বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ মৎস্য অধিদফতরের আরডি প্রকল্পের আওতায় জলাশয় সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারী নিতিমালায় পুকুর/দিঘী/দহের পুনঃখননের কাজ স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে করার কথা বরাদ্দপত্রে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদাররা শ্রমিক দিয়ে কাজ না করিয়ে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিন দ্বারা খনন কাজ করছেন। এ নিয়ে স্থানীয় গরিব দিনমজুর শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রমিকের নাম দেখিয়ে ভুয়া মাস্টাররোল তৈরি করে বিল ভাউচার করছেন ঠিকাদাররা। কাজ করতে গিয়ে সরকারী নীতিমালা অমান্য করাসহ সিডিউল মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। শ্রমিকদের অভিযোগ কোন কোন পুকুরের মাটি খনন করে ইটভাঁটি মালিকদের কাছে বিক্রি করে সেই টাকা ভেক্যু মেশিন ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে পুকুর পুনঃখননের সরকারী বরাদ্দকৃত সমুদয় অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে লুটপাট করা হচ্ছে। এতে শুধু শ্রমিকরাই বঞ্ছিত হচ্ছে। দ্রুত উধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে এক্সাভেটর (ভেকু) মেশিন দ্বারা কাজ বন্ধের ও প্রকল্পের কাজে হরিলুট বন্ধ করে সুষ্ঠুভাবে খনন কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় শ্রমিকরা।
নওগাঁ মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের সরাইল মৌজার ঘুলির দহের সংস্কার কাজে ৭ লাখ ৯০ হাজার, বৈঠাখালীদহ পুকুর (১) ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা, বৈঠাখালী পুকুর (২) ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, জেলার বদলগাছী উপজেলার কাস্টগাড়ি মৌজার সর্বমঙ্গলা পুকুর সংস্কার কাজে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, খাদাইল মৌজার সিংড়াডোবা পুকুর ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা, বেগুনজোয়ার মৌজার কৃষ্ণপুকুর ও চন্দনপুকুরে ১৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা, পতœীতলা উপজেলার বাবনাবাজ মৌজার বেলপুকুর ৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা, দোঁচাই মৌজার কামাড়াপুকুর ৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, চকখৈল মৌজার তিতিহার পুকুর ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ধামইরহাট উপজেলার কাশিপুর মৌজায় গুচ্ছগ্রাম পুকুর ১৭ লাখ টাকা, আগ্রাদ্বিগুণ মৌজার আকলাহার পুকুর ১১ লাখ টাকা, বড়দুশমিতা পুকুর ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা, নলাপুকুর ১৪ লাখ টাকা, বড়পুকুর ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা ও ধাপের পুকুর ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা জলাশয় সংস্কার কাজে ব্যয় করা হবে। প্রতিটি কাজে দৈনিক গড়ে ১শ’ শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও ভুয়া মাস্টাররোল তৈরি করে বিল দাখিল করে বিল উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রকল্পের স্থানে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের সরাইল ঘুলিরদহের সংস্কার কাজে শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর কথা থাকলেও তা না করে নওগাঁ মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের জোগসাজশে এক্সাভেটর (ভেকু) মেশিন দ্বারা কাজ করানো হচ্ছে। আরডি প্রকল্পের ঠিকাদার একছাদ আলী জানান, আসলে শ্রমিক দিয়েই কাজ করানোর কথা। দেখুন ভেকু মেশিন দিয়ে কাজ করলে কাজগুলো দূত শেষ করা যায়। আমাদের লাভের বিষয়টাওতো দেখতে হবে। আর শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হলে তা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, প্রকল্পে শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর কথা আছে। কিন্তু কাজগুলো সঠিক সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে ভেকু মেশিন দিয়ে করতে হচ্ছে। তাছাড়া আরও বিষয় থাকে যা আমাদের মেনে চলতে হয়।