স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাট্যচর্চার চল্লিশ বছর পূর্ণ করল দেশের নবনাট্য আন্দোলনের অন্যতম নাট্যদল ঢাকা পদাতিক। সাফল্যে এ উদ্্যাপনে দলের ২ দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। নাট্য প্রদর্শনী, আলোচনা ও সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে সাজানো আয়োজনটির সূচনা হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আবুল কাশেম দুলাল স্মৃতিপদক প্রদান করা হয় নাট্যজন ম. হামিদকে এবং গাজী জাকির হোসেন স্মৃতিপদক প্রদান করা হয় আসমা আক্তার লিজাকে। পদকপ্রাপ্ত শিল্পীদের উত্তরীয় এবং স্মারক ও সম্মাননার অর্থ তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উৎসব উপলক্ষে এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলের লবিতে প্রদর্শিত হয় ঢাকা পদাতিকের বিভিন্ন নাটকের স্থিরচিত্র। লবিতেই পুষ্পবেষ্টিত প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে উৎসব উদ্বোধন করেন অতিথিরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ, নাট্যকার ও নির্দেশক মাসুম আজিজ, অভিনেতা নাদের চৌধুরী এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শওকত জামিল। সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি মিজানুর রহমান।
সম্মাননাপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশে ম. হামিদ বলেন, একসময় কালা-কানুনের দাপটে নাটক করার আগে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়েছে। সেই জায়গা থেকে স্বাধীনতার পর নিরীক্ষাধর্মী নাটক করার একটা অবিরাম চেষ্টা থেকেই থিয়েটার আজকের আদল পেয়েছে। আজকের এই সম্মান আমাকে আপ্লুত করেছে।
আসমা আক্তার লিজা বলেন, মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে দুই বেণী দুলিয়ে সিআইটিতে এসেছিলাম, নাটকের সঙ্গে সেই যে পথচলা শুরু হয় তা আজো চলছে। ক্রমশ এই নাটকের ভুবনটাই আমার বৃহত্তর পরিবার হয়ে উঠেছে। যখন যে পরিস্থিতিতে থাকি, আমি জানি আমার সঙ্গে একটা বিশাল পরিবার আছে। সেই পরিবারেরে পক্ষ থেকে পুরস্কৃত হবার আনন্দটাই আলাদা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাট্যচর্চাকে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, কিছুদিন আগেও আমাদের নাটকে খরা চলছিল। মঞ্চে কোন ভাল নাটক আসছিল না। এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। পুরনো নাট্যদলের সঙ্গে নতুন নাট্যদলগুলোর মধ্যে একটা উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু নবীন নাট্যকর্মী আশার সঞ্চার করেছে নাট্যাঙ্গনে। তাদের মাধ্যমে মঞ্চে এসেছে বেশ কিছু ভাল নাটক। আর ভাল নাটক হলেও দর্শকেরও অভাব হয় না। পাশাপাশি পুরনো দলগুলো যে ভাল করছে তারই উদাহরণ ঢাকা পদাতিকের এই উৎসব। তবে এই যানজটের শহরে শুধু শিল্পকলা একাডেমি বা বেইলি রোডের পরিবর্তে নাট্যচর্চাকে ছড়িয়ে দিতে হবে ঢাকার চারপাশে। না হলে ভাল নাটক হলেও যানজট পেরিয়ে সেই নাটকের জন্য দর্শক পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নাট্য প্রদর্শনীর জন্য উপযুক্ত মঞ্চ রয়েছে। সেখানে একটি সফল নাট্যোৎসবও হয়েছে। ধানমন্ডির নজরুল ইনস্টিটিউটেও নাটকের উপযোগী মঞ্চ রয়েছে। এছাড়া আমি সংস্কৃতিমন্ত্রী থাকাকালীন উত্তরায় একটি নাট্যকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। সেটি দ্রুত নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এভাবে নাটককে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি বিদেশের অনেকেই দেশেই যেমন রাতের খাবারের পর মানুষ নাটক দেখতে বের হয় তেমনি আমাদের দেশেও পরীক্ষামূলকভাবে রাত আটটা থেকে প্রদর্শনী করা যেতে পারে। এতে দূরের দর্শকদের জন্য নাটক দেখায় সুবিধা হবে।
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিতা শেষে মঞ্চস্থ হয় ঢাকা পদাতিকের নাটক ‘কথা ’৭১’। কুমার প্রীতীশ বলের লেখা নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন দেবাশীষ ঘোষ।
আজ শুক্রবার উৎসবের সমাপনী দিনে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে পদাতিকের আরেক নাটক ‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’। রচনার পাশাপাশি প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন মাসুম আজিজ।