কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ তিস্তার পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে দিল্লীর সঙ্গে বেজিংকেও যুক্ত করতে চায় ঢাকা। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার পানিপ্রবাহ ঠিক করতে চীনকে যুক্ত করলে আরও সহজে পানি সমস্যার সমাধান হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফর সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এসব তথ্য জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভারতের টেলিগ্রাফ ও আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফর সামনে রেখে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনার লক্ষ্যে আজ শুক্রবার ঢাকায় আসছেন ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত।
সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে বর্তমানে ভারতের ছয় সাংবাদিক ঢাকা সফর করছেন। এই সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই মতবিনিময়ে এইচটি ইমাম ভারতীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, তিস্তায় পানির প্রবাহ যাতে ঠিক থাকে, তার জন্য বেজিংয়ের সঙ্গেও কথা বলাটা প্রয়োজন। তিস্তা এবং ব্রহ্মপুত্রের উচ্চ অববাহিকায় পানির প্রবাহ নিয়ে আলোচনার জন্য আমরা চীনের সঙ্গে কথা বলতে পারি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম জানিয়েছেন, ভারত প্রায়ই অভিযোগ করে, চীন ব্রহ্মপুত্রে ইচ্ছেমতো ব্যারাজ তৈরি করায় নিম্ন অববাহিকায় পানির পরিমাণ কমেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেছেন, এ নিয়ে জট ছাড়াতে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনায় চীনকেও শামিল করা যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করেন ইমাম। বিষয়টিকে তার ‘ব্যক্তিগত মত’ বলে উল্লেখ করলেও তিনি জানান, বাংলাদেশ নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে। বিষয়টি একদিকে যেমন অভিনব, অন্যদিকে তেমনই তাৎপর্যপূর্ণ। সামরিক ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে ঢাকার ক্রমঘনিষ্ঠতা নিয়ে নয়াদিল্লীর অস্বস্তি কোন লুকোনো বিষয় নয়। বাংলাদেশে চীনের বিপুল লগ্নিও দিল্লীর কপালে ভাঁজ ফেলেছে। প্রশ্ন উঠেছে এমন একটি সময়ে তিস্তার মতো একান্ত দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের আলোচনায় বেজিংকে জড়ানোর প্রস্তাব কেন দেয়া হলো? এটা কি শেখ হাসিনার সফরের আগে ভারতকে চাপে ফেলার নয়া কৌশল? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে আশাবাদী ঢাকা। উপদেষ্টার আশা, দিল্লীতে মমতা নিশ্চয়ই হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন। কিন্তু তার মধ্যেও চীনকে টেনে তিস্তা নিয়ে চাপ রেখেছে ঢাকা।
ব্রহ্মপুত্রে চীন বাঁধ দিয়ে পানি টেনে নিচ্ছে, গোড়ায় এ রকম সন্দেহ থাকলেও পরে ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে যে এই সন্দেহ অমূলক। ব্রহ্মপুত্রের পানিতে ‘রান অন দ্য রিভার’ প্রকল্প করছে চীন। অর্থাৎ পানিস্রোতকে না-আটকে টারবাইনের মাধ্যমে ছোট ছোট পানি বিদ্যুত প্রকল্প তৈরি করছে তারা। এর ফলে নিম্ন অববাহিকায় থাকা দেশগুলোর জল পেতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
পদ্মা সেতু থেকে সামরিক সহযোগিতাÑ সবক্ষেত্রে চীনের সাহায্যের কথা ঢাকার বিশাল বিশাল সরকারী বিল বোর্ডে শোভা পাচ্ছে। তবে বেজিং ও নয়াদিল্লীর তুলনামূলক আলোচনায় (অন্তত ভারতীয় সাংবাদিকদের সামনে) বাংলাদেশের সরকারী কর্তারা ভারতকেই এগিয়ে রাখছেন। তারা বুঝছেন এখনই তিস্তা চুক্তি সই করার মতো পরিস্থিতি হয়নি। তিস্তা ব্যারাজের মানোন্নয়নের বিষয়টি যে হাসিনার সফরে গুরুত্ব পাবে, তা স্পষ্ট করেছেন বাংলাদেশের নেতৃত্ব। গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের প্রাথমিক সমীক্ষার ফল নিয়ে কথা হবে বলেও জানান হাসিনার অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা মশিউর রহমান।