নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ৩১ ডিসেম্বর ॥ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের যানজট হচ্ছে টাঙ্গাইল শহর। বৈধ ইজিবাইকের দুইগুণ বেশি অবৈধ ইজিবাইক এবং এর বাইরেও প্রায় দেড় হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চলছে। ফলে শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে প্রতিদিনই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শহরবাসীর। পৌরসভার পক্ষ থেকে বিজয় দিবসের পরেই যানজট নিরসন এবং অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিক্সার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও ডিসেম্বর মাস শেষ হলেও এর কোন প্রকার প্রতিকার হচ্ছে না। যার কারণে প্রতিনিয়ত নাকাল দুর্ভোগে টাঙ্গাইল শহরবাসী। ইজিবাইক মালিক শ্রমিকদের সংগঠনের কারণে এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারছে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
টাঙ্গাইল পৌরসভা সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল শহরে চলাচলের জন্য পৌরসভা থেকে তিন হাজার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। কোন ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার লাইসেন্স দেয়া হয়নি। জেলার ট্রাফিক পুলিশ সূত্র এবং পৌরসভা কর্তৃপক্ষের মতে বাস্তবে শহরে এখন আট থেকে নয় হাজার ইজিবাইক এবং প্রায় দেড় হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চলছে। এই বিপুল সংখ্যক অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিক্সার চাপে প্রতিটি সড়কেই যানজট হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলে বেশ কয়েকটি ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিক্সার দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০টি ইজিবাইক ও অটোরিক্সা বিক্রি হচ্ছে। যার বেশিরভাগই শহরের রাস্তায় নামছে। দীর্ঘ সময় লেগে যায় জট ছাড়তে। সেখান থেকে এগুবার পর কুমুদিনী কলেজ মোড়ে জটে আটকা থাকতে হয়। এই জট পেরিয়ে পলাশতলী মোড় থেকে আবার যানজট পুরাতন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। যানজটের কারণে মাত্র পাঁচশত গজ রাস্তা পেরোতে হয় ১৫ মিনিটে। যানজটের কারণে কোথাও থেমে, কোথাও ধীরগতিতে দশ মিনিটে শহরের প্রাণকেন্দ্র নিরালার মোড়ে। নতুন বাস টার্মিনাল থেকে দুই কিলোমিটার রাস্তা স্বাভাবিক অবস্থায় দশ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। অথচ এই পথটুকু যেতে ৪০ মিনিট সময় লাগল। শহরের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইজিবাইকের জট লেগেই থাকে। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা যায় না। শহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা এলেন মল্লিক জানান, শহরের মেইন রোডের কোয়ার্টার কিলোমিটার পাড়ি দিতে ২০/২৫ মিনিট সময় লেগে যায়। ইজিবাইকের কারণে শহরের রাস্তাগুলো অচল হয়ে যাচ্ছে। এই যানজটের কারণে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়। কোদালিয়া এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান মিয়া জানান, যানজটের কারণে অনেক সময় ছেলেমেয়েদের ক্লাস বা পরীক্ষার হলে সময়মতো নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।
টাঙ্গাইল পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ সাইফুজ্জামান খান সোহেল জানান, পৌরসভায় প্রায় তিন হাজার বৈধ ইজিবাইক রয়েছে। এগুলোকে জোড়-বেজোড় নম্বর অনুযায়ী ভাগ করে দুই শিফটে চালানোর ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিক্সার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে বাঁধা আসে।
টাঙ্গাইল জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনি জানান, পৌরসভা ইজিবাইকের অতিরিক্ত লাইসেন্স দিয়েছে, এখন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। উল্টো দোষারোপ করছে শ্রমিকদের। টাঙ্গাইলের ট্রাফিক পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, ইজিবাইকের কারণে শহরে যানজট হচ্ছে।
এ জট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পৌরসভা কর্তৃক লাইসেন্স দেয়া ইজিবাইকগুলো দুই শিফটে চালানোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরণ জানান, দ্রুতই যানজট নিরসন এবং অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিক্সার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।