ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান

-

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২৭ মার্চ ২০২৪

ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে এক আবেগঘন ভাষণ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভের পর টানা চতুর্থবারের মতো এবং পঞ্চম মেয়াদে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত এটিই প্রথম ভাষণ। যা বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ প্রায় সব টিভি চ্যানেল এবং সব বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত হয়েছে একযোগে।

বাংলাদেশের মহান সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মর্মান্তিক ও দুঃসহ স্মৃতি দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনপূর্বক প্রধানমন্ত্রী শুরু করেন তার বক্তব্য। স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতার অবদানের কথা স্মরণপূর্বক প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। কেননা, ’৭১-এর পরাজিত শত্রুরা এখনো সক্রিয়। তারা দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে লিপ্ত সরকারের বিরুদ্ধে। 
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে খর্ব করা এবং অর্থনৈতিক মুক্তির আকাক্সক্ষাকে নস্যাৎ করতে তারা সদাতৎপর। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার জন্য তারা বিদেশী শক্তির সহায়তায় অগ্নিসন্ত্রাসসহ নানা অপতৎপরতা চালিয়েছে। যাতে সাধারণ মানুষের জীবনহানিসহ জাতীয় সম্পদের সমূহ ক্ষতি হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী এই অপশক্তি বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দিতে চায়। সরকার এ বিষয়ে সবিশেষ সচেতন।

লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগ সরকার কখনোই ভূলুণ্ঠিত হতে দেবে না। এর জন্য উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে দেশবাসীকে। দেশের সকল গণতান্ত্রিক দলসহ সর্বস্তরের মানুষকে সংবিধান ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে পালন করতে হবে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা।

সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়Ñ বঙ্গবন্ধু অনুসৃত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। সশস্ত্র যুদ্ধ করেই স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। তাই কোনো রক্তচক্ষু বা হুমকি-ধমকি বাঙালি জাতি কখনো মেনে নেবে না। আমাদের কোনো প্রভু নেই, বরং সবাই বন্ধু। প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতি রক্ষা করবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব।

বর্তমান সরকারের গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সরকার পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। দেশী-বিদেশী সকল ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই সরকার অগ্রসর হয়েছে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এর বাইরেও রয়েছে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার হীন অপচেষ্টা। সেসব অতিক্রম করেই বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

দারিদ্র্যের হার ২০০১ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে নেমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ সারাদেশে সড়ক ও রেল সংযোগের ব্যাপক উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান।

যার সুফল ভোগ করছে দেশবাসী। এসব উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে। সেজন্য দেশী-বিদেশী সব কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশবাসীকে এগিয়ে যেতে হবে গভীর দেশপ্রেমের স্বাক্ষর রেখে। ৫৪তম স্বাধীনতা দিবসে এই হোক সকলের সুদৃঢ় ঐকান্তিক অঙ্গীকার।

×