ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রন্থমেলায় পাঁচ ভাষাশহীদের নামে চত্বর

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

গ্রন্থমেলায় পাঁচ ভাষাশহীদের নামে চত্বর

মনোয়ার হোসেন ॥ বছর ঘুরে আবার আসছে ভাষাশহীদদের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস। ভাষার মাসে প্রতিবছরের মতো এবারও ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধায় নিবেদিত হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিতব্য বাঙালীর প্রাণের মেলা ঘিরে চলছে কর্মযজ্ঞ। মেলার দুই ক্যানভাস বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে দিনভর চলছে কর্মচাঞ্চল্য। বাঁশের কাঠামোর ওপর ধীরে ধীরে বিস্তৃত হচ্ছে স্টলসজ্জা। বাংলা একাডেমি অংশে ইতোমধ্যে মেলার মূল মঞ্চ ও নজরুল মঞ্চের কাজ প্রায় নব্বই শতাংশ শেষ হয়েছে। নতুন অনেক কিছু সঙ্গী করে এবার এগিয়ে যাচ্ছে মাসব্যাপী মেলার আয়োজন। এই প্রথমবারের মতো মেলাকে বিন্যস্ত করা হয়েছে পাঁচ ভাষাশহীদের নামে। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউরের নামে থাকছে পৃথক পাঁচ চত্বর। এর মধ্যে মেলার বাংলা একাডেমি আঙিনাটি উৎসর্গ করা হয়েছে শহীদ বরকতের নামে। পাঁচ ভাষাশহীদের প্রতিটি চত্বরে ঠাঁই স্টলসজ্জায়ও থাকবে পৃথক রঙের ব্যবহার। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ ও মেজেন্ডা রঙের প্রাধান্যে সাজবে স্টল ও চত্বরগুলো। সেই সঙ্গে প্রত্যেক ভাষাশহীদের নামাঙ্কিত চত্বরের সামনে শোভা পাবে তাদের প্রতিকৃতি। এর বাইরে মেলা আধুনিকায়নে বিশেষ মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। ডিজিটাল তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে বইপ্রেমীরা জানতে পারবেন বই ও স্টলবিষয়ক যাবতীয় তথ্য। ডিজিটাল মনিটরে সর্বক্ষণিক প্রদর্শিত হবে নানা তথ্য ও মেলাসংক্রান্ত নির্দেশনা। শুধু তাই নয়, দেশের আর্থিক লেনদেনবিষয়ক চলমান সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্রেতা বই কেনার সুযোগ পাবেন। এবারের মেলার সবচেয়ে বড় বিষয় নক্সার নান্দনিকতা। ‘বিজয় বায়ান্ন থেকে একাত্তর : নবপর্যায়’ প্রতিপাদ্যে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে বিস্তৃত হবে মেলার নক্সা। মেলার শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে কথা হলো গ্রন্থমেলার সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবারের মেলার নক্সাসহ অনেক কিছুতেই থাকবে ব্যাপক পরিবর্তন। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির দিক থেকে মেলাকে একটি সমৃদ্ধ জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। সেই লক্ষ্যে মেলার নক্সা, সাজসজ্জা, বই কেনাকাটা, মেলার নিজস্ব ওয়েবসাইটের পাশাপাশি প্রথমবার উন্মোচিত হবে মেলার লোগো। পাঠকের সুবিধার্থে মেলার দুই প্রবেশপথ টিএসসি ও দোয়েল চত্বরে থাকবে দুটি বিশাল মনিটর। মনিটরের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা খুঁজে পাবেন স্টল ও বইসহ মেলাবিষয়ক নানা নির্দেশনা। অপরদিকে প্রথমবারের মতো মেলাকে কেন্দ্র করে খোলা হয়েছে একাডেমির নিজস্ব ওয়েবসাইট। িিি .নধ২১নড়ড়শভধরৎ. পড়স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাঠকরা স্টলের নাম কিংবা নম্বর ব্যবহার করে জানতে পারবেন, কোথায় সেটির অবস্থান। পাঁচ ভাষাশহীদের নামে চত্বরগুলোয় থাকবে পৃথক পৃথক স্তম্ভ। ওই স্তম্ভে জীবনবৃত্তান্তসহ উপস্থাপিত হবে শহীদদের প্রতিকৃতি। এছাড়া প্রতিটি শহীদের নামাঙ্কিত চত্বরের স্টলগুলোর রঙের ব্যবহারে থাকবে তারতম্য। লাল, সবুজ, নীল, হলুদ, মেজেন্ডায় সজ্জিত হবে এসব চত্বর। মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি এবার তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের প্রতি জোর দিচ্ছে। সেই সূত্রে শুরু থেকেই মেলার কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে এগিয়ে চলছে। এবার মেলার স্টলের আবেদনপত্র এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ফল, লটারি, স্টল ভাড়া সবই করা হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতির আশ্রয়ে। কয়েক বছর ধরে মেলা জিপিএসের (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) আওতায় আনার কথা হলেও সেটি পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। কিন্তু আয়োজক কর্তৃপক্ষ এবার সে বিষয়ে বদ্ধপরিকর। প্রকাশক ও পাঠকের একটি বড় দাবি ছিল, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন পজ মেশিনের মাধ্যমে বই কেনার সুযোগ রাখা। এবার সেটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে বলে মেলা সূত্র নিশ্চিত করেছে। নব আঙ্গিকে গড়া এবারের মেলার বিন্যাসে থাকছে ব্যাপক পরিবর্তন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভকে কেন্দ্র করে বিন্যস্ত হবে নক্সা। সে নক্সার মাঝে থাকবে বাঙালীর অহঙ্কার বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরা বিজয়ী জাতিসত্তার শিল্পিত ছোঁয়া। পাশাপাশি মেলার রূপকল্পে থাকবে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের বারতা। নতুন ভাবনার অনুসারী এবারের বইমেলা নির্মিত হবে খ্যাতিমান স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝরের নক্সায়। লেখকের সঙ্গে পাঠকের সৌহার্দ্য বাড়াতে প্রথমবারের মতো মেলায় ঠাঁই পাবে ‘লেখক বলছি’ নামের মঞ্চ। প্রতিদিন পাঁচজন করে লেখক পাঠকের সামনে আসবেন নিজের নতুন বইটি নিয়ে। লেখক-পাঠকে হবে প্রাণবন্ত আলোচনা। বইয়ের উপস্থাপনাসহ মেলার স্টল থেকে প্যাভিলিয়নের সাজসজ্জা হবে আগের চেয়ে আরও বেশি নান্দনিক। বইয়ের বিকিকিনির পাশাপাশি মেলার প্রতিটি প্রান্তেই দর্শনার্থীর স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরার বিষয়ে দেয়া হয়েছে বিশেষ মনোযোগ। আগামী পয়লা ফেব্রুয়ারি বিকেলে মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে মঞ্চে আলো ছড়াবেন অসংখ্য কালজয়ী কবিতার কবি শঙ্খ ঘোষ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এই কাব্য¯্রষ্টা।। এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গ্রন্থ লেখা মিসরের লেখক, সাংবাদিক মোহসেন আল-আরিশি। তার নিজের ভাষায় লেখা গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশ করছে বাংলা একাডেমি। শিরোনাম ‘যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়।’ লেখকের উপস্থিতিতে বইটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া হবে বলে জানায় একাডেমি কর্তৃপক্ষ । বুধবার গ্রন্থমেলার স্টল বরাদ্দের লটারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার মোট ৬৫০ ইউনিটের ৪৫০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে মেলায়। থাকছে ২৪টি প্যাভিলিয়ন। ২৪ প্যাভিলিয়নের মধ্যে আবার ২৪ বাই ২৪ এবং ২০ বাই ২০ বর্গফুটের প্যাভিলিয়ন রয়েছে। মেলা কর্তৃপক্ষ এবার এক ইউনিটের স্টলের ভাড়া ধরেছে ১৫ হাজার ১০০ টাকা, দুই ইউনিটের ৩৩ হাজার টাকা, তিন ইউনিটের ৬৯ হাজার টাকা, চার ইউনিট ৮০ হাজার টাকা। এছাড়া বিশ বাই বিশ বর্গফুটের প্যাভিলিয়ন ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা এবং চব্বিশ বাই চব্বিশ বর্গফুটের প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায়।
×