ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিশ্বকাপের দল ঘোষণায় কেন এই লুকোচুরি!

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ৭ মে ২০২৪

বিশ্বকাপের দল ঘোষণায় কেন এই লুকোচুরি!

মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, আফিফ হোসেন ও সৌম্য সরকার

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্কের ইতিহাস বেশ পুরনো। ভারতে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগেই যেমন তামিম ইকবাল-মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ঘিরে বিস্তর নাটক হয়েছিল। এবার এখন পর্যন্ত তেমন কিছু হয়নি, তবে দল ঘোষণায় লুকোচুরি চলছে। প্রাথমিকভাবে ১ মে ছিল টি২০ বিশ্বকাপের দল ঘোষণার শেষ দিন। ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো পরাশক্তি তাদের দল বেছে নিলেও পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশই সেটি করেনি।

কোনো কারণ ছাড়াই ২৫ মে পর্যন্ত দলে ইচ্ছেমতো পরিবর্তন আনা যাবে। নিয়ম অনুযায়ী ১ মে ঠিকই (গোপনে) আইসিসিতে পনেরো সদস্যের দলের তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের সিরিজ এবং জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে চলতি সিরিজ থেকেই যে বিশ্বকাপের দল চূড়ান্ত করা হচ্ছে, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সেটি পরিষ্কার করেছেন। প্রশ্ন উঠছে, সেই দল ঘোষণায় কেন এই লুকোচুরি? মূলত ইনজুরির পর সৌম্য সরকারের ফিটনেস, আফিফ হোসেন ধ্রুবকে রাখা না রাখা এবং আরও দু-একটি সমীকরণ মেলানোর অপেক্ষায় গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি।

ক্যারিবীয় কন্ডিশনে বোলিং আক্রমণ কেমন হবে, সেসব নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। চোখ থাকছে চোট কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর ফেরা পেস-অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ওপরও। আগামী ২ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবে টি২০ বিশ্বকাপের নবম আসর।
‘যে দলটা আমরা পাঠিয়েছি, সেটাতে পরে পরিবর্তন আসতে পারে। আমাদের কিছু ইস্যু আছে, বিশেষ করে ইনজুরি নিয়ে। তাদের কথা হচ্ছে, খেলার পরে (জিম্বাবুইয়ে সিরিজ) সুবিধাজনক সময়ে আমরা একেবারে চূড়ান্ত দল ঘোষণা করব।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছিলেন বিসিবির এক নির্বাচক। সেই চোট সমস্যা বা ‘ইস্যুগুলোও’ খুব গোপনীয় কিছু নয়। চোট থেকে ফিট হয়ে ওঠার লড়াইয়ে আছেন সৌম্য সরকার।

জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচের স্কোয়াডে তাকে রাখা হয়নি এই কারণেই। খেলার মতো অবস্থায় আসতে পারলে শেষ দুই ম্যাচে তাকে মাঠে নামিয়ে দেখতে চায় টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচক কমিটি। সৌম্যর কারণেই দল ঘোষণায় দেরি কি না? এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ‘কারও নাম বলতে চাই না। শুধু সৌম্যরই নয়, আরও দু-একজনের ছোটখাটো ইস্যু আছে। ইস্যু বলতে এখানে মূলত পরখ করে দেখার ব্যাপার।’ দেড় বছর পর দলে ফেরানো হয়েছে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে।

চোটজর্জর ক্যারিয়ারে আরেকটি নতুন শুরুতে সাইফ কেমন করেন, ম্যাচে নিজেকে কতটা মেলে ধরতে পারেন, তার শরীরী কিভাবে সাড়া দেয়, এই ব্যাপারগুলো জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজে দেখতে চান কোচিং স্টাফ, নির্বাচক কমিটি ও টিম ম্যানেজমেন্টের সবাই। এছাড়াও তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন, আফিফ হোসেনরা জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজে কেমন করেন, সেটির প্রভাবও থাকতে পারে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে।

জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর ঠিক আগে অধিনায়ক শান্ত যেমন বলছিলেন, ‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে সিরিজটা খেলেছি, আর এই সিরিজে যে দলটা আছে। বিশ্বকাপে বেশিরভাগ খেলোয়াড় এখান থেকে যাবে। যদি সবাই সুস্থ থাকে। হ্যাঁ, দুই-একজন এদিক সেদিক হতে পারে। তবে বেশিরভাগই এখান থেকে যাবে।’
তাহলে কেমন হতে পারে টি২০ বিশ্বকাপের দল? ১৭ জনের মধ্যে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, লিটন দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ,  শেখ মেহেদী হাসান ও রিশাদ হোসেনকে নিয়েও আসলে সংশয়ের জায়গা নেই। বাকি রইল পাঁচটি জায়গা। মিডল অর্ডারের বিকল্প হিসেবে শ্রীলঙ্কা সিরিজে আলো ছড়ানো জাকের আলি অনিক এগিয়ে থাকবেন।

জিম্বাবুইয়ে সিরিজে খুব খারাপ না করলে বিশ্বকাপে যাচ্ছেন তিনিও। বাকি চারটি স্পটে একজন ওপেনার, টপ অর্ডার ব্যাকআপ ব্যাটার, বাঁহাতি স্পিনার ও একজন পেসার জায়গা আছে। চোট থেকে ফেরার লড়াইয়ে থাকা  সৌম্য সরকার ওপেনার হিসেবে বিবেচনায় থাকবেন এগিয়ে। মিডিয়াম পেস বল করার সামর্থ্যওে তিনি সুবিধা পাবেন দলে থাকার। ব্যাকআপ টপ অর্ডার ব্যাটার হিসেবে তানজিদ হাসান তামিম পারভেজ হোসেন ইমন থেকে বেশ এগিয়ে থাকবেন।

মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলম, তাসকিন আহমেদের পাশাপাশি চতুর্থ পেসার হিসেবে লড়াইটা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও তানজিম হাসান সাকিবের। এই দুজনই বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট করতে জানেন। গত বিপিএলে দারুণ বল করে অবশ্য টি২০ দাবি জোরালো করেছেন সাইফুদ্দিনই। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টি২০তে ফিরেই নিয়েছেন ৩ উইকেট। ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট হিসেবে তার দলে থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের উইকেটগুলো এবার মন্থর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ তাই স্পিন আক্রমণ শক্তিশালী করে যেতে পারে। সাকিব আল হাসান ছাড়াও বাঁহাতি আরেকজন স্পিনারের প্রয়োজনীয়তা থাকছে। আগেও বেশির ভাগ সময় আইসিসিতে জমা দেওয়ার শেষ দিনের মধ্যে দল আনুষ্ঠানিকভাবে  ঘোষণা করে দিয়েছে বিসিবি। সেই দলে পরে পরিবর্তন আনতে গিয়ে কিছু বিতর্কও হয়েছে কখনো কখনো।

সেই বিতর্ক এড়াতেই কি এবার চূড়ান্ত দল একবারে ঘোষণা করতে চায়  বোর্ড? ‘বিতর্ক আমরা বুঝি না। এটা আপনারা (সংবাদমাধ্যম) বললে বলতে পারেন। দল দিতে দেরি করে বা লুকিয়ে রেখে  তো এখানে কারও কোনো ফায়দা নেই। দলের স্বার্থে, সবার ভালোর জন্যই সময় নেওয়া হচ্ছে। আর কিছু নয়। ইনজুরির ব্যাপার যেহেতু, কোচ ও নির্বাচকদের ভাবনা হলো, সময় যখন আছে, আমরা আরেকটু অপেক্ষা করতেই পারি।’ নাম প্রকাশ না করে বলছিলেন সেই নির্বাচক।

আরেক নির্বাচক হান্নান সরকারের বক্তব্য, ‘গোপন রাখার তো কিছু নেই। আমরা আমাদের কাজটা করে দিয়েছি। নির্বাচক হিসেবে আমাদের কাজ হচ্ছে দলটা তৈরি করে বিসিবিকে দেওয়া। আমরা সেটি করেছি। এখন ক্রিকেট অফিস যদি ঘোষণা না করে, এখানে তো আমাদের করার কিছু  নেই।’ তবে কি দলে অনেক পরিবর্তন আসবে বলেই বিশ্বকাপ দল প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হচ্ছে না? ‘ব্যাপারটা তেমন নয়। দলতো তৈরি। তবে সামনে আমাদের অনেক ম্যাচ আছে। এখানে কেউ ইনজুরিতে পড়তে পারে। কারও অন্য কোনো সমস্যা হতে পারে।

যেহেতু কোনো কারণ ছাড়াই ২৫ তারিখ পর্যন্ত দল পাল্টানোর সুযোগ আছে, ম্যানেজমেন্ট যদি  তেমন কিছু চায়...।’ সব মিলিয়ে জিম্বাবুইয়ে সিরিজের পরই হয়তো জানা যাবে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৫ অভিযাত্রীর নাম। আগামী ৭ জুন ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। পরের ম্যাচ ১০ জুন নিউইয়র্কে। পরের দুই ম্যাচে সেন্ট ভিনসেন্টে ১৩ জুন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস, ১৬ জুন  নেপাল।

×