ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

চমৎকার বিন্যাস, খোলেনি কিছু স্টল-ধুলোর উৎপাত

প্রকাশিত: ১০:৩১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 চমৎকার বিন্যাস,  খোলেনি কিছু  স্টল-ধুলোর  উৎপাত

মনোয়ার হোসেন ॥ শুক্রবার ছিল ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন। এদিন থেকে শুরু হলো বায়ান্নর ভাষা শহীদদের নিবেদিত মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। নব আঙ্গিকে সজ্জিত এবারের বইমেলায় ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সম্মিলন ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার। বাংলা একাডেমিকে বায়ান্নর স্মারক আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে একাত্তরের স্মারক বিবেচনায় সাজানো হয়েছে ২০১৯ সালের মেলা। সেই বিবেচনায় এবার মেলার প্রতিপাদ্য হয়েছে ‘বিজয় : ১৯৫২ থেকে ১৮৭১, নব পর্যায়’। এবার উদ্যান অংশের মেলার স্টল বিন্যাসে নান্দনিকতা নজর কেড়েছে। চলতে ফিরতে দারুণ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন পাঠকরা। প্রতিটি স্টলের মাঝে রয়েছে চলাফেরার প্রশস্ত পথ। প্রকাশকরাও বলছেন এবারের মেলার বিন্যাস হয়েছে পাঠকবান্ধব। প্রথমদিন প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর সাড়ে তিন ঘণ্টার জন্য খোলা ছিল গ্রন্থমেলা। ছুটির দিন হলেও তুমুল ভিড় হয়নি পাঠকের। উল্টোদিকে নিয়মভঙ্গ করে প্রথম দিনে চালু হয়নি বেশ কিছু স্টল। এমনকি উদ্যান অংশে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়নটিও ছিল জনমানবশূন্য। সেখানে বই তো দূরের কথা ছিল না কোন সেলসম্যান। জ্বলেনি প্যাভিলিয়নের বাতি। এমন অবস্থা ছিল আরও বেশ কিছু স্টলে। উল্টোদিকে বরাবরের মতো ধুলো উড়েছে মেলার উদ্যান অংশে। অনেকেই হাত দিয়ে নাক ঢেকে কিংবা নাসিকাবন্ধ পরে ঘুরেছেন মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে। বিকেলে মেলা আঙিনায় ঘুরতে ঘুরতে দেখা অন্বেষা প্রকাশনের প্রকাশক শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। এবারের মেলা প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে প্রকাশক বললেন, এবারের মেলার পরিবেশ অনেক সুন্দর। বিশেষ করে স্টল বিন্যাস হয়েছে চমৎকার। প্রতিটি স্টলের মাঝেই রয়েছে প্রশস্ত পরিসর। পাঠকে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারবেন স্টলে স্টলে। সেই সুবাদে পছন্দের বইটিও ভালোভাবে নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ। সব মিলিয়ে এবারের মেলার পরিবেশ পাঠকবান্ধব। একাডেমির নতুন মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী প্রকাশকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মেলার একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। পাশাপাশি এবারের মেলা চলাকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভাল থাকায় পাঠকের উপস্থিতি ভালো হওয়ার আশা করছি। আর পাঠক বেশি আসলে স্বাভাবিকভাবেই বইও বেশি বিক্রি হবে। মেলার প্রথমদিনে প্রকাশনা সংস্থার অনন্যার স্টলে বসে বরাবরের মতো পাঠককে অটোগ্রাফ দিয়েছেন সময়ের জনপ্রিয় লেখক ইমদাদুল হক মিলন। এবারের মেলা প্রসঙ্গে এই কথাশিল্পী বলেন, মেলা পুরাটা ঘুরে দেখা না হলেও একনজরে তাকালে মন ভরে যায়। চোখে পড়ার মতো বিন্যাস হয়েছে। খোলামেলা এ বিন্যাস পাঠককে মেলায় আসতে আগ্রহী করবে। তবে যথারীতি ধুলোর উপদ্রবটা ঠিকই রয়ে গেছে। এটা পাঠক, প্রকাশক কিংবা লেখক সবার জন্যই বিব্রতকর। আশা করি, আজ শনিবার থেকে মেলার এই ধুলিধূসর প্রান্তর। এই লেখক জানালেন, এবারের মেলায় তার কিছু নতুন বই এসেছে। যার মধ্যে অনন্যা থেকে বেরিয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘একাত্তর ও একজন মা’ এবং বাচ্চাদের দুইটি বই এবং অন্যপ্রকাশ থেকে আসবে গল্পগ্রন্থ ‘ফেলে যাওয়া রুমালখানি’। অনেকের মতো প্রথম দিনের বিকেলে মেলায় এসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অনিন্দ্য প্রকাশে বসেছিলেন তিনি। তাকে ঘিরে স্টলের চারপাশে ছিল তুমুল ভিড়। সেখানে বসে তিনি এম আর মাহবুবের সঙ্গে যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত ভাষাবীর ‘এম এ ওয়াদুদ স্মারকগ্রন্থ’ বইটিতে অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন। এছাড়াও প্রথম দিনের মেলায় এসেছিলেন প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ ওসদ্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল। মেলার প্রথম দিনে প্রায় পনেরটির মতো স্টল পরিপূর্ণভাবে চালু হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের প্যাভিলিয়ন। চালু না হওয়া অন্য স্টলগুলোর মধ্যে ছিল একুশে বাংলা প্রকাশন, বই বাজার প্রকাশনী, তিউরি প্রকাশন, পলাশ প্রকাশনী, মাদার্স প্রকাশনী, বাঁশিয়া প্রকাশনী, ঘাষফুল, বিজয় ডিজিটাল, পিয়াল প্রিন্টিং এ্যান্ড পাবলিকেশন্স, পরিবার পাবলিকেশন্স। এ প্রসঙ্গে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ৩৯৫টি প্রকাশনা সংস্থার মতো হাতেগোনা কয়েকটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। তবে শনিবারের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। আর ধুলোই থাকবে না। এবারের মেলায় প্রথমবারের সংযুক্ত হয়েছে ‘লেখক বলছি’ নামের মঞ্চ। এ মঞ্চে প্রথমদিনে কথা বলেন কবি আফরোজা সোমা ও লেখক সাইফুলাহ মাহমুদ দুলাল। তাদের সঙ্গে কথনপর্বের সঞ্চালনা করেন ফারহান ইশরাত ও খালিদ মারুফ। নতুন বইয়ের খোঁজখবর ॥ মেলার প্রথম দিনে একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের কাছ থেকে নতুন বইয়ের তথ্য আসেনি। তবে বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে পাওয়া গেছে বিভিন্ন সদ্য বেরুনো কিছু বইয়ের তথ্য। প্রথমদিনে তাম্রলিপি থেকে বেরিয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘নিয়ান’ ও ‘রাজাকার ইজ্জত আলীর জীবনের একদিন’ এবং অধ্যয়ন থেকে ‘টুনুর আজ কাহিনী’। সব মিলিয়ে প্রথমদিনে পাঠকসমাদৃত এই লেখকের তিনটি বইয়ের সন্ধান মিলেছে। মেলায় নতুন আসা অন্যান্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে কবি কাজী রোজীর ‘মধ্যিখানে সিঁথিকাটা পুরুষ গো’ (মাওলা ব্রাদার্স), সেলিনা হোসেনের ‘বিষন্ন শহরের দহন’ (ইত্যাদি), পবিত্র সরকারের ‘গল্পে বাংলা উচ্চারণ’ ও আসিফের ‘মানব প্রজাতির অনিশ্চিত গন্তব্য’ (আলোঘর), এ কে এম শাহনাওয়াজের ‘কিশোরদের বঙ্গবন্ধু’ (অবসর), হরিশংকর জলদাসের ‘সুখলতার ঘর নেই’ (প্রথমা) ও পিয়াস মজিদের ‘কিছু হুমায়ূন’ (অন্বেষা)।
×