিত হতে থাকে। আমাদের দেশের রাজনীতি যাই বলুক আর যাই করুক সরকারের হাতে উন্নয়নের রথ চলছে সমানে। এটা অনেক বড় ব্যাপার। আমাদের যৌবনেও দেশ চলছিল এক অজানা পথে। আজ সেই অনিশ্চিত গন্তব্য অনেকটাই নিশ্চিত। সবাই জানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখন আর কোন কল্পকথা নয়। সেটা যারা বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন তাদের হাতে দেশ ও সমাজ নিরাপদ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। অথচ সেটা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সম্পাদক বদল হওয়ার পর একজন কর্মঠ মাঠ পর্যায়ের নেতাকে সামনে পেয়ে সবাই খুব আনন্দিত হয়েছিল। আগেরজন মানুষ হিসেবে অতুলনীয়। তার মেধা ও প্রজ্ঞা ছিল প্রশ্নাতীত। তবে অভিযোগ ছিল তিনি নাকি সময় দেন না। একবার তার সঙ্গে কথাও হয়েছিল আমার। তখন তিনি বিলেতে। তখন তিনি দলের পদেও ছিলেন না। ওইটুকু সময়েই আমার মনে হয়েছে তিনি পরিশীলিত এক ভদ্রলোক। এখন অবশ্য দেশে ভদ্রলোকদের দিন প্রায় শেষ। রাজনীতিতে তো আরও। কিন্তু তার মানে এই নয় যে নতুন সাধারণ সম্পাদককে আমরা সন্দেহ করছি। তিনি আমাদের যৌবনের শুরুতে ছাত্রলীগের বড় নেতা ছিলেন। ডাকসু নির্বাচনে হারলেও তার ইমেজ তখন লড়াকু সৈনিকের। সেই তখন থেকে তার একদল এক নেতৃত্বে আস্থা। এটাও কম কথা নয়। বদলের দেশ বদলে যাওয়ার সমাজ আমাদের। সবাই বদলে যেতে চায়। যে যখন যেভাবে ইচ্ছে যেমন সুবিধা তেমন করে পাল্টে যাবার দেশে রাজনীতিবিদরা ডিগবাজিতে ওস্তাদ। কিন্তু ওবায়দুল কাদের তা করেননি। এই জায়গায় তিনি সৎ ও আন্তরিক। তবে এখন দলের সম্পাদক হওয়ার পর তার কথাবার্তা ও কাজে এমন এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে যা অনভিপ্রেত। এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। আমরা ভেবেছিলাম মাঠে ময়দানে ঘুরে বেড়ানোর মানুষ জনগণের পালস বুঝবেন, সেভাবে কথা বলবেন। কিন্তু তার অতিকথন এখন প্রায় অভ্যাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাঙালীর কাছে মুখরোচক গল্পের জন্ম দেয়া রাজনৈতিক দলের জন্য শোভনীয় কিছু নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আজ দেখছি মানুষের মনে কৌতূহল এত বেশি, নেগেটিভিটি এত প্রবল তারা কিছুই বিশ্বাস করতে পারছে না। সেখানে দলে কাউয়া বা মুরগি ঢোকার গল্প আসলেই বেমানান। আমরা চাই এই সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী হোক। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। শুধু তাই নয়, তিনি আজ আমাদের দেশ ও সমাজকে এক নতুন আলোর পথ দেখিয়েছেন। বিশ্বে এমন মর্যাদা আমরা আগে পাইনি। ভুললে চলবে না দেশে বিরোধী রাজনীতির নামে ঘাপটি মেরে আছে অন্ধকার। আছে মৌলবাদ। শেখ হাসিনা এদের চরম দুশমন। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিদায়ের পর এই দল আপাতত দুর্বল হলেও তাদের দোসর বিএনপি আছে মাঠে। বিএনপির প্রতি নেগেটিভ ভোটারদের সমর্থন এখনও প্রবল। আজ হোক কাল হোক নির্বাচন হতেই হবে। যখন হবে সেখানে আওয়ামী লীগের হাল কি? সেটা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে কি স্পষ্ট হয়নি? ফলে সুখ-নিদ্রার সুযোগ নেই। আছে ঘর গোছানোর তাগিদ। আছে নিজেদের প্রিয় করার বিষয়। সেটা কিন্তু হচ্ছে না। উল্টো অতিকথনের চাপে সরকারী দল পড়ছে তোপের মুখে। আমরা চাই এসব বিতর্কের অবসান হোক। রাজনীতি চলুক তার নিজস্ব গতিতে। না চললে কি হয় আমরা চট্টগ্রামে দেখলাম। প্রাক্তন মেয়র বর্তমান মেয়রকে শুধু এক হাত নিয়েছেন তা নয়, তিনি নতুন মেয়রকে খুনীও বলেছেন। তাদের ভেতরকার দ্বন্দ্ব এমন প্রকট হতে পারল কি কারণে? কারণ সামনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। নেই কোন অন্য দলের চ্যালেঞ্জ। বিএনপিকে মাঠে দেখা গেলেও টিকতে পারে না। বাম-ডান সবাই যার যার ঘরে। একা কোন দল যদি আকাশ ছাপিয়ে ওঠে সেটা তার নিজের জন্যও ভাল হয় না। আমরা গঠনমূলক সমঝোতার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি চাই। দেশবিরোধী দেশের অমঙ্গল চায় এমন শক্তি বাদে বাকিদের নিয়ে রাজনীতি সরব না হলে দেশের মানুষের চাপা ক্রোধ গলবে না। গণতন্ত্রে অব দ্য পিপল বাই দ্য পিপল ফর দ্য পিপল যেন বাই বাই পিপল না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেয়াই হবে আসল ব্যাপার।
×