মনোয়ার হোসেন ॥ ঈদ আনন্দে বহুমুখী বিনোদনে বিভোর এখন শহরবাসী। ঘরে বসে ছোট পর্দায় টেলিভিশন অনুষ্ঠানমালার সঙ্গে হাতছানি দিচ্ছে বড় পর্দায় সিনেমা দেখার আনন্দ। এর বাইরে থিম পার্কের নানা রাইড উপভোগ, উন্মুক্ত উদ্যানে নির্মল সময় কাটিয়ে দেয়ার পাশাপাশি শিশুপার্ক বা চিড়িয়াখানায় ঘোরাঘুরি করেও কেটে যাচ্ছে সুসময়। ঈদকে ঘিরে এই বহুমাত্রিক বিনোদনের পসরা থাকলেও রূপালি পর্দার আকর্ষণে সিনেমাপ্রেমীরা ঠিকই হাজির হচ্ছেন সিনেমা হলে। যদিও ঘরে বসেই টিভি চ্যানেলে হরেক রকম নাটক, টেলিফিল্ম, সঙ্গীতানুষ্ঠান, তারকাদের আড্ডাসহ সিনেমা দেখার অবারিত সুযোগ রয়েছে। তবে বিজ্ঞাপনের যাতনায় নির্দিষ্ট কোন অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে দর্শককে হতে হয় চরম বিরক্ত। আবার অসংখ্য অনুষ্ঠান থাকলেও উৎকর্ষতার বিবেচনায় সব অনুষ্ঠান দেখা হয় না দর্শকের। তাই কিছুক্ষণ পরপর হাতের রিমোটটি চেপে চলে যেতে হয় চ্যানেল থেকে চ্যানেলে। এদিক থেকে প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখাটা দারুণ স্বস্তির। বিজ্ঞাপনের চাপে অতিষ্ঠ হতে হয় না দর্শককে। অন্ধকার ঘরে বসে নয়নজুড়ানো নানা দৃশ্য, সংলাপ, এ্যাকশন কিংবা নাচ-গানের ভেতর দিয়ে ছবির গল্পের ভেতরে প্রবাহিত হয় চলচ্চিত্রপ্রেমীর মনোসংযোগ। এছাড়া বহুকাল ধরেই বাঙালীর ঈদ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ ছবি দেখা। বিশাল পর্দায় নিরবচ্ছিন্নভাবে দেখে নেয়া যায় পছন্দের ছবিটি। নিরবচ্ছিন্নভাবে কেটে যায় আনন্দময় ঈদ মুহূর্ত। তাই প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে দর্শকের কথা বিবেচনায় নিয়ে মুক্তি দেয়া হয় নতুন ছবি। সেই সূত্রে এবার ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল কোরবানির ঈদে মুক্তি পেয়েছে চারটি ঢাকাই ছবি। ঢাকাসহ সারা দেশের প্রেক্ষাগৃহে চলছে এসব সিনেমা।
বুধ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ঈদ-উল-আজহার তিন দিনে শহরবাসীর অনেকেই ছবি দেখার লোভে ঢুঁ মেরেছেন বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে। শুক্রবার বিকেলে হাউসফুল না হলেও আশাব্যঞ্জক দর্শকের উপস্থিতি মেলে মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হলে। কেউবা এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে। আবার অনেকেই হাজির হয়েছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী নানা শ্রেণীর দর্শক। বাদ পড়েনি ছোটরাও। পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যের হাত ধরে চলে এসেছে বড় পর্দায় ছবি দেখার আনন্দে শামিল হতে। সবাই কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করছেন ছবির টিকেট। এমন একজনের হাতে দেখা গেল দশটি
টিকেট। পরিবারের এই দলনেতা শহীদ হোসেন সূত্রাপুরের বাসিন্দা। তাঁর চারপাশে ভিড় জমিয়েছে পরিবারের তরুণ থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যরা। ঈদে দলবেঁধে ছবি দেখা সম্পর্কে জানতে চাইলে শহীদ হোসেন বলেন, এক সময় প্রতিটি ঈদেই বাবা-মার হাত ধরে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবি দেখতাম। তখন তো এমন অসংখ্য টিভি চ্যানেল বা বিনোদন কেন্দ্রের ছড়াছড়ি ছিল না। ছবি দেখাই ছিল সবচেয়ে বড় বিনোদন। সে সময় মধ্যবিত্ত বাঙালীর কম-বেশি ছবি দেখার একটি সংস্কৃতিও গড়ে উঠেছিল। আমি সেই সংস্কৃতিটাকে এখনও ধরে রাখার চেষ্টা করি। সব সময় না পারলেও প্রতি ঈদে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিনেমা দেখা হয়। সবাই মিলে ছবি দেখার বিষয়টা বেশ উপভোগ করি। বিরতিহীন আনন্দে কেটে যায় কয়েকটি ঘণ্টা। আজকে দেখব ‘মনে রেখো’ নামের ছবি।
এদিকে তরুণ প্রজন্মের অনেকেরই পছন্দের তালিকায় থাকে হলিউডের মুভি। ধানমন্ডি থেকে স্টার সিনেপ্লেক্সে ছবি দেখতে এসেছিলেন তেমনই তিন বন্ধু আনোয়ারুল ইসলাম, আরফান রহমান ও শামীম আহসান। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তিন ছাত্র দেখবেন এ্যাকশন মুভি ‘মিশন ইমপসিবল ফলআউট’। বন্ধুদের পক্ষে আরফান বললেন, এ্যাকশন ছবি দেখতে দারুণ লাগে। ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উত্তেজনায় ভরপুর রসদ থাকে। বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে ছবি দেখে ঈদ আনন্দের শতভাগ পুষিয়ে নেব।
এবারের ঈদ-উল-আজহায় মুক্তি পেয়েছে চারটি ঢাকাই ছবি। যদিও চার ছবির কোনটিকেই সুপার হিট বলা যাচ্ছে না। কারণ, কোন শোতেই প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ হচ্ছে না। হল মালিকরা আশা করছেন, নতুন সপ্তাহ থেকে দর্শকের উপযুক্ত সাড়া পাবে ছবিগুলো। এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহের স্বত্বাধিকারী ইফতেখার উদ্দীন নওশাদ জনকণ্ঠকে বলেন, শাকিব খান অভিনীত ‘ক্যাপ্টেন খান’ ছবিটি ভাল দর্শক টানার কথা থাকলেও তেমনটা হচ্ছে না। ছবির মেকিং, গান, চিত্রনাট্যসহ সবকিছু দেখে এটিকে দর্শক বিনোদনের জন্য উৎকৃষ্ট ছবি মনে হয়েছে। তবে কোরবানির ঈদের প্রথম তিন দিন লোকজন বিভিন্নভাবে ব্যস্ত থাকায় হয়ত সবাই হলে আসছেন না। আগামী সপ্তাহ থেকে এই মন্দা ভাবটা কেটে যাবে। লোকজন ঢাকায় ফেরার পাশাপাশি হলেও দর্শকের আগমন বাড়বে। নিজের প্রেক্ষাগৃহে চলমান ‘মনে রেখো’ ছবিটি প্রসঙ্গে বলেন, সিনেমাটি ভালই চলছে। হাউস ফুল না হলেও ঈদের শুরুর দিন থেকে প্রতিদিনই দর্শক বাড়ছে।
রাজধানীর টিকাটুলির অভিসার সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক খাইরুল কবির বলেন, আমাদের হলে চলছে ক্যাপ্টেন খান। আশা ছিল, ছবিটি দেখতে প্রচুর দর্শক সমাগম হবে। দর্শক এলেও সেটা আশানুরূপ হয়নি। আগামী সপ্তাহ থেকে হয়ত ছবিটি দর্শক টানবে। লোকজন ঢাকায় ফেরা শুরু করলে সহজাতভাবেই সিনেমা হলের দর্শকও বাড়বে।
ঈদের চার ছবির বৃত্তান্ত ॥ এবারের ঈদ বিনোদনে সিনেমাপ্রেমীদের উৎসব উদ্যাপনের সঙ্গী হয়েছে চারটি চলচ্চিত্র। এই চার ছবির মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭৬টি হলে মুক্তি পেয়েছে রোমান্টিক এ্যাকশন ধাঁচের ছবি ‘ক্যাপ্টেন খান’। ওয়াজেদ আলী সুমন নির্মিত চলচ্চিত্রটিতে শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন শবনম বুবলী। অন্য অভিনয়শিল্পীরা হলেন কলকাতার পায়েল মুখার্জি, সম্রাট, মিশা সওদাগর, বড়দা মিঠু, ডন, শিবা শানু, অমিত হাসান প্রমুখ। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন আলী আকরাম শুভ, হৃদয় খান ও কলকাতার আকাশ। গানগুলোর কোরিওগ্রাফি করেছেন আদিল শেখ।
হার্টবিট প্রডাকশনের ব্যানারে নির্মিত ‘মনে রেখো’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০টি সিনেমা হলে। ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত ছবিতে ঢাকাই ছবির হালের জনপ্রিয় নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন কলকাতার নায়ক বনি সেনগুপ্ত। অন্যান্য চরিত্রে রূপ দিয়েছেন মিশা সওদাগর, জয়ী, তুলিকা প্রমুখ
তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৫টি হলে মুক্তি পেয়েছে মাহিয়া মাহি ও সাইমন সাদিক অভিনীত ছবি ‘জান্নাত’। ছবিটি নির্মাণ করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
এদিকে সেন্সর বোর্ডের নানা ঝামেলা কাটিয়ে ঈদের ছবিতে যুক্ত হয়েছে জাজ মাল্টি মিডিয়া পরিবেশিত ‘বেপরোয়া’। ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে ঢাকার বাইরের মফস্বলের মাত্র একটি সিনেমা হলে। পরিবেশক সংস্থা বলছে, ঈদের দুই সপ্তাহ পর এটি চলবে সারা দেশে। কলকাতার পরিচালক রাজা চন্দ নির্মিত ছবিটিতে রোশানের বিপরীতে নায়িকা হয়েছেন ববি। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শহিদুল আলম সাচ্চু, কাজী হায়াৎ, কমল, রেবেকা, চিকন আলী প্রমুখ।