স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বলা হয় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ‘পাকিস্তান জেতে না’। সেটা কিন্তু এমনিতে নয়। ব্রিসবেনে ইনিংস ও ৫ রানের পর এ্যাডিলেডে ডে-নাইট টেস্টে আজহার আলিদের হার ইনিংস ও ৪৮ রানে। হোয়াইটওয়াশের পথে লজ্জার হারের সঙ্গে সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় নিজেদের কলঙ্কিত ইতিহাসটাকে আরও দীর্ঘ করল আনপ্রেডিক্টেবল পাকিরা। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় টানা ১৪ টেস্টে হারল পাকিস্তান। গড়ল লজ্জার বিশ্বরেকর্ড! ম্যাচের নায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের (৩৩৫*) ম্যারাথন ট্রিপল সেঞ্চুরি ও মার্নাস লাবুশেনের (১৬২) সেঞ্চুরির সৌজন্যে ৩ উইকেটে ৫৮৯ রানের পাহাড় গড়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ‘বোলার’ ইয়াসির শাহর (১১৩) চমকে দেয়া সেঞ্চুরি সত্ত্বেও ৩০২ রানের অলআউট পাকিস্তান ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ২৩৯-এ। অফস্পিনার নাথান লেয়ন নিয়েছেন ৫ উইকেট। তিন ম্যাচের টি২০ ২-০ ব্যবধানে হারের পর হোয়াইটওয়াশের চরম লজ্জায় ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিনশিপ শুরু করল পাকিস্তান।
ফলোঅনে পড়ে ৩ উইকেটে ৩৯ রান নিয়ে সোমবার চতুর্থদিনে ৬৬ ওভারে ২০০ রান করতে অলআউট হয়ে যায়। ওপেনার শান মাসুদ ৬৮, আসাদ শফিক ৫৭, মোহাম্মদ রিজওয়ান ৪৫ রান করে আউট হন। সর্বশেষ ১৯৯৫ সালে সিডনি টেস্টে স্বাগতিকদের হারিয়েছিল ওয়াসিম আকরামের দল। এরপর গত প্রায় ২০ বছরে অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্টে জয় নেই তাদের। পাকিস্তান এই নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় টানা ১৪ টেস্ট হারল। এর আগে ১৯৯৯, ২০০৪, ২০০৯, ২০১৬ সালে তিনটি করে টেস্টের সিরিজে হেরেছিল তারা। এবার দুই টেস্টে। অস্ট্রেলিয়ায় টানা এতগুলো টেস্টে এর আগে কোন দল হারেনি। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ভারত টানা ৯ টেস্টে হেরেছিল। অস্ট্রেলিয়ার কাছে দশমবারের মতো ইনিংস ব্যবধানে হারের তিক্ত স্বাদ পেল পাকিস্তান। সবমিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছে এটি তাদের ৩৩তম হার। এ জয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের জায়গা আরও শক্ত করল অস্ট্রেলিয়া। ৭ ম্যাচে সবকটিতে জিতে ভারতের পয়েন্ট ৩৬০। অস্ট্রেলিয়া ৪ জয় ও ২ হার ও ১ ড্রয়ে ১৭৬ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে দুইয়ে। অন্যদিকে ২ ম্যাচ খেলে মিসবাহ’র শিষ্যদের পয়েন্ট শূন্য।
ঘরের মাঠে ১২ ডিসেম্বর থেকে নিউজিল্যান্ডকে আতিথেয়তা দেবে অস্ট্রেলিয়া। দুটি টেস্ট খেলবে তাসমান পাড়ের দুই দেশ। দ্বিতীয় টেস্টটি শুরু হবে বক্সিং ডে’তে। পাকিস্তানও ঘরের মাঠে আতিথেয়তা দেবে শ্রীলঙ্কাকে। সিংহের দলের বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলবে পাকিস্তান। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানের শুরুটাও হলো বাজে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের পর তারাও কোন ম্যাচে জিততে পারেনি। ক্যারিয়ারে ষোড়শবার ৫ উইকেটের স্বাদ পেয়েছেন স্পিনার নাথান লেয়ন। এ্যাডিলেইডে তার ৫০ উইকেটের বেশি আছে কেবল শেন ওয়ার্নের (৫৪টি)। দিনের নায়ক লেয়ন হলেও ম্যাচ ও সিরিজের নায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। অপরাজিত ৩৫৫ রানের পথে ডন ব্র্যাডম্যান-রিকি পন্টিংদের ছাড়িয়ে রেকর্ডগড়া ট্রিপল সেঞ্চুরিতে হয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। এ্যাশেজে ১০ ইনিংসে ৯৫ রান করা ব্যাটসম্যান এই সিরিজে ২ ইনিংসেই করলেন ৪৮৯ রান। সিরিজের সেরাতেও তার ছিল না কোন প্রতিদ্বন্দ্বী।
স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস- ৫৮৯/৩ ডিক্লেঃ (১২৭ ওভার; ওয়ার্নার ৩৩৫*, বার্নস ৪, লাবুশেন ১৬২, স্মিথ ৩৬, ওয়েড ৩৬*; শহীন আফ্রিদি ৩/৮৮)।
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস- ৩০২/১০ (৯৪.৪ ওভার; মাসুদ ১৯, ইমাম ২, আজহার ৯, বাবর ৯৭, আসাদ ৯, ইফতিখার ১০, রিজওয়ান ০, ইয়াসির ১১৩, আব্বাস ২৯, মুসা ১২; স্টার্ক ৬/৬৬, কামিন্স ৩/৮৩, হ্যাজলউড ১/৪৮) ও দ্বিতীয় ইনিংস- ২৩৯/১০ ফলোঅন (৮২ ওভার; মাসুদ ৬৮, ইমাম ০, আজহার ০, শফিক ৫৭, ইফতিখার ২৭, রিজওয়ান ৪৫, ইয়াসির ১৩, আফ্রিদি ১, আব্বাস ১, মুসা ৪*; স্টার্ক ১/৪৭, হ্যাজলউড ৩/৬৩, লেয়ন ৫/৬৯)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ও ৪৮ রানে জয়ী।
ম্যাচ ও সিরিজসেরা: ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)।
সিরিজ : দুই টেস্টের সিরিজ অস্ট্রেলিয়া ২-০ ব্যবধানে জয়ী।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: