ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান নেই ৯ মাস

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৫ মার্চ ২০১৭

শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান নেই ৯ মাস

বিকাশ দত্ত ॥ শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালে নয় মাস ধরে চেয়ারম্যান পদটি শূন্য রয়েছে। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে সমস্ত মামলার বিচারিক কর্মকা-। নতুন করে আরও ৫ শতাধিক মামলা জটে পড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েকশ’ বিচারপ্রার্থী শ্রমিক ও মালিক পক্ষ। শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুল হুদা গত বছরের ৭ জুলাই অবসরে যাওয়ার পর এ পদটি শূন্য হয়। উল্লেখ্য, আইন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গত ১১ জানুয়ারি বিচারপতি আব্দুল হাইকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়ার পর এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। একইসঙ্গে বিধিমালা বা অর্গানোগ্রাম ছাড়াই চলছে শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালে গত জুলাই থেকে প্রায় তিন শতাধিক আপীল দায়ের হয়েছে, যার একটিও গ্রহণের বিষয়ে আদেশ পাওয়া যায়নি। এছাড়া পাঁচ শতাধিক আপীল মামলা রয়েছে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। ট্রাইব্যুনালের একজন সদস্য রয়েছেন তিনি পুরাতন বদলি মামলা শুনানি করছেন। এর পরও মামলাজটে ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েক হাজার বিচারপ্রার্থী। একটি সূত্র জানায়, শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালে একজন চেয়ারম্যান ও একজন সদস্য থাকার কথা। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কোন আপীলের নিষ্পত্তিসহ বিভিন্ন শুনানি গ্রহণ করা হয়। এখন মাত্র একজন সদস্য রয়েছেন। ফলে ট্রাইব্যুনাল একেবারেই স্থবির হয়ে পড়েছে। ১১ জানুয়ারি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাকিলা জেরিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরারব শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয়ে চিঠি প্রদান করেন। ঐ চিঠিতে বলা হয়, প্রজ্ঞাপন নং ৫.১৩২.০১৯.০০.০১৭.২০১৩.৬১৯ তারিখ ২ জুলাই ২০১৬। উপযুক্ত বিষয়ে সূত্রে বর্ণিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতি মোঃ শামছুল হুদার চুক্তির মেয়াদ সর্বশেষ এক বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হয়। তার চুক্তির মেয়াদ ৫-৭-২০১৬ তারিখে শেষ হওয়ার পর ৬-৭-২০১৬ তারিখ থেকে পদটি শূন্য রয়েছে। শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হলে উক্ত মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অপসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোঃ আব্দুল হাইকে যোগদানের তারিখ হতে দুই বছরের জন্য শ্রম আপীলেট ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ২১৮ উপধারা (৩) অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান সুপ্রীমকোর্টে কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক অথবা অতিরিক্ত বিচারক হবেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঐ চিঠি দেয়ার পরও শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে বিচারপ্রার্থীগণ নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছে। সূত্র জানায়, ১৯৭০ সালে শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি (সদস্য) ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তি। ১৯৮৬ সালে ধানম-ি থেকে রাজধানীর ২৫-২৬ পুরানা পল্টন লেনে আবাসিক এলাকায় স্থানান্তর করা হয় শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনাল। বর্তমান ঠিকানা ৪৩ কাকরাইলের আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম রোডে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন করা হয়। পদ সৃষ্টি করা হয় একজন চেয়ারম্যান ও একজন সদস্যের। শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, শ্রম আইন ২০০৬ দীর্ঘদিন পূর্বে প্রণীত হলেও অদ্যাবধি এই আইনের কোন বিধিমালা হয় নেই। তাই জরুরী বিধিমালা প্রণয়ন করা একান্ত আবশ্যক। এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও সদস্য কীভাবে কাজ করবেন তা আজও নির্ধারণ করা হয়নি। এতে স্বাভাবিক বিচারকাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, সাবেক চেয়ারম্যান একটি খসড়া বিধিমালা তৈরি করে শ্রম মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন। শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে জনবল চেয়ে একাধিকবার চিঠি দেয়া হলেও তার কোন উত্তর মেলেটি। শ্রম আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হয় ট্রাইব্যুনালে। বিভিন্ন কর্পোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকরা তাদের পাওনা অর্থ আদায় করতে বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে সংক্ষুব্ধরা এসব মামলা করে থাকেন। রাজধানীসহ তিনটি বিভাগীয় শহরে সাতটি শ্রম আদালত (লেবার কোর্ট) রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় তিনটি, চট্টগ্রামে দুটি, খুলনায় একটি ও রাজশাহীতে একটি। এই সাতটি আদালতের কাজ তদারকির দায়িত্ব আপীলেট ট্রাইব্যুনালের। গত বছরে শ্রম ট্রাইব্যুনালসহ দেশের আরও ছয়টি শ্রম আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে ৪৫২। আর নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৭৩। আপীল ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে সাতটি শ্রম আদালত রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ১ম শ্রম আদালতে মোট মামলা দায়ের হয়েছে ১৬৮, নিষ্পত্তি হয়েছে ২১০। ঢাকার দ্বিতীয় শ্রম আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে ১২৩, নিষ্পত্তি হয়েছে ৯৪। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে ৮৭টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ২৪০। চট্টগ্রাম ১ম শ্রম আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে ১৪, নিষ্পত্তি হয়েছে ৪১। চট্টগ্রাম ২য় শ্রম আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে ১৩, নিষ্পত্তি হয়েছে ১১। খুলনা বিভাগীয় শ্রম আদালতে মামলা হয়েছে ২৫, নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৪। রাজশাহী বিভাগীয় শ্রম আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে দুটি। শ্রম আদালতগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এই উদ্দেশ্যে যেন শ্রমিকদের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হয় এবং শ্রম আদালতগুলোর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের জন্য শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শ্রম আইন ২০০৬ প্রণীত হওয়ার পর থেকে ট্রাইব্যুনালে আপীল বিভাগের বিচারতিদেরই নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। শ্রম আইন ২০০৬-এর ২১৭ ধারা মোতাবেক শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনাল রায় চূড়ান্ত করে থাকে।
×