স্টাফ রিপোর্টার ॥ পেরিয়ে গেছে চারটি মাস। গত মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই বন্ধ্যত্বের সূচনা। বন্ধ হয়ে গেছে মঞ্চনাটক থেকে শুরু করে পথনাটকের প্রদর্শনী। মহামারীর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অনুকূলে নেই শিল্পচর্চার পরিবেশ। তবে এই প্রতিবন্ধকতার মাঝেও নতুন পথের সন্ধান খুঁজে নিলো থিয়েটার ’৫২। নাট্যচর্চার প্রতি দায়বদ্ধতার তাগিদে নাট্যদলটি নিয়ে এলো নতুন প্রযোজনা। আর সেই নাটকের মঞ্চায়নে বদ্ধ মিলনায়তন বা মঞ্চের পরিবর্তে ব্যবহৃত হবে উন্মুক্ত আঙিনা। খোলা জায়গায় পরিবেশিত হবে পথনাটক। দলের নতুন প্রযোজনাটির শিরোনাম ‘সোনালি ফাঁসের গল্প’। সুরভী রায় রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন জয়িতা মহলানবীশ। আজ শুক্রবার বিকেল ও সন্ধ্যায় পাঁচটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির বাইরের মাঠে এবং শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার সামনের উন্মুক্ত স্থানে। সমকালীন প্রেক্ষাপটে নির্মিত নাটকটির বেশ কিছু চরিত্রের মুখে মাস্ক থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় দর্শকদেরও অবশ্যই মাস্ক পরে নাটকটি দেখার অনুরোধ জানিয়েছে থিয়েটার ’৫২ দলের সদস্যরা।
নতুন পথনাটকের প্রদর্শনী প্রসঙ্গে কথা হয় নির্দেশক জয়িতা মহলানবীশের সঙ্গে। এই তরুণ নির্দেশক বলেন, বর্তমান অবস্থায় মঞ্চনাটকের মঞ্চায়ন করা সম্ভব নয়। কারণ, মঞ্চনাটক পরিবেশিত হয় বদ্ধঘরে। অন্যদিকে পথনাটকের সুবিধা হচ্ছে সেটি উপস্থাপিত হয় খোলা আঙিনায়। এতে একে অপরের সংস্পর্শ ঘটার সম্ভাবনাটা অনেক কমে যায়। এ কারণেই এই দুঃসময়েও আমরা নতুন পথনাটক নির্মাণে আগ্রহী হয়েছি। কুড়ি মিনিটের প্রযোজনাটিতে পাটকল শ্রমিকদের জীবনের গল্প মেলে ধরা হয়েছে। তাদের জীবনের সুখ-দুঃখের কথার সঙ্গে পাটশিল্পের ক্ষয়িষ্ণুতার আখ্যান উঠে এসেছে কাহিনীতে। চিত্রনাট্য লেখার পর এক সপ্তাহের প্রচেষ্টায় নির্মিত হয়েছে পথনাটকটি। আমাদের দলের অধিকাংশ শিল্পীই এখন রয়েছেন ঢাকার বাইরে। সেই সুবাদে ঢাকায় থাকা শিল্পীদের নিয়ে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। পাঁচদিন অনলাইন এ্যাপ জুমের মাধ্যমে মহড়া হয়েছে। প্রদর্শনীর আগের দিন বৃহস্পতিবার টিএসসির বাইরের মাঠে সরাসরি চূড়ান্ত মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই সবকিছু করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়া সমকালীন ঘটনাতাড়িত নাটকের কাহিনীতে পাটচাষী ও শ্রমিক বাদে বাকি চরিত্রে মুখে মাস্ক পরা থাকবে। এছাড়া দর্শকদেরও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে এবং মাস্ক পরে নাটকটি দেখার জন্য প্রতিটি প্রদর্শনী শুরুর আগে মাইকে ঘোষণা দেয়া হবে। করোনাকালে পথনাটকের প্রদর্শনীর মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে কিনাÑএমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্দেশক ও অভিনয়শিল্পী বলেন, এখন তো মঞ্চনাটক বা পথনাটক বাদে সবকিছুই হচ্ছে। বাসভর্তি মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরজুড়ে। শপিং মল থেকে বাজারÑসব জায়গাতেই স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই না মেনেই ছুটছে অগণন মানুষ। এমনকি টিভি নাটকেরও শূটিং শুরু হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পথনাটকের পরিবেশনা অনেক বেশি নিরাপদ।
সব মিলিয়ে সাতটি চরিত্রে সজ্জিত হয়েছে পথনাটকটি। বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দেবেন নাদিম হাসান, আমিন খান, সুরভী রায়, পিংকি বড়–য়া, সংযুক্তা শুভ্রা, কৃষ্ণ সরকার ও তাহমিদ তায়িফ। আজ শুক্রবার নাটকটির পাঁচটি প্রদর্শনী হবে। বিকেল চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত টিএসসির বাইরের খোলা মাঠে দুটি প্রদর্শনী হবে। বিকেল পাঁচটার পর থেকে শিল্পকলা একাডেমির ১ নং গেটের সামনে অনুষ্ঠিত হবে আরও তিনটি প্রদর্শনী।