ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নেইমারকে হৃদয়ে রেখে ছুটছে ব্রাজিল

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ২৯ নভেম্বর ২০২২

নেইমারকে হৃদয়ে রেখে ছুটছে ব্রাজিল

সতীর্থদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন গোলদাতা ক্যাসেমিরো

ঘাতক ইনজুরির কারণে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ খেলার পরই ছিটকে গেছেন সুপারস্টার নেইমার। যে কারণে ‘জি’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রাণভোমরাকে ছাড়াই খেলতে হয়েছে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। সোমবার রাতে হওয়া ওই ম্যাচে দলের সেরা তারকার অভাব অনুভূত হলেও মনে রাখার মতো জয় পেয়েছে সেলেসাওরা। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরোর চোখ ধাঁধানো গোলে সুইজারল্যান্ডকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়েছে সাম্বা ছন্দের দেশ।
কাতারের দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪ এ অনুষ্ঠিত ম্যাচে জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই নকআউট রাউন্ড অর্থাৎ শেষ ষোলোতে খেলা নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল। চোটের কারণে নেইমার না থাকলেও তাঁকে হৃদয়ে ধারণ করে খেলেছেন থিয়াগো সিলভা, মারকুইনহো, কাসেমিরো, ভিনিসিয়াস, রিচার্লিসন, রাফিনহারা। ম্যাচ শেষে ব্রাজিল কোচ তিতে ও খেলোয়াড়রা বারবার নেইমারের কথাই স্মরণ করেছেন।

এই ম্যাচেও ব্রাজিলের গোলপোস্ট অভিমুখে একবারের জন্যও শট নিতে পারেননি সুইস খেলোয়াড়রা। কয়েকবার বিক্ষিপ্ত আক্রমণ করলেও সেলেসাও গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারকে একবারের জন্যও পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি ফার্নান্দেজ, রড্রিগুয়েজরা। এর আগে সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারানোর ম্যাচেও প্রতিপক্ষ একবারের জন্যও গোলের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারেনি।
অর্থাৎ এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ইউরোপের দুই প্রতিশ্রুতিশীল দলের বিরুদ্ধে নিজেদের জাল ভালোমতোই অক্ষতে রাখতে পেরেছে পেলের দেশ। বিশেষ করে নেইমারকে ছাড়াই সুইসদের হারানো ব্রাজিলের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এর ফলে কোচ তিতের শিষ্যদের মধ্যে নিজেদের প্রমাণের তাগিদ আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে তারা এটাও প্রমাণ করতে পেরেছে, ব্রাজিল নেইমার নির্ভর দল নয়।

গ্রুপ পর্বে টানা দুই জয়ের পথে অনন্য বিশ্বরেকর্ড গড়েছে ফুটবলপাগল দেশটি। রেকর্ড বই আবার ওলটপালট করেছে জাগো বনিতোরা। সুইসদের বিরুদ্ধে ড্র করে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছে। এই বিশ্বরেকর্ড গড়ার পথে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে পেছনে ফেলেছে ব্রাজিল।
১৯৯০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে টানা ১৬ ম্যাচে অপরাজিত ছিল ইউরোপের পাওয়ার হাউসরা। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে সবশেষ নরওয়ের কাছে ২-১ গোলে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে হেরেছিল ব্রাজিল। এরপর ২০০২, ২০০৬, ২০১০, ২০১৪, ২০১৮ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে টানা ১৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকে তারা। এবার কাতারে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সংখ্যাটা ১৭-তে নিয়ে গেছে তিতের দল। ১৯৮২ বিশ্বকাপ থেকে হিসেব করলে গ্রুপ পর্বে এ পর্যন্ত ৩৯ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে হেরেছে ব্রাজিল। সেটি ওই নরওয়ের কাছে।

সুইজারল্যান্ডের ম্যাচ শেষে আরও একটি রেকর্ড করেছে ব্রাজিল। প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের গোলমুখে কোন শট নিতে পারেনি সার্বিয়া। সেলেসাওদের গোলমুখে কোন শট নিতে পারেনি সুইজারল্যান্ডও। বিশ^কাপ মঞ্চে দ্বিতীয় দল হিসেবে কোন আসরে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষকে গোলমুখে শট নিতে দেয়নি ব্রাজিল। প্রথম দল হিসেবে এই কীর্তি গড়েছিল বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে গৌরবময় রেকর্ড গড়েছিল ফরাসিরা।
সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের ৬৪ মিনিটে অনেকটা একক নৈপুণ্যে ভিনিসিয়াস চোখ ধাঁধানো গোল করলেও অফসাইডের অজুহাতে সেটা বাতিল করা হয়। এই অফসাইড নিয়েও কম কথা হচ্ছেনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেভাবে এবারের বিশ্বকাপে সুন্দর গোলগুলো অফসাইডে বাতিল হচ্ছে তাতে করে ফুটবলের সৌন্দর্য অনেকাংশেই কমে যাচ্ছে। গোল বাতিল হলেও হাল ছাড়েনি ব্রাজিল। চালিয়ে যায় সাঁড়াশি আক্রমণ।

৮৩ মিনিটে অসাধারণ শটে কাক্সিক্ষত গোল উপহার দেন সবসবময় আড়ালে ও লাইমলাইটের বাইরে থাকা কাসেমিরো। হোটেল রুমে বসেই দলের খেলা উপভোগ করেন নেইমার। জয়ের পরপরই কাসেমিরোকে ‘বিশ্বসেরা মিডফিল্ডার’ আখ্যা দিয়ে টুইট করেন ব্রাজিলের বর্তমানের সেরা তারকা।
নেইমার অকপটে বলেন, কাসেমিরো অনেকদিন ধরেই বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার। এরপর ব্রাজিল কোচ তিতেকে ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, নেইমারের টুইটের সঙ্গে তিনি একমত কিনা। এর জবাবে ব্রাজিল কোচ বলেন, আমি সবসময় মতামতকে সম্মান করি। কিন্তু সেগুলোয় মন্তব্য করি না। তবে এবার আমি সেটা করব।

হ্যাঁ আমি নেইমারের সঙ্গে একমত। এরপর ম্যাচে ৩০ বছর বয়সী ক্যাসেমিরোর পজিশন নিয়েও কথা বলেন তিতে। বলেন, কাসেমিরো দ্বিতীয় মিডফিল্ডার। এটাই আমরা দেখে থাকি। সে সেন্ট্রাল খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে থাকে। আর নিচ থেকে উঠে এসে সবাইকে চমকে দেয়। কাসেমিরো যদি আগে থেকেই উপরে থাকে তাহলে তাকে প্রতিপক্ষের মার্ক করা সহজ। কিন্তু যখন সে নিচ থেকে উঠে আসে তখন সবাইকে বিস্মিত করতে পারে।
নেইমারের প্রশংসা করে তিতে আরও বলেন, নেইমারের স্কিল একদম আলাদা। সে জাদুকরী মুহূর্ত উপহার দিতে পারে। একজন থেকে আরেকজনে ড্রিবল করে কাটিয়ে যেতে পারে। অন্য খেলোয়াড়রাও নেইমারের পর্যায়ে যাচ্ছে। আশা করি তারা যেতে পারবে। তবে আমরা নেইমারকে মিস করেছি, করারই কথা। উল্লেখ্য, আগামী শুক্রবার রাত ১টায় শেষ গ্রুপ ম্যাচে ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে ব্রাজিল।

সম্পর্কিত বিষয়:

×