দুর্ভাগ্যের পরাজয়ে হতাশ বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা
সফল হতে গেলে অনেক কিছুই লাগে। তবে সম্ভবত বেশি জরুরি হচ্ছে সদিচ্ছা, আত্মবিশ্বাস এবং আন্তরিকভাবে পরিশ্রম করার মানসিকতা। যদি এগুলোর সমন্বয় ঠিকঠাক ঘটে, তাহলে সাফল্যের চূড়ায় পুরোপুরি পৌঁছানো না গেলেও তার একেবারে কাছাকাছি অন্তত যাওয়া যায়। ভারতের ভূবনেশ্বরে সদ্যসমাপ্ত সাফ অনুধ-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে এমনটাই হয়েছে বাংলাদেশ যুব দলের বেলায়।
এই টুর্নামেন্ট টানা তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশ যুবারা অনেক করে চেয়েছিল প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে বাঁধভাঙা উল্লাসে মাততে। কিন্তু ফাইনালে স্বাগতিক ভারতের কাছে ৫-২ গোলে হেরে যায় তারা।
অথচ নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলার স্কোরলাইন ছিল ২-২ গোলে ড্র। শুধু তাই নয়, একপর্যায়ে তারা ২-১ গোলে লিডও নিয়েছিল। কিন্তু অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলায় আরও ৩ গোল জিতে যায় ভারত। যারা ম্যাচটা দেখেননি, তাদের কাছে ম্যাচের চূড়ান্ত স্কোরলাইন দেখে এমনটা মনে হতে পারে-যাচ্ছেতাই। তাদের ধারণা একেবারেই ভুল। আসলে অসাধারণ খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য-গোলের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি তারা। স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ হলেও সার্বিকভাবে বাংলাদেশের যুব ফুটবলাররা অবশ্যই প্রশংসা পাবে।
আর কেনই বা পাবে না? লিগভিত্তিক এই টুর্নামেন্ট পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দল ফাইনাল খেলে ফাইনাল খেলার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলই একমাত্র অপরাজিত ছিল। তাদের ফুটবলারই (মিরাজুল ইসলাম) ৪ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকার শীর্ষে ছিল। পুরো আসরে তারাই সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিনন্দন খেলা উপহার দিয়েছে।
শনিবার ফাইনালের প্রথম মিনিটেই (২২ সেকেন্ডে) পেনাল্টি থেকে গোল হজম করে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে, সেটা আসলে পেনাল্টি ছিল না। কিক অফের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের এক মিডফিল্ডার দূরপাল্লার শট নেন। বাংলাদেশের গোলরক্ষক মোহাম্মদ আসিফ ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই বল আটকাতে গেলে তা ফসকে যায়। বক্সের কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা ভারতের ফরোয়ার্ড গুরকিরাত বল নিয়ে গোলমুখে এগিয়ে যেতে থাকেন।
আগুয়ান গোলরক্ষক আসিফ ঝাঁপিয়ে না পড়ে বরং পা দিয়ে ট্যাকেল করে বলটি বিপন্মুুক্ত করার চেষ্টা করেন। এজন্য তিনি বলের উদ্দেশ্যে শট নিতে নিজের ডান পা বাড়িয়ে দেন। ততক্ষণে গুরকিরাত আসিফের পায়ের স্পর্শে সামনের দিকে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যান এবং সঙ্গে সঙ্গেই উঠেও দাঁড়ান। কেননা এটি ফাউল ছিল না। আসিফ বল চার্জ করেছিলেন, পা চার্জ করেননি। কিন্তু অদূরেই দাঁড়িয়ে থাকা রেফারি মনে করলেন আসিফ এটা ফাউল করেছেন। পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়ে সর্বনাশ ডেকে আনেন বাংলাদেশের। অথচ ভারতের ফুটবলাররা পেনাল্টির দাবি করেননি।
এই পেনাল্টি থেকে গোল না হলে যে বাংলাদেশই স্বপ্নের ও কাক্সিক্ষত শিরোপাটা জিতত, এমনটা ভাবার পক্ষেই সমর্থক বেশি। তাদের মতে, ওই গোলটি না হলে ৯০ মিনিটের মধ্যেই জিতে খেলা শেষ করে ফেলত তানভীররা। অতিরিক্ত সময়ে খেলা গড়াত না কখনোই।
এই টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে ইতিবাচক প্রাপ্তি হচ্ছে লড়াকু মানসিকতা এবং স্কোরিং এ্যাবিলিটি। দলের হয়ে গোল করার মতো একাধিক ফুটবলারকে পাওয়া গেছে। অথচ সিনিয়র জাতীয় দলের ফরোয়ার্ডরা বছরের পর বছর গোলখরায় ভোগে। তাদের কাছে গোল যেন “সোনার হরিণ”। আর ভূবনেশ্বরে এই সোনার হরিণ অহরহই শিকার করতে পেরেছে যুবারা। এতে ভবিষ্যতে তারা সিনিয়র জাতীয় দলের জন্য সম্পদে পরিণত হবেন, এমনটা আশা করাই যায়। কাজেই স্বপ্নপূরণে এবার ব্যর্থ হলেও চমৎকার খেলে প্রশংসার দাবিদার এই দলটি যে ভবিষ্যতের জন্য আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলবে (তবে এজন্য সঠিক পরিচর্যার কোন বিকল্প নেই), তাতে কোন সংশয় নেই।