ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যুগোপযোগী করা হোক

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৪ মার্চ ২০১৭

যুগোপযোগী করা হোক

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭ নতুন করে করছে সরকার। প্রস্তাবিত আইনে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী পরিবহন চালকদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মাত্র তিন বছর কারাদ-ের বিধান রাখা হয়েছে অথচ দেশের নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে যাত্রী কল্যাণে নিয়োজিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাসহ সুশীল সমাজের দাবি ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। সে ক্ষেত্রে তা যাবজ্জীবন না হোক, অন্তত ১৪, ১০ অথবা নিদেনপক্ষে ৭ বছরের জেল-জরিমানাসহ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা ছিল বাঞ্ছনীয়। নতুন আইনে এসব কিছুই রাখা হয়নি। তদুপরি বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার অপরাধ হবে জামিন ও আপোসযোগ্য। আগামী সোমবার আইনের খসড়াটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওঠার কথা রয়েছে। এরপরই আগামী অধিবেশনে জাতীয় সংসদে ওঠার মধ্য দিয়ে পাস করার কথা রয়েছে। তার মানে হলো গণদাবিকে উপেক্ষা করে পরিবহন মালিক ও চালক-হেলপারদের চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত পিছু হটল সরকার অথচ নরসিংদীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান পরিদর্শনকালে যোগাযোগমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঙ্গলবার বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত প্রণীত হতে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন আইন। অর্থাৎ কিনা, যোগাযোগমন্ত্রীর কথাও শেষ পর্যন্ত বিফলে গেল! এর অবশ্য কিঞ্চিত পটভূমি আছে। মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্বনামখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ এবং গণমাধ্যমকর্মী মিশুক মুনীরের অকাল মৃত্যু হলে দেশব্যাপী প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঝড় ওঠে। দুর্ঘটনার জন্য প্রধানত দায়ী বাস চালকের বিরুদ্ধে ২২ ফেব্রুয়ারি আদালত কর্তৃক যাবজ্জীবন জেলদ- ও জরিমানার রায় হলে এর প্রতিবাদে যানবাহন মালিক সমিতি ও বাস-ট্রাক শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সারাদেশে আকস্মিক ডাকা হয় পরিবহন ধর্মঘট। জিম্মি করা হয় লাখ লাখ সাধারণ যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাকে। অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ে জনজীবন। এহেন ধর্মঘটের পেছনে নৌপরিবহনমন্ত্রী এবং পরিবহন মালিক সমিতির নেতা বলে পরিচিত এক প্রতিমন্ত্রীর ইন্ধন ছিল বলে খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এ সময়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী বলেছিলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের জেলদ- কোনভাবেই তিন বছরের বেশি হওয়া উচিত নয়। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’- সংগঠনের তথ্যমতে, দেশে প্রতি হাজার যানবাহনে নিহতের সংখ্যা বছরে ১৬৯ জন অথচ অত্যধিক যানবাহনের দেশ জাপানে এই মৃত্যুর হার মাত্র দু’জন। শুধু ট্রাফিক আইনকানুন কঠোরভাবে মানার কারণেই জাপানে দুর্ঘটনার হার অবিশ্বাস্যভাবে কম। এর বিপরীতে বাংলাদেশে বিরাজ করছে এক নৈরাজ্যজনক অবস্থা। এখানে সারাদেশে তো বলাই বাহুল্য, এমনকি রাজধানীতেও প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে চলে ট্রাফিক আইন ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা। সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৩তম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ৭ম। সত্য বটে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে কেবল ড্রাইভার দায়ী নয়। বরং ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, ভুল সিগন্যাল, মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন, অসতর্ক যাত্রী ও পথচারী, সড়কের পাশে হাটাবাজার, সড়কের যথেচ্ছ ব্যবহার ইত্যাদিও কম দায়ী নয়। প্রশিক্ষিত-অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন চালকেরও অভাব প্রকট। বিআরটিএসহ ট্রাফিক বিভাগের অব্যবস্থা, ঘুষ-দুর্নীতিও এর জন্য দায়ী অনেকাংশে। সভ্য ও উন্নত হতে হলে এসব বাধাই আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে পর্যায়ক্রমে। তবু সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যেহেতু চালককে প্রাথমিকভাবে দায়ী বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, সেহেতু শাস্তির বিধান একটু বেশি রাখা হলে সে সতর্ক ও সাবধান হতে পারে। আর সতর্ক ও সাবধান হলে সড়ক দুর্ঘটনার হার এমনিতেই কমে আসবে। আইনে শাস্তির বিধান কঠোর হলে সাজার ভয়েও সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে বাধ্য হবে চালক।
×