ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের করোনায় বাইডেনের সমর্থন বেড়েছে

প্রকাশিত: ২২:২৫, ৫ অক্টোবর ২০২০

ট্রাম্পের করোনায় বাইডেনের সমর্থন বেড়েছে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩ নবেম্বরের নির্বাচন ঘিরে নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়েছে। সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হওয়ায় নির্বাচনী প্রচারের লড়াই থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়েছেন ট্রাম্প। এছাড়া নির্বাচনী শিবিরের প্রচার ব্যবস্থাপকসহ হোয়াইট হাউসের একাধিক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হওয়ায় ট্রাম্পের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার অনেকটাই স্তিমিত। এমনিতে প্রাথমিক নির্বাচনী জরিপে ট্রাম্প কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন। বিশেষ করে করোনা মহামারীর ভয়াবহতা উপলব্ধি না করতে পারা, মাস্ক পরা নিয়ে ঠাট্টা মশকরা, কৃষ্ণাঙ্গ হত্যাকান্ডকে উস্কে দেয়া, অভিবাসীদের বিষয়ে কট্টর আচরণ- সব মিলিয়ে আসন্ন নির্বাচনের মাঠে অনেকটাই পিছিয়ে ট্রাম্প। সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হওয়ায় নির্বাচনী প্রচার থেকেও বিরত থাকতে হচ্ছে ট্রাম্পকে। এই অবস্থায় কিছুটা হলেও সুবিধাজনক অবস্থানে বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটের প্রার্থী জো বাইডেন। উপরন্তু বিভিন্ন জরিপ বলছে, বাইডেনের প্রতি ভোটারদের সমর্থন বেড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের করোনা আক্রান্তে নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট দলীয় জো বাইডেনের পোয়াবারো অবস্থা তৈরি হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইপসোসের এক যৌথ জরিপে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে জো বাইডেনের প্রতি ভোটারদের সমর্থন বেড়েছে। আগামী ৩ নবেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যারা ভোট দিতে যাচ্ছেন, তাদের প্রায় ৫১ শতাংশ জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন বলে রয়টার্স-ইপসোসের জরিপে উঠে এসেছে। তবে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪১ শতাংশ বলেছেন, তারা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন। অন্যদের মধ্যে প্রায় চার শতাংশ ভোটার বলেছেন, তারা তৃতীয় কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন। এছাড়া চার শতাংশ ভোটার বলেছেন, তারা কাকে ভোট দেবেন; সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তবে এও ঠিক, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন জরিপে মার্কিন এই দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে প্রায় হাড্ডাহাড্ডি জনসমর্থন দেখা যাচ্ছে। এসব জরিপে প্রায়ই দুজনের মধ্যে মাত্র এক থেকে দুই পয়েন্টের ব্যবধান দেখা যেত। করোনাভাইরাস নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন মার্কিনীদের ৬৫ শতাংশই বলেছেন, প্রেসিডেন্ট করোনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিলে সংক্রমণ এড়ানোর সম্ভাবনা থাকত। এই ৬৫ শতাংশের মধ্যে নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাট ভোটারদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে নয়জন এবং নিবন্ধিত রিপাবলিকানদের প্রতি দশজনের মধ্যে পাঁচজন ভোটার রয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৩৪ শতাংশ বলেছেন, তারা মনে করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাভাইরাসের বিষয়ে সত্য কথাই বলে এসেছেন। অন্যদিকে, ৫৫ শতাংশ বলেছেন, ট্রাম্প মিথ্যা বলেছেন। চার শতাংশ বলেছেন, তারা এ বিষয়ে নিশ্চিত নন। রয়টার্স-ইপসোসের এই জরিপ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অনলাইনে পরিচালিত হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজার পাঁচজন পূর্ণবয়স্ক তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের গত ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাত্র ৬১ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। শুধু তাই নয়, ভোটারদের অনেকেই মনে করেন- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাভাইরাসকে গুরুত্বের সঙ্গে নিলে সংক্রমণ এড়াতেও পারতেন। মার্কিন নির্বাচনের এক মাস আগে গত ২ ও ৩ অক্টোবর জনমত জরিপ পরিচালনা করে রয়টার্স ও ইপসোস। এতে ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকদের বাইরের লোকজনের সমর্থন প্রেসিডেন্টের প্রতি তেমন বৃদ্ধি পায়নি বলে উঠে এসেছে। বর্তমানে মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশটির ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যদিও হাসপাতালের বাইরে তার সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। মহামারীর তীব্রতা বারবারই নাকচ করে দিয়ে এসেছেন ট্রাম্প। প্রায়ই তাকে বলতে শোনা যায়, ভাইরাসটি নিজে থেকেই শেষ হয়ে যাবে। এমনকি গত মঙ্গলবার ওহাইও অঙ্গরাজ্যে প্রথম নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন সব সময় মাস্ক পরে থাকায় তাকে নিয়ে ঠাট্টা করেন ট্রাম্প। করোনা আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ভাল আছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন যে, আগামী কয়েক দিন হবে তার জন্য ‘সত্যিকারের পরীক্ষা’। ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ভাল আছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। শনিবার রাতে হাসপাতাল থেকে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন ট্রাম্প। রবিবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। শনিবার ট্রাম্পের ব্যক্তিগত চিকিৎসক শন কনলি বলেন, এখন পর্যন্ত ট্রাম্পকে অক্সিজেন দিতে হয়নি এবং অনেকটাই সুস্থ রয়েছেন তিনি। তবে চিকিৎসকের এ বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরেই ওয়াল্টার রিড হাসপাতাল প্রাঙ্গণে হোয়াইট হাউসের চীফ অব স্টাফ মার্ক মিডোস সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৪ ঘণ্টা প্রেসিডেন্টের অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক ছিল। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা তার চিকিৎসার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে। এখনও তিনি পুরোপুরি সুস্থতার পথে নেই। মিডোসের ব্রিফিংয়ের পর এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আমি শীঘ্রই ফিরে আসব। নির্বাচনী প্রচার শেষ করার বিষয়েও প্রতিশ্রুতির কথা জানান ট্রাম্প। বলেন, ‘যেভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়েছিল, আমি তা শেষ করার অপেক্ষায় আছি।’ ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রে যারা তাকে শুভ কামনা জানিয়েছেন এবং যেসব বিশ্ব নেতা তার প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন, তাদের সবার প্রতি তিনি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। ট্রাম্প জানান, করোনায় আক্রান্ত ফার্স্ট লেডি খুব ভাল আছেন। প্রসঙ্গত করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু এবং দেশটির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই মহামারীকে ট্রাম্প ততটা গুরুত্ব দেননি। ৩ নবেম্বর ভোট সামনে রেখে গত কয়েক সপ্তাহে নিয়মিতভাবে তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সফর করে আসছিলেন। সংক্রমণ এড়াতে চিকিৎসকরা যেখানে মাস্ক ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন, সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে মাস্ক পরতে অনাগ্রহ দেখিয়ে এসেছেন, এমনকি যারা মাস্ক পরছেন, তাদেরও সমালোচনা করতে ছাড়েননি তিনি।
×