ডিমের দাম ১২, বাচ্চার পিস ৫ টাকা

খুচরা বাজারে মুরগির প্রতিটি ডিমের বর্তমান দর ১২ টাকা। অন্যদিকে ডিম থেকে উৎপাদিত বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা দরে। হঠাৎ করেই পোলট্রি শিল্পে ব্রয়লার বাচ্চার দামে ধস নেমেছে। বাজারে বাচ্চার চাহিদা অস্বাভাবিক কমে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ডিম ও মুরগির দামের এই অস্বাভাবিক তারতম্যে দিশাহারা বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। একমাস আগেও প্রতিটি বাচ্চা বিক্রি হয়েছিল ২৫ থেকে ৪০ টাকা দরে।
খামার মালিক সূত্রে জানা যায়, সরকার নির্ধারিত হিসেবে একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে খরচ পড়ে প্রায় ৫৭ টাকা। কিন্তু গত দুই মাস ধরে হ্যাচারি মালিকরা বাচ্চাগুলো ১০ টাকা পর্যন্ত লোকসানে বিক্রি করে আসছেন। সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে গ্রামাঞ্চলে। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে এক মাস আগে একদিন বয়সী একটি ব্রয়লার বাচ্চা ২৭ টাকায় বিক্রি হলেও এখন সেই দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৩ থেকে ৫ টাকার মধ্যে। করিমগঞ্জ থানার খামারি সাদ্দাম হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, তিনি এক মাস আগে প্রতিপিস ২৭ টাকা দরে ১ হাজার ২০০টি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা তুলেছিলেন খামারের শেডে।

কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বাজারে বাচ্চার দাম কমে এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩-৫ টাকায়। বাচ্চার দামে এই ধসের প্রভাব পড়েছে পূর্ণবয়স্ক ব্রয়লার মুরগির বাজারেও। বর্তমানে খামারিদের বিক্রয়মূল্য উৎপাদন খরচের নিচে নেমে যাওয়ায় সাদ্দামসহ অনেক খামারি পড়েছেন শঙ্কার মুখে। মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে জড়িত উদ্যোক্তাদের সংগঠন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি)-এর নেতারা জানান, বাজারে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বাচ্চা উৎপাদন হওয়ায় এর দাম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। মানুষের আয় কমে যাওয়া, ৫ আগস্টের পর বহু কারখানা বন্ধ হয়ে শ্রমিকদের চাকরি হারানো এবং চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের চাহিদা ধারাবাহিকভাবে কমে এসেছে। ফলে লোকসানের শঙ্কায় অনেক খামারিই সীমিত পরিসরে মুরগি পালন করছেন।
বিএবির তথ্যানুযায়ী, চলাতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্রয়লার বাচ্চা গড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও, মে মাসে এই দাম নেমে এসেছে ৮ থেকে ১০ টাকায়। অন্যদিকে, মে মাসে লেয়ার বাচ্চা গড়ে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪৭ টাকায়। কালার জাতের বাচ্চার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে দামের বড় ধস। এপ্রিল মাসে প্রতিটি বাচ্চা গড়ে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও মে মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকায়। কাজী ফার্মসের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, একদিনের মুরগির বাচ্চার দাম সরাসরি ব্রয়লার মুরগির বাজারদরের ওপর নির্ভর করে। ব্রয়লারের দাম কমে গেলে খামারিরা বাচ্চা কিনতে আগ্রহ হারান, ফলে বাচ্চার দামও পড়ে যায়। আবার যখন ব্রয়লারের বাজারদর বাড়ে তখন খামারিরা বাচ্চা কিনতে আগ্রহী হন, ফলে চাহিদা বাড়ে এবং দামও বেড়ে যায়।