ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী প্রচারে তিন সিটি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৭ জুলাই ২০১৮

 নির্বাচনী প্রচারে তিন সিটি

মিনুর নেতৃত্বে বুলবুলের শোডাউন মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে প্রচারে এগিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে ধীরে ধীরে পাল্লা দিচ্ছে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। নির্বাচনের ক্ষণ যতই এগিয়ে আসছে ততই প্রচারে শক্তি বাড়াচ্ছে ঝিমিয়ে থাকা বুলবুল। ধানের শীষের এই প্রার্থীকে জেতাতে দলীয় নেতাকর্মীরা দেরিতে হলেও একাট্টা হতে শুরু করেছেন। ফলে আসন্ন এই নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছে বিএনপি। সোমবার কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মিজানুর রহমান মিনুর নেতৃত্বে হঠাৎ শোডাউন দিয়েছে বুলবুল। বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত ছিল রাজশাহী বিএনপি। রাজশাহীর শীর্ষ বিএনপি নেতাদের মান-অভিমান আর পারস্পরিক রেষারেষি সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে ফেলে দিয়েছিল খাদের কিনারায়। ভোটের মাঠে দলীর হেভিওয়েট নেতাদের নিজের প্রচারণায় নামানোই ছিল বুলবুলের প্রধান চ্যালেঞ্জ। তবে সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রাজশাহীতে এসে মিটিয়ে গেছেন সেই বিরোধ। ফলে অভিমান ভুলে একাট্টা হতে শুরু করেছে রাজশাহী জেলা ও নগর বিএনপির নেতারা। বুলবুলের হয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ধানের শীষে ভোট চাইছেন তারা। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অসম্পূর্ণ নগর ও জেলা কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল বিএনপিতে। দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় এ বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে সংশয়ে ছিলেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এরই মাঝে রাসিক মেয়র নির্বাচনে ধানের শীষের মনোনয়ন পান মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে বুলবুলের পাঁচ বছরে রাজশাহী মহানগরী উন্নয়ন বঞ্চিত হয়। উল্টো নগরীর সড়কগুলোর বেহাল দশা আর নাজুক নাগরিক সুবিধার কারণে বেশ চাপেই রয়েছেন এখনও। নির্বাচনী প্রচারে তাই বুলবুলের প্রচারণার মূল কথা ছিল নগরপিতা থাকাকালে তার দীর্ঘদিনের কারাবাস। পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে রাসিক নির্বাচনে জয়ের হাতিয়ার বানাতে চায় বুলবুলের কর্মী-সমর্থকরা। নির্বাচনে জিতে খালেদার মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করার ঘোষণাও দিয়েছে তারা। কিন্তু অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠায় জয়ের কৌশল নির্ধারণে ভাবনায় পড়তে হয় নীতি নির্ধারকদের। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে দিন দশেক আগে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গোপনে রাজশাহী সফর করেন। এ নিয়ে রাজশাহী বিএনপির প্রবীণ নেতা কবির হোসেনের বাড়িতে স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় রুদ্ধদ্বার বৈঠকও করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত বিরোধ মিটিয়ে গোপনে রাজশাহী ছাড়েন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি ও এ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২ সদস্য বিশিষ্ট নগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান দলের একাংশের নেতারা। বিশেষ করে রাজশাহী বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু এবং সাবেক সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফা বুলবুলের বিরোধিতায় নেমেছিলেন। বিক্ষুব্ধ হয়ে দলীয় কার্যালয়ে তালাও ঝুলিয়ে দেয় নেতাকর্মীরা। এই বিরোধ এখনও জ্বলছে তুষের আগুন হয়ে। জেলা ও নগর বিএনপিতেও তৈরি হয় দূরত্ব। তবে এসব কোন্দল ভুলে সিটি নির্বাচন ঘিরে ধীরে ধীরে একজোট হতে শুরু করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। আগামী ৩০ জুলাইয়ের সিটি নির্বাচন সামনে রেখে মাঠে নেমেছেন নেতাকর্মীরা। দলীয় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও কেন্দ্রীয় সদস্য এ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফার সঙ্গে এবার যোগ দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। জেলা ও নগর বিএনপির এ দুই শীর্ষ নেতার এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকটাই উজ্জ্বীবিত করছে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের। তবে প্রচারে এখনও অনেকটাই লিটনের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছেন বুলবুল। বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই কার্যত অবরুদ্ধ রাজশাহী নগর বিএনপি। রাজনৈতিক যে কোন কর্মসূচী পালিত হচ্ছে দলীয় কার্যালয়ে। রাস্তায় নামতে পারেননি নেতাকর্মীরা। এসব কারণেই কোনঠাসা হয়ে পড়ে বিএনপি। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন নেতারা। যদিও প্রায় ছয় মাস ধরেই এসব কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এখনও দাপুটে প্রচার চালাচ্ছেন নৌকা প্রতীকের এই প্রার্থী। তবে ধীরে ধীরে প্রচারে পাল্লা দিতে শুরু করেছেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন বলেন, এই নির্বাচন বিএনপির চেয়ারপার্সনের মুক্তির আন্দোলনেরই অংশ। রাজশাহী থেকেই শুরু হচ্ছে এই আন্দোলন। তাই নেতাকর্মীরা তাদের সর্বস্ব দিয়ে বুলবুলের প্রতীক ধানের শীষকে বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছে। তিনি দাবি করেন আর কোন কোন্দল নেই দলে। মাঠে সক্রিয় লিটন ॥ এদিকে সোমবার সকালে নগরীর বনপুকুর এলাকা থেকে দিনের গণসংযোগ শুরু করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এরপর কাদিরগঞ্জ, কাদিগরঞ্জ গ্রেটার রোড এলাকা, দড়িখরবনা ও নিউমার্কেট এলাকায় দুপুর পর্যন্ত গণসংযোগ করেন তিনি। এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বিএনপি এখন অপপ্রচারে নেমেছে। তিনি বলেন, মিথ্যাচার-অপপ্রচারের পুরনো খেলায় মেতেছে তারা। শুরু থেকেই মিথ্যাচার করে আসছে। খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি নির্বাচনের শেষ দিন পর্যন্ত এমন পরিবেশ বজায় থাকবে। বিকেল চারটার দিকে বিসিক শিল্প এলাকায় রাজশাহী সিল্ক মিলস্ লিঃ আয়োজিত নির্বাচনী সভায় অংশ নেন খায়রুজ্জামান লিটন। পরে বিকেল পাঁচটায় শালবাগান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দড়িখরবনা এলাকায় গণসংযোগ করেন তিনি। এ সময় তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে রাজশাহীকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান। হঠাৎ বুলবুলের শোডাউন ॥ এদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর ১০, ১১ ও ১৩ নম্বর এবং বিকেল থেকে ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। এ সময় বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাদিম মোস্তাফা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নগরে ব্যাপক শোডাউন করেন তারা। পরে গণসংযোগকালে বুলবুল অভিযোগ করেন, বিএনপির বিজয় নিশ্চিত জেনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে রাতের অন্ধকারে হামলা ও গ্রেফতার করছে। কাউন্সিলর পদে মাদক ব্যবসায়ী ॥ রাজশাহী অঞ্চলের চিহ্নিত ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে এবার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন ওরফে আলো (৪৯) নামের এ প্রার্থীকে নিয়ে ওয়ার্ডবাসীর মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আলোর বিরুদ্ধে নগরীর মতিহার থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১১টি মাদক মামলা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৮শ’ বোতল ফেনসিডিলসহ তাকে আটক করে মতিহার থানা পুলিশ। এছাড়া সে মতিহার থানার পুলিশের এএসআই সামিউল হত্যা মামলার প্রধান আসামি বলেও জানা গেছে। ২৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও সে। . বরিশালে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ দেশের ১২ সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে একমাত্র রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকেন। যদিও প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রংপুর সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অন্য দুই দলের প্রার্থীর চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকেন। রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বাদে, দেশের অন্য সব সিটি নির্বাচনের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে থাকে। এটা যেন এক ধরনের নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এবার বরিশাল সিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপির বাইরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মূল লড়াইয়ে চলে এসেছেন। ফলে বরিশালের নগর পিতা হওয়ার লড়াইয়ে আছেন তিনজন প্রার্থী। আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৩০ ওয়ার্ডের ১২৩ ভোটকেন্দ্রে ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে পাঁচ বছরের জন্য মেয়র ও কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে বেছে নেবেন। ৯৪ সাধারণ ও ৩৫ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর বাদে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন প্রার্থী। তারা হলেনÑ আওয়ামী লীগ মনোনীত সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ (নৌকা), বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ার (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব (হাতপাখা), জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস (লাঙ্গল), বাসদের ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী (মই), সিপিবির একে আজাদ (কাস্তে) ও জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী বশির আহমেদ ঝুনু (হরিন)। নির্বাচনে সাতজন মেয়র প্রার্থী থাকলেও মূল আলোচনায় রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন-আওয়ামী লীগের তরুণ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব। মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর জ্যেষ্ঠ পুত্র। নির্বাচনের অনেক আগ থেকেই রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ দলমত নির্বিশেষে গোটা নগরবাসীর কাছে একজন আস্থাভাজন ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। ফলশ্রুতিতে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দল থেকে শুরু করে নগরীর সাধারণ ভোটারদের জোরালো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি (সাদিক) মেয়র প্রার্থী হিসেবে নিজেকে জানান দিয়েছেন। প্রচার ও জনপ্রিয়তায় অন্য সব প্রার্থীর চেয়ে কয়েকগুণ এগিয়ে রয়েছেন নৌকার মাঝি তরুণ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র। এছাড়াও তিনি সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বরিশালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণকে হারিয়েছিলেন ১৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে। এর আগে আওয়ামী লীগ মনোনীত শওকত হোসেন হিরণ ২০০৮ সালে যখন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তখন দল সমর্থিত এবং বিদ্রোহী মিলিয়ে বিএনপির প্রার্থী ছিল তিনজন। তারপরেও হিরণকে বিজয়ী হতে বেগ পেতে হয়েছে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনে এখানে সবসময় ৪০ থেকে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় সঙ্গত কারণেই বরিশালকে বিএনপির ঘাঁটি বলা হয়। এসব সমীকরণে বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিএনপি বেশ খানিকটা এগিয়ে আছে বলে মনে করা হলেও এবারের নির্বাচন পুরোটাই ভিন্ন। বরিশালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রার্থী দিয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তাদের মনোনীত হাতপাখার প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব হেফাজত ইসলামের মহানগর কমিটির আমির। বিএনপির জন্য এটা চরম ঝুঁকি হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব প্রচারেও বিএনপির প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। বিগত ২-৩ বছরে দেশে যত নির্বাচন হয়েছে তার প্রায় সব ক’টিতেই অংশগ্রহণ করেছে দলটি। তাদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যাও ঈর্ষণীয়। সবমিলিয়ে ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে এখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে দলের প্রার্থী সৈয়দ মুফতি ফয়জুল করিম প্রায় ২৯ হাজার ভোট পেয়েছেন। বর্তমানে বরিশালে তাদের ৪০ থেকে ৪৫ হাজার ভোট রয়েছে। তাদের মতে, হাতপাখার প্রার্থী ওই পরিমাণ ভোট পেলে নির্বাচনে নতুন রেকর্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের যুক্তি বরিশালে মোট ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৭৫১ ভোট, আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণ পেয়েছিলেন ৬৬ হাজার ৭৪১ ভোট। এমতাবস্থায় আসন্ন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ৪০-৪৫ হাজার ভোট পেলে সব হিসাব উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনায় তারুণ্য ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সর্বস্তরের ভোটারদের কাছে আলোচনার অগ্রভাগে রয়েছেন নৌকার প্রার্থী তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে উন্নয়নের প্রতীক নৌকার পক্ষে ততই বেশি গণজোয়ারের সৃষ্টি হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মুখপাত্র মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, বরিশালে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থাকার কোন কারণ নেই। ইনশাল্লাহ বরিশালে শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, বিগত দিনে নগরীতে কি উন্নয়ন হয়েছে তা সবাই জানেন। তাই নগরীর উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীকে ৩০ জুলাইর নির্বাচনে নগরবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমদের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত করবেন বলে আমরা শতভাগ আশাবাদী। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি ১০টি অভিযোগ দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোঃ হেলাল উদ্দিন খান বলেন, এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ১০টির মতো লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে বেশিরভাগেই একে অপর প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। আবার মিছিল করা, হুমকি-ধমকি দেয়ার বিষয়টিও রয়েছে। তবে যাই হোক না কেন এর সত্যতা যাচাই করেই নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। তারা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছেন। জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীর গণসংযোগ ॥ জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস সোমবার সকাল থেকে থেমে থেমে আষাঢ়ের বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সরকারী দফতরে গণসংযোগ করেছেন। সকাল ১০টায় বরিশালের প্রধান ডাকঘর থেকে তিনি গণসংযোগ শুরু করেন। এরপর তিনি জেলা প্রশাসক দপ্তর, বরিশাল আইনজীবী সমিতি, ফজলুল হক এভিনিউ সড়ক, বগুড়া রোডের সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক ও নগরীর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেছেন। এ সময় লাঙ্গল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, নগরবাসী আমাকে তাদের মূল্যবান ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করলে নগর ভবন নয় এটা হবে সেবক ভবন। ইমামরা ঐক্যবদ্ধ হলে পরিবর্তন সম্ভব ॥ সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুব বলেছেন, ইমামরা হলেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতা। তাই আমি মনে করি ইমামরা ঐক্যবদ্ধ হলে সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব হবে। নগরীর স্টিমারঘাট জামে মসজিদে জাতীয় ইমাম সমিতির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইমামদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে নিজের জন্য সবার কাছে দোয়া চান। সরকারী জায়গায় অফিস স্থাপন করা যাবে না ॥ নির্বাচনী ক্যাম্প ও অফিস সরকারী জায়গায় বসানো যাবে না বলে জানিয়েছেন সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার হেলাল উদ্দিন খান। তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসন, আর সিটি কর্পোরেশন যার জায়গাই হোক না কেন সরকারী জায়গায় কোন প্রার্থী নির্বাচনী ক্যাম্প কিংবা দলীয় অফিস বসাতে পারবে না। এরই মধ্যে একটি সভার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং প্রার্থীদের রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েও দিয়েছেন। তিনি বলেন, খুব দ্রুত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে মাঠপর্যায়ে অভিযান শুরু করা হবে। সরকারী জায়গায় বসানো নির্বাচনী ক্যাম্প ও অফিস উচ্ছেদ করা হবে। আর যদি সরকারী জায়গা কারও নামে লিজ নেয়া থাকে, তবে সে লিজ কি কাজের জন্য দেয়া হয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী আচরণবিধি তদারকি করতে ১০ সদস্যর ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। অপরদিকে ৩০ জুলাই নির্বাচন কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিটার্নিং কর্মকর্তার অধীনে থাকবেন। তারা প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে আইনী সহায়তা দেবেন। . সিলেট সিটি নির্বাচনের উত্তাপ পুরো বিভাগে সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ জয়ের বিষয়ে সকল প্রার্থীই আশাবাদী। প্রধান দুইদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী নগরীর উন্নয়নে নিজেদের নানান পরিকল্পনার কথা নগরবাসীর কাছে তুলে ধরছেন। সিলেট সিটি নির্বাচনের উত্তাপ পুরো বিভাগ জুড়ে ছড়াচ্ছে। বিভাগের অপর তিন জেলা সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের অধিবাসীরাও নির্বাচনী তৎপরতায় সম্পৃক্ত হচ্ছেন। সিলেটে বসবাসরত অন্য তিন জেলার অধিবাসীদের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে নিজেদের আত্মীয় পরিজনদের স্বার্থে অনেকেই ছুটে এসেছেন সিলেট নগরীতে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থীর সমর্থনে তিন জেলার দলীয় নেতৃবৃন্দ নিজেদের প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারকাজে অংশ নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যে কারণে প্রচার অভিযানে ভিন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে প্রচারে নেমেছেন সিলেট বিভাগের নয়টি পৌরসভার মেয়রেরা। নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, সোবহানিঘাট, উপশহর, নয়াসড়ক, বারুতখানাসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালান মেয়রগণ। কামরানের নৌকা প্রতীকের প্রচারে অংশ নেন মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমদ, বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবু ইমাম কামরান চৌধুরী, কুলাউড়ার মেয়র শফি আলম ইউনুছ, বিয়ানীবাজারের মেয়র আব্দুস শুক্কুর, সুনামগঞ্জের মেয়র নাদের বখত, ছাতকের মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী, কানাইঘাটের মেয়র নিজাম উদ্দিন ও জকিগঞ্জের মেয়র খলিল উদ্দিন। নৌকা প্রতীকে মেয়র পদে কামরানের পক্ষে প্রচারে অংশ নেয়া মেয়র ফজলুর রহমান বলেন, ‘নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে আমরা মাঠে নেমেছি। উন্নয়ন চাইলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। আমরা বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরব’। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেছেন, নৌকা বঙ্গবন্ধুর প্রতীক, স্বাধীনতার প্রতীক, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতীক। দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই। এবার সিলেটের মানুষ নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তুলেছেন। নেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী আমাদেরকে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নৌকার জন্য ভোট চেয়ে মানুষের ভালবাসা অর্জন করতে হবে। তিনি আগামী ৩০ জুলাই সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটের মাধ্যমে নৌকা ও কামরানকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। তিনি সোমবার ২০ ও ২১ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও নৌকা মার্কার সমর্থনে গণসংযোগকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সাংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, ছমর উদ্দিন মানিক, মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ প্রমুখ। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. তৌফিক রহমান চৌধুরীর উদ্যোগে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সমর্থনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বেলা দেড়টায় মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এম হাবিবুর রহমান লাইব্রেরি হলে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আমানত হিসেবে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। এই প্রতীকের সম্মান রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের। ৩০ জুলাইয়ের ভোটে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে হবে।’ সোমবার সকালে নগরীর বন্দরবাজার, লালবাজার গলির মুখ, বারুতখানা, জেলরোড, ধোপাদিঘীরপাড়, পৌর বিপণি এলাকায় গণসংযোগ শেষে মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘যেখানেই যাচ্ছি নগরবাসীর কাছ থেকে নৌকা প্রতীকের পক্ষে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাচ্ছি, তাই বিজয়ের বিষয়ে আমরা দৃঢ় আশাবাদী।’ এ সময় তিনি ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি সকলে দোয়া ও নৌকা প্রতীকে ভোট চান। এলাকাবাসীও তাকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। কামরান আরও বলেন- সুন্দর, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রচারসহ নির্বাচনী সকল কার্যক্রম চলছে। বিশেষ করে নৌকার সমর্থকরা সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে নগরবাসীর কাছে ভোট ও দোয়া চাচ্ছেন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে মেয়র পদপ্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বন্দরবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন পার্টির নেতৃবৃন্দ। গণসংযোগকালে নেতৃবৃন্দ বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নৌকা প্রতীকের সমর্থনে গণসংযোগ করেছেন সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক, সংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। নগরীর বারুতখানা, লালবাজার, বন্দরবাজার, কোর্টপয়েন্ট এলকায় গণসংযোগ করেন নেতৃবৃন্দ। আরিফুল হক চৌধুরী ॥ সিলেটে আদালত এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ করেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিশ দলীয় জোট সমর্থিত এবং বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। সোমবার দুপুরে আদালত এলাকায় আইনজীবী এবং বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী গণসংযোগের সময় বলেন, ‘আপনাদের ভালবাসাই হৃদয়ে সাহসের সৃষ্টি করে এবং এর মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে প্রেরণা লাভ করি। মানুষের ভালবাসাই আমাকে বিজয়ের মুকুট পরাবে। অতীতে যেভাবে আপনারা আমার জন্য কাজ করেছেন এবারও সে পরিমাণ কাজ করবেন বলে আমার প্রত্যাশা।’ গণসংযোগের সময় উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট নূরুল হক, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকীব, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট জেলার সভাপতি এ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ উদ্দিন প্রমুখ। প্রচার শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ-পিরিস্থিতি ঠিক আছে। তবে কোন ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয় কী না এ নিয়ে মানুষের মনে নানা আশঙ্কা বিরাজ করছে। নির্বাচন কমিশনকে কেন্দ্রগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, এটা করতে পারলে অতীতের মতো শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং বিপুল ভোটে ধানের শীষ বিজয়ী হবে। মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর সমর্থনে সিলেট জেলা রেস্তরাঁ শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী সাধারণ মানুষের উন্নয়নে কাজ করেছেন। খেটে খাওয়া মানুষের জীবনমান উন্নয়নই সমাজের উন্নয়ন এই দর্শনে বিশ্বাস করেন আরিফুল হক চৌধুরী। নগরীর উন্নয়নের স্বার্থেই আরিফুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করতে হবে। জনগণের হৃদয়ের ভাষা যিনি বোঝেন তিনিই সবার আপন। সভায় শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ধানের শীষের পক্ষে একাত্মতা পোষণ করেন এবং নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বদরুজ্জামান সেলিম ॥ নাগরিক কমিটি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী, বদরুজ্জামান সেলিম বলেছেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সিলেট নগরীকে শান্তির নগরীতে পরিণত করতে চাই। নগরীতে অপরিকল্পিত কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও অতীতে নগরীতে সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে তেমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বাস প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করলে আমি আপনাদের সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত নগরী উপহার দিব। তিনি সোমবার সকাল থেকে দিনভর আম্বরখানাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে পৃথক গণসংযোগ ও মতবিনিময় কালে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে এসব কথা বলেন। তিনি নগরীর আদালত পাড়ায় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ লালাসহ সিলেটের শীর্ষ আইনজীবীদের সঙ্গে গণসংযোগ করেন ও বাস প্রতীকের বিজয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান। এ সময় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক শোয়েব আহমদসহ ২৭টি ওয়ার্ডের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
×