শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীতে প্রায় এগারো ঘণ্টার ব্যবধানে দুই জোড়া খুন সংঘটিত হওয়ার পর পুলিশ খুবই দ্রুতগতিতে দুই জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হওয়ার ঘটনাটি আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে কৃতিত্ব ও প্রশংসা অর্জন করেছে বলে পুলিশের দাবি। সর্বনাশা পরকীয়ার কারণে বাবা-মেয়ে জোড়া খুনের ঘটনায় দুটি পরিবারের স্বপ্ন চিরতরে ভেঙ্গে অন্ধকার নেমে এসেছে। আর মা-ছেলে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়ে সংসার বাঁচাতে গিয়ে সংসার ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বাবা-মেয়ে জোড়া খুনের ঘটনায় পরকীয়ার নায়িকা আরজিনা বেগম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে এবং পরকীয়া প্রেমিক শাহীন মল্লিককে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অপরদিকে ধনাঢ্য আবদুল করিমের তৃতীয় স্ত্রী মুক্তার সংসার বাঁচাতে গিয়ে তার ভাই জনি করিমের প্রথম স্ত্রীর মা-ছেলে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়ে সংসার বাঁচানোর পরিবর্তে সংসারের ধ্বংস টেনে এনেছে। মুক্তার ভাই জনিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের সঙ্গে পুলিশ ও র্যাব সূত্রে এ খবর জানা গেছে।তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, রাজধানীর বাড্ডায় সাবলেট প্রেমিক শাহীন মল্লিক তার নিজের স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও গভীরভাবে ভালবেসে ফেলেন নিহত জামাল শেখের স্ত্রী আরজিনা বেগমকে। আরজিনা বেগম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে তাদের পরকীয়া ও তার স্বামী এবং মেয়েকে হত্যার নির্মম কাহিনী বর্ণনা করেছেন। নিজের স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও শাহীন মল্লিক সাবলেট থাকা অবস্থায় আরজিনা বেগমকে ভালবেসে সংসার গড়ারও স্বপ্ন দেখে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় আরজিনার স্বামী শেখ জামাল। স্বামীকে চিরতরে সরিয়ে দেবার জন্য প্রেমিকের সঙ্গে পরামর্শ করে আরজিনা। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বুধবার রাতে ঘুমন্ত জামাল শেখকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে শাহীন। কিন্তু হত্যার দৃশ্য দেখে ফেলে আরজিনার মেয়ে নুসরাত। বাবাকে হত্যার সময়ে আর্তনাদে ঘুম ভেঙ্গে যায় নুসরাতের। সে তখন চিৎকার করে বলতে থাকে বাবাকে মারছ কেন বলে চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে থাকে। খুনের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাবে আশঙ্কায় শাহীন প্রেমিকা আরজিনার স্বামীর সঙ্গে তার মেয়ে নুসরাতকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যাকা-ের সময় পাশেই ছিল আরজিনা বেগম। কি নিষ্ঠুর দৃশ্য ! সর্বনাশা পরকীয়া !
আদালতে এভাবেই স্বামী শেখ জামাল ও মেয়ে নুসরাত হত্যাকা-ের বর্ণনা দিলেন নুসরাতের মা আরজিনা বেগম। জবানবন্দী প্রদান শেষে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে আরজিনা বেগমকে। অপরদিকে আরজিনা বেগমের প্রেমিক শাহীন মল্লিককে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য বাড্ডা থানা পুলিশ শনিবার ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
প্রসঙ্গত গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ময়নারবাগের ৩০৬/পাঠানভিলার তৃতীয় তলায় ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় বাবা জামিল শেখ (৩৮) ও মেয়ে নুসরাত জাহানের মরদেহ।
ধনসম্পত্তির বিরোধে মা-ছেলে জোড়া খুনের ঘটনা ॥ রাজধানীর কাকরাইলে চলচ্চিত্র প্রযোজক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শেখ মোঃ আব্দুল করিমের তৃতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার মুক্তার ছোট ভাই আল আমিন জনি খুন করেছে করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার ও ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম শাওনকে। শনিবার গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর থানার মালাদিয়া গ্রাম থেকে জনিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে মা-ছেলে জোড়া খুনের ঘটনা বর্ণনা করেছে জনি। জিজ্ঞাসাবাদে জনি বলে, তার বোন মুক্তাকে চার বছর আগে আবদুল করিম বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাকে নয়াপল্টনে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতে দেন করিম। ওই ফ্ল্যাটে তাদের মা ও তার ৭ বছরের মেয়ে থাকত। বছর দুয়েক পর করিমের প্রথম স্ত্রী তার বোনকে বিয়ে করার ঘটনা জানতে পারেন। এরপর থেকে পারিবারিক কোন্দল শুরু হয়। আব্দুল করিমের সমুদয় সম্পত্তি শামসুন্নহারের নামে। এসব নিয়ে তার বোনের সঙ্গে শামসুন্নাহারের বিরোধ শুরু হয়। করিমের সঙ্গেও এসব নিয়ে শামসুন্নাহারের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। বিরোধ এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে শামসুন্নাহারের চাপে তার বোনকে তালাক দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন করিম। এ ঘটনায় তার বোন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। পরে তার বোনের সংসার টেকানোর জন্য শামসুন্নহারকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় জনি। পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ হলে তারা জানান, রাজধানীর বাড্ডা ও রমনা থানাধীন এলাকায় মাত্র এগারো ঘণ্টার ব্যবধানে মা-ছেলে ও বাবা-মেয়ে দুই জোড়া খুন সংঘটিত হওয়ার পর মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার আলোচনা হয়। কিন্তু দ্রুত গতিতে দুই জোড়া খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে খুনীদের গ্রেফতার করার ঘটনাটি কৃতিত্ব ও প্রশংসা বয়ে এনেছে বলে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তাদের দাবি।