ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আগামীকাল বৈঠক ॥ আদাসহ গরম মসলার আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তিন কর্মসূচিতে বিশেষ জোর দেওয়া হবে

এম শাহজাহান

প্রকাশিত: ০০:০২, ২৪ মে ২০২৩

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তিন কর্মসূচিতে বিশেষ জোর দেওয়া হবে

নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা কমাতে ‘দ্রব্যমূল্য’ নিয়ন্ত্রণে এবার তিন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিশেষ জোর দেওয়া হবে

নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা কমাতে ‘দ্রব্যমূল্য’ নিয়ন্ত্রণে এবার তিন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিশেষ জোর দেওয়া হবে। এগুলো হচ্ছে পেঁয়াজ, চিনি ও মসলা জাতীয় পণ্যের আমদানি বাড়িয়ে দ্রুত দাম কমিয়ে আনা, খোলা বাজারে  চাল ও আটার মতো পণ্য বিক্রি (্ওএমএস) হবে কার্ডের মাধ্যমে। এছাড়া টিসিবির পণ্য মজুত, বিক্রি ও সেবার কার্যক্রম বাড়ানো। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সিনিয়র সচিবরা অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া আজ বুধবার কোরবানি সামনে রেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গরম মসলার দাম ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে পৃথক আরেকটি বৈঠক ডাকা হয়েছে।

সর্বশেষ গত রোজার ঈদের পর থেকে নিত্যপণ্যের বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রায় তিনগুণ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। একইভাবে বেড়েছে আদার দাম। মানভেদে প্রতিকেজি আদা ২৮০-৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চিনির বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হচ্ছে না। এ অবস্থায় বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে বাজার তদারকির পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম বাড়ানো হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 
জানা গেছে, দাম কমাতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কৃষি মন্ত্রণালয়। একইভাবে চীনে আদার দাম বেড়ে গেছে। সেখানে নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় হারবাল ওষুধ হিসেবে চায়ের সঙ্গে আদার ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে এখন এই পণ্যটির দাম চড়া। এ অবস্থায় বিকল্প বাজার থেকে আমদানি করার প্রয়োজন হতে পারে। এসব পণ্যের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কি ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি গাইড লাইন দেওয়া হতে পারে। বিশেষ করে বাজার তদারকি বাড়ানো, নিত্যপণ্যের আমদানি স্বাভাবিক করতে ঋণপত্র বা এলসি খোলা সহজীকরণ, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি নিয়ন্ত্রণে বাজারে অভিযান পরিচালনা ও মজুতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  
এছাড়া চিনির মতো নিত্যপণ্য সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। এ বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে এসেছে। বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও সঠিক দাম নিশ্চিত করা গেলে সাধারণ ভোক্তারা স্বস্তি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বৈঠক অংশগ্রহণ করবেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। 
ওএমএসের পণ্য বিক্রি হবে কার্ডের মাধ্যমে ॥ খোলা বাজারে চাল ও আটার মতো পণ্য বিক্রি হবে টিসিবির পরিবারের কার্ডের মতো ঠিক একই পদ্ধতিতে। অর্থাৎ কার্ড ছাড়া কেউ ওএমএসের ৩০ টাকার চাল ও ২৪ টাকার আটা কিনতে পারবে না। ওএমএসের নানা ধরনের অনিয়ম ঠেকাতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপরই খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বৈঠকে এ বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে জানিয়েছেন ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি কার্যক্রমে নতুন নিয়ম আসছে। খুব শীঘ্রই খোলাবাজারে ওএমএসের পণ্য বিক্রি কার্ডের মাধ্যমে শুরু হবে। তিনি বলেন, একই ব্যক্তি বার বার ডিলার পয়েন্ট থেকে ওএমএসের চাল ক্রয় করে পরে সেগুলো বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। 
টিসিবির সেবা বাড়াতে পণ্যের সংগ্রহ ও মজুত বাড়ানো হবে ॥ দেশের নিম্ন আয়ের কোটি পরিবারের হাতে ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা দিতে টিসিবির সেবা পণ্য সংগ্রহ ও মজুত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) এই উদ্যোগটি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বাজার মূল্যের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। এ কারণে ইতোমধ্যে টিসিবির কার্যক্রমে সারাদেশে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। ভবিষ্যতে টিসিবির উপকারভোগী বাড়ানো এবং এক্ষেত্রে পণ্যের সংগ্রহ ও মজুত বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।

আগামী বাজেটে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ঘোষণা দিতে পারেন। সর্বশেষ এক হিসেবে দেখা গেছে, গত একবছরে এক হাজার ২১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ভর্তুকি দিয়েছে টিসিবি। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, টিসিবি, ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সামাজিক নিরাপত্তার অংশ।

×