ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

চলতি মাসেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক

জঙ্গীবাদে উস্কানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৮ মার্চ ২০১৭

জঙ্গীবাদে উস্কানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আপত্তিকর কনটেন্টের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে চলতি মাসেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ, বিদেশ থেকে পরিচালিত ব্লগ ও ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নিয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকার লা মেরিডিয়ান হোটেলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ : সাইবার অপরাধ, নিরাপদ ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালা উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ কথা বলেন। কমনওয়েলথ টেলিযোগাযোগ সংস্থার (সিটিও) উদ্যোগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসির সহযোগিতায় এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। কর্মশালায় সিটিও মহাসচিব শোলা টেইলর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আহসান হাবিব খান। কর্মশালায় দেশের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মোবাইল ফোন ও টেলিযোগাযোগ অপারেটরদের প্রতিনিধি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসির কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছেন। দুই দিনব্যাপী এ কর্মশালায় নয়টি সেশন অনুষ্ঠিত হবে। আজ বুধবার কর্মশালা গোটা দিন কর্মশালা চলবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হলিম বলেন, ফেসবুক কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে এর আগে সফল আলোচনা হয়েছে। তারা এখন আমাদের তথ্য দিতে শুরু করেছে। আমরা আপত্তি তোলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফেসবুক সাড়া দিচ্ছে। বেশ কয়েক উগ্র জঙ্গীগোষ্ঠীর সাইট তারা বন্ধ করে দিয়েছে। ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আবার আমরা এসব বিষয় নিয়ে ফেসবুক কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে বসব। ফেসবুকের অনুবাদকও রয়েছে। তারা আপত্তিকর কনটেন্টটা কি তা জানেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফেসবুক ও গুগলের সঙ্গে এর আগে যে আলোচনা হয়েছে, সেখানে ফেসবুক আমাদের কথা মেনে নিয়েছে। উগ্রবাদ-জঙ্গীবাদ ছড়ানো ফেসবুক আইডিগুলোর বেশির ভাগই ফেইক বা ভুয়া। এই ভুয়া আইডি চিহ্নিত করা একটু সমস্যা। এই ভুয়া আইডিগুলোর ইউআরএল পাঠাতে হয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে। ফেইক বা ভুয়া আইডি পর্যন্ত পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে তাদের। ফলে অনেক ভুয়া আইডি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে অপপ্রচার চলছেই। তাদের চিহ্নিত না করতে পারলে আইনও প্রয়োগ করাও যাচ্ছে না। এ বিষয়গুলো সমাধান করতে মাচের মধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেসবুকের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক হয় সরকারের তিন মন্ত্রীর। বৈঠকের আলোচনার সূত্র ধরে গত বছরের জানুয়ারিতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে ফেসবুকের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক করি। ওই বৈঠকে বলা হয়েছিল ঢাকায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষের একটি অফিস করার জন্য। কিন্তু পরে তারা ঢাকায় অফিস না করে আমাদের যে সব সমস্যা হচ্ছে তার সমাধান দিতে রাজি হয়। এর আগে ফেসবুকের কাছে তথ্য চেয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে ফেসবুক কর্র্তৃপক্ষ সরকারের চাওয়া অনুযায়ী, উগ্রবাদ ছড়ানোয় সন্দেহভাজন ব্যবহারকারীদের তথ্য সরকারকে সরবরাহ করে যাচ্ছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ইন্টারনেটে অনাকাক্সিক্ষত বিষয় নিয়ে তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিকার করছে। আমরা ফেসবুক কর্র্তৃপক্ষকে বলেছি, আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ আছে। স্পর্শকাতর অনেক বিষয় রয়েছে। আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ, কাজেই এই বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখে তাদের (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সামাজিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এই নীতিমালায় প্রতিটি দেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন তদারকি সেল রাখার কথা উল্লেখ করেন তারানা হালিম। ডিজিটাল অগ্রগতির সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তায় বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন। এখানে বিনিয়োগ করলে দেশই লাভবান হবে। সাইবার নিরাপত্তার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রতিবছর ৪শ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি খরচ করছে। ইন্টারনেট গোটা বিশ্ব এক ছাতার নিচে নিয়ে এসেছে। এখন এটাকে নিরাপদ রাখতে হবে। এই মহাসড়ক নিরাপদ রেখে সাইবার ক্রাইমের মোকাবেলা করতে হবে। কর্মশালায় ‘সেফটি অন ইন্টারনেট’ শীর্ষক অধিবেশনে সাইবার নিরাপত্তায় বিভিন্ন সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করা জন্য আহবান জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
×