ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পুরনো সীমানায়ও একই ব্যবস্থা নেয়া হবে ;###; দখলমুক্ত করা হবে সব ফুটপাথ ;###;নির্দেশ না মানলে শাস্তি ও জরিমানা

ঢাকার দুই সিটির নতুন ৩৬ ওয়ার্ডে সার্ভিস লাইন হবে ফুটপাথের নিচে ॥ জনদুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১০:১০, ৬ জানুয়ারি ২০২০

  ঢাকার দুই সিটির নতুন ৩৬ ওয়ার্ডে সার্ভিস লাইন  হবে ফুটপাথের নিচে ॥ জনদুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ

মশিউর রহমান খান ॥ রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া নতুন ৩৬ ওয়ার্ডের সকল রাস্তা সারাবছর খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এখন থেকে এসব এলাকার সকল রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি চিরতরে বন্ধ করতে উন্নত বিশ্বের ন্যায় রাস্তার দু’পাশের ফুটপাথের নিচ দিয়ে ও বিশেষ ক্ষেত্রে রাস্তার এক পাশ দিয়ে সকল প্রকার ইউটিলিটি সার্ভিসের লাইন বসানোর নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সকল প্রধান ও মধ্যমানের সড়কের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে। বিশেষভাবে ফুটপাথের নিচে কমন সার্ভিস ডাক্ট তৈরি করে এর ভেতরে সকল ইউটিলিটি সার্ভিসের ক্যাবল, পাইপ প্রতিস্থাপন বা বিভিন্ন প্রকার লাইনের সংযোগ দেয়া হবে। ফলে জনদুর্ভোগ অনেকাংশে কমে আসবে। এছাড়া পুরনো সীমানায় নতুন করে তৈরি হওয়া সকল রাস্তায় নতুন করে সেবা সার্ভিস সম্প্রসারণের প্রয়োজন হলে এক্ষেত্রেও খোঁড়াখুঁড়ির এ নির্দেশ প্রযোজ্য হবে। সড়ক খনন নীতিমালা ২০১৯ অনুযায়ী ফুটপাথের নিচে বা সড়কের এক পাশে ইউটিলিটি সার্ভিস স্থানান্তর বা স্থাপন সংক্রান্ত ১৬ অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নে এ নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়ন করতে প্রথমেই দুই সিটির সকল ফুটপাথ অবৈধ দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনারও নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর ফলে যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা বছরজুড়ে রাস্তা খনন ও যত্রতত্র ইউটিলিটি সার্ভিস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইচ্ছেমতো লাইন স্থাপনের পথ চিরতরে বন্ধ হওয়ার পথ খুলছে। নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে ও রাস্তায় বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচাতে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে রাস্তা খোঁড়ার দীর্ঘদিন পরও মেরামত না করে ফেলে রাখায় ধুলি দূষণের মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি ও পরিবেশ দূষণ হওয়ায় তা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে এমন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অপরদিকে ঢাকা উত্তর সিটি ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি নতুন রাস্তায় বাধ্যতামূলকভাবে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়। সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে দুই সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদদের সেই নিয়মে সকল প্রকার নক্সা প্রণয়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফলে তাদের সকল রাস্তার এক পাশে ও ফুটপাথের নিচ দিয়ে ইউটিলিটি লাইন চালুর জন্য পরিকল্পনা করে তা জমা দিচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির প্রকৌশল শাখা সূত্র জানায়, উভয় সিটি কর্পোরেশন সরকারের এ নির্দেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। এর মধ্যেই উভয় সিটি কর্পোরেশনই তাদের সীমানায় অবস্থিত সকল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতি নিয়েছে। এছাড়া নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়ন কাজের জন্য করা নক্সায় ফুটপাথের নিচ দিয়ে কমন সার্ভিস ডাক্ট তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও প্রদান করেছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের রাজধানীর সড়ক কাটা, পরিচ্ছন্নতা ও সার্ভিস লাইন তৈরির কারণ নিয়ে করা পর্যবেক্ষণে বর্তমানের ঢাকা মহানগরীতে উদ্ভূত জনভোগান্তির ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে নাগরিকদের জন্য বৃহৎ প্রকল্পসমূহ যেমন মেট্রোরেল, বিদ্যুত পানি সরবরাহ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, আবাসন, তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদি তথা সেবাদানকারী সংস্থাসমূহের কাজ একইসঙ্গে চলমান থাকায় মহানগরীতে প্রায়ই সড়কের খনন কাজ করা হয়েছে ও হচ্ছে। এর ফলে রাস্তা বারবার কাটা হচ্ছে। একইসঙ্গে সড়ক খননকারী সংস্থাসমূহ সড়ক খননের সময় ও পরবর্তী সময়ে ধূলা বালু মাটি ও নির্মাণ সামগ্রী স্ব উদ্যোগে অপসারণ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে উন্নয়ন কাজ চলার সময় বাতাসে ধূলার বিস্তার রোধে সড়কসমূহে পর্যাপ্ত পানি ছিটানোও হয় না। এই সময়ে সিটি কর্পোরেশনের সীমিত সংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী, যান বা যন্ত্রাদির দ্বারা ধূলা বালু মাটি বা নির্মাণ সামগ্রী সম্পূর্ণ অপসারণ করা সম্ভব হয় না। একই সঙ্গে বিভিন্ন ভবন নির্মাণ কাজ চলাকালীন বাতাসে ধুলিকনার মিশ্রণ রোধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক কমপ্লায়েন্স যথাযথভাবে অনুসরণ না করার অভিযোগ রয়েছে। তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা ২০১৯-এর সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদসমূহ কঠোরভাবে পরিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও দায়িত্বরতদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, একটি শহরে সারাবছর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি আর মেরামতের কাজ দৃষ্টিকটুও বটে। রাস্তার এক পাশে বা কমন সার্ভিস ডাক্ট তৈরি করে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের লাইন স্থাপনের ব্যবস্থা করা গেলে সরকারের বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির মাধ্যমে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণও অনেকাংশে কমবে। এছাড়া আর্থিকভাবেই সরকারের অনেক অর্থ সাশ্রয় হবে ও ইউটিলিটি সার্ভিসের কাজও টেকসই হবে। নতুন সকল পরিকল্পনায় নাগরিকদের কষ্ট লাঘবে এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অতি জরুরী। সড়ক খনন নীতিমালায় ফুটপাথের নিচে বা সড়কের এক পাশে ইউটিলিটি সার্ভিস স্থানান্তর বা স্থাপন সংক্রান্ত ১৬ অনুচ্ছেদের ১ ধারায় বলা হয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা তাদের সুবিধা বা নিজস্ব পরিকল্পনা অনুসারে সড়কের নিচে ইউটিলিটি সার্ভিস নির্মাণ বা পুরনো লাইন স্থানান্তর করে থাকে। এ কারণে একটি সড়ক খননকালে পুরো সড়কটি অকার্যকর হয়ে যায়। বিশ্বের সকল নগরীতে ইউটিলিটি সার্ভিসের লাইন সড়কের নিচে সার্ভিস ডাক্ট নির্মাণ করে বা সড়কের এক পাশে ইউটিলিটি সার্ভিস স্থাপন করা হয়। রাজধানী ঢাকার গুরুত্ব বিবেচনায় ইউটিলিটি সার্ভিসের সম্প্রসারণকালে যথাসম্ভব তা সড়কের এক পাশে বা ফুটপাথে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে নগরীর প্রধান ও মাধ্যমিক সড়কগুলোতে ইউটিলিটি সার্ভিসের সম্প্রসারণকালে তা ফুটপাথে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। ১৬ অনুচ্ছেদ-২ এ বলা হয়েছে নতুন পরিকল্পিত সকল সড়কের উভয় পাশে ফুটপাথের নিচে সার্ভিস ডাক্ট নির্মাণ করে ইউটিলিটি সার্ভিস স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। এরই প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় দুই সিটি কর্পোরেশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আসাদুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশ বাস্তবায়নে আমরা ইতোমধ্যেই নতুন যুক্ত হওয়া সকল ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক ও মধ্যম মানের সড়কে প্রয়োগের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এরই অংশ হিসেবে আমরা নতুন সংযুক্ত ৮টি ইউনিয়নের উন্নয়নে করা মাস্টারপ্ল্যানে প্রতিটি রাস্তার ফুটপাথের উভয় পাশে কমন সার্ভিস ডাক্ট তৈরির নক্সা করেই রাস্তা তৈরি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আশা করি এর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে চলে আসা বছরজুড়ে যখন তখন রাস্তা খোঁড়ার পথ বন্ধ হবে। একই সঙ্গে কম খরচে ও কম সময়ে সেবা সার্ভিসের লাইন প্রতিস্থাপন করাও সম্ভব হবে। মূলত শহরকে পরিচ্ছন্ন ও স্মার্ট করে গড়ে তুলতে এর বিকল্প নেই। আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা নতুন ওয়ার্ডের রাস্তা ছাড়াও বর্তমানের অর্থাৎ পুরনো ৫৭টি ওয়ার্ডের মূল সড়ক বা ভিআইপি সড়কের পাশেও কিভাবে বিভিন্ন সার্ভিসের লাইনকে ফুটপাথের নিচে স্থাপন করা যায় তার পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে ডিপিপি তৈরি করে ডিএসসিসিতে জমা দেয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজধানীতে সেবাদানকারী সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার পরই আমরা এ প্রকল্প বাস্তাবায়নে কাজ শুরু করব। মূলত এ প্রকল্পের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে সফল হলে পুরনো সকল ওয়ার্ডের সব রাস্তায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে। যার মাধ্যমে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার পথ খুলবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পথ বন্ধ করতে ও সকল ইউটিলিটি সার্ভিসের লাইন একসঙ্গে রাখতে চাই। রাস্তার দুই ধারে ফুটপাথের নিচে ও বিশেষ ক্ষেত্রে রাস্তার একধারে স্থাপনের জন্য দুই সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষভাবে ফুটপাথের নিচে কমন সার্ভিস ডাক্ট তৈরি করে এর ভেতরে সকল ইউটিলিটি সার্ভিসের ক্যাবল, পাইপ প্রতিস্থাপন বা বিভিন্ন প্রকার লাইনের সংযোগ দেয়া হবে। এছাড়া পুরনো সীমানায় নতুন করে তৈরি হওয়া সকল রাস্তায় নতুন করে সেবা সার্ভিস সম্প্রসারণের প্রয়োজন হলে এক্ষেত্রেও খোঁড়াখুঁড়ির এ নির্দেশ প্রযোজ্য হবে। সড়ক খনন নীতিমালা ২০১৯ অনুযায়ী ফুটপাথের নিচে বা সড়কের একপাশে ইউটিলিটি সার্ভিস স্থানান্তর বা স্থাপন সংক্রান্ত ১৬ অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করতে প্রথমেই দুই সিটির সকল ফুটপাথ অবৈধ দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর ফলে যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা বছরজুড়ে রাস্তা খনন ও যত্রতত্র ইউটিলিটি সার্ভিস সেবার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইচ্ছেমতো সেবা সার্ভিস স্থাপনের পথ আশা করি চিরতরে বন্ধ হবে। তাজুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটির আশপাশের নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডের সকল নতুন রাস্তায় এটি প্রযোজ্য হবে। মূল সড়ক ও মধ্যম আকারের সড়কের জন্য এটি প্রযোজ্য হবে। তবে পরবর্তীতে সকল স্থানেই এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য নতুন করে রাস্তা তৈরির জন্য করা নক্সাতেই এ পদ্ধতির সংযোজনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এখন থেকেই গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল শাখাকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে এর বাইরে পুরনো সীমানায় কিভাবে শতভাগ রাস্তায় এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করা যায় তার প্রচেষ্টা চলছে। যারা এ নির্দেশ মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক জেল জরিমানা করা হবে।
×