ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

নাসিক নির্বাচনে বিশ্ঙ্খৃলা বরদাশত করা হবে না ॥ সিইসি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

নাসিক নির্বাচনে বিশ্ঙ্খৃলা বরদাশত করা হবে না ॥ সিইসি

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) নির্বাচনে আর মাত্র ৬ দিন বাকি। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের লিফলেট বিলি, গণসংযোগ, উঠোন বৈঠকসহ নানামুখী প্রচারে নির্বাচনী মাঠ পুরোপুরি সরগম হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া ২০১ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনে কোন রকমের বিশৃঙ্খলা বরদাশ্ত করা হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যা কিছু করা দরকার তা করবে ইসি। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডাঃ আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ সিদ্ধান্ত যা নেয়ার নিয়ে ফেলেছে, কাকে ভোট দিবেন, কোন ভয় শঙ্কা কাজ করবে না। বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অবাধ করতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান। এদিকে ডাঃ আইভী বিকেলে বন্দরে ২৩নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। অপরদিকে সাখাওয়াত হোসেন খান বিকেলে নগরীর ১৫ ও ১৬নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। ডাঃ আইভী ও সাখাওয়াতের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতারাও বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ। জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়ার সঞ্চালনায় অন্যদের বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার মইনুল হক, বিজিবির ৩৯ ব্যাটালিয়নের প্রধান লে. কর্নেল শামীম ইফতেখার, র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) কামরুল হাসান, আইভী ও সাখাওয়াত হোসেন খানসহ ৭ মেয়র প্রার্থী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- নির্বাচন কশিনার মোঃ আব্দুল মোবারক, মোঃ আবু হাফিজ, মোঃ শাহনেওয়াজ, সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীগণ। কোন রকমের বিশৃঙ্খলা বরদাশ্ত করা হবে না- কাজী রকিবউদ্দীন ॥ নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে সিটি নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ বলেন, ভোট কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সব সময় মেনটেন করতে হবে। শুধু ভোটের দিন নয় তার আগের দিন থেকে আমাদের মালপত্র (নির্বাচনী আসবাবপত্র) ভোট কেন্দ্র পৌঁছার পর থেকে সারারাত পাহারা দিতে হবে। নির্বাচনে কোন রকমের বিশৃঙ্খলা আমরা বরদাশ্ত করব না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমার নির্দেশ তারা যেন দুষ্কৃতিকারীদের দুষ্কৃতিকারীই মনে করেন। তারা কোন প্রার্থীর সমর্থক নন। প্রার্থীদের বক্তব্যের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এখানে সবাই বলেছেন, তারা কেউ মারামারির পক্ষে নন, হানাহানির পক্ষে নন। কাজেই যারা দুষ্কর্ম করবে তাদের যথাযথ শাস্তির বিধান করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা কোন ছাড় দেব না। তিনি বলেন, নির্বাচনী ফিল্ডে ২৭ মোবাইল কোর্টে কাজ করছেন। প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হবে। নির্বাচনের দু’দিন আগ থেকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য কোন ছাড় দেয়া হবে না। পুলিশসহ কোন অন্য শান্তিরক্ষা বাহিনীর প্রতি আমার নির্দেশ নির্বাচনী কর্মকা-ে অন্যান্য কর্মকর্তাদের মতো আপনারাও সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে আইন মোতাবেক দায়িত্ব পালন করুন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আপনাদের নির্বাচনী প্রচার পর্যবেক্ষণ থেকে আমি আশাবাদী আপনারা ইচ্ছা করলেই এই নির্বাচনকে সমগ্র বাংলাদেশের জন্য একটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবেন। এই নির্বাচনকে আমরা অনেক গুরুত্ব দিচ্ছি। এ কারণে আমরা সবাই এখানে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যা করার তা করা হবে। সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমরা মোতায়েন করব।’ রিটার্নিং অফিসার ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে অভিযোগ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা ঢালাও অভিযোগ করবেন না। সুনির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দেবেন। যাতে আমরা আইন মোতাবেক দ্রুত প্রতিকার করতে পারি। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা শান্তিপূর্ণ থাকবে বলে প্রার্থীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলার সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা আছেন। আমি তাদের নির্দেশ দিচ্ছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন কাকে ভোট দিবেনÑ আইভী ॥ মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, গত নির্বাচনে আমিও আপনার (সাখাওয়াতের) মতো শঙ্কায় ছিলাম। সরকার দলীয় হয়েও আমি নাগরিক কমিটির প্রার্থী ছিলাম, সে সময় সরকার একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছিল। নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারে পাল্টে গিয়েছিল। সরকার যাকে সমর্থন দিয়েছিল সেখানেও কোন কমপ্রোমাইজ করা হয়নি। সুতরাং আমি ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবরের নির্বাচনকে স্মরণ রেখে আমি বলতে চাই, সারা বাংলাদেশে সেটা আলোচিত হয়েছিল প্রশংসিত হয়েছিল, আমি জিতেছিলাম বলে তাই নয়, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছিল, নারায়ণগঞ্জের মানুষ নির্বিঘেœ ভোট দিয়েছিল। আমি তদ্রƒপভাবে বলতে চাই, আমি যদিও সরকারী দলের প্রার্থী, আমার প্রতীক নৌকা, বিগত ৫ বছর আমি কাজ করেছি প্রতিকূল পরিবেশে। এখানে যারা উপস্থিত আছেন সবাই জানেন, কী ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে আমাকে কাজ করতে হয়েছে। এখনও প্রতিকূলতা পার হতে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি উদ্দেশ্যে করে আইভী বলেন, আপনাদের বলব, আপনারা এমন একটা নির্বাচন উপহার দেন, যাতে সরকার কোন বিতর্কিত না হয়। যদিও প্রতীক দেয়া হয়েছে, নৌকা বা ধানের শীষ বা যে কেন প্রতীক দেয়া হয়েছে, মানুষ কিন্তু স্থানীয়ভাবে নেতা নির্বাচন করে। মানুষ যাকে পছন্দ করে তাকে ভোট দেবে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ অলরেডি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কাকে ভোট দেবে। এখানে কোন ভয় শঙ্কা কাজ করবে না। আমার কি কোন বাহিনী আছে? আমি কি কোন সন্ত্রাসী লালন করি? আমি কি আপনাদের কারও গায়ে হাত দিতে পারি? তিনি আরও বলেন, কোন পোলিং এজেন্ট নিয়ে যে শঙ্কা উনি (সাখাওয়াত) প্রকাশ করলেন সেই শঙ্কা যেন মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আমি কারও কোন ফেভার নিয়ে নির্বাচন করতে চাই না। অসম্ভব ধরনের আস্থা ও বিশ্বাস নারায়ণগঞ্জের জনগণের প্রতি আমার আছে। সেনা মোতায়েনের দাবি সাখাওয়াতের ॥ বিএনপির মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান মতবিনিময় সভায় বলেন, মানুষের মধ্যে একটা শঙ্কা দেখেছি, তাদের যেন প্রভাব বিস্তার করা না হয়। ভোটারদের যাতে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধার সৃষ্টি করা না হয়। তাদের যাতে কোন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করা না হয়, তারা যাতে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে সেটা নিশ্চিত করা হয়। তিনি বলেন, এখানে যারা বক্তব্য রেখেছেন তাদের সবাই বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা শান্তিপূর্ণ রাখা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সে গুরুত্ব বিবেচনা করে এই পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের মতো একটি জায়গায় সুষ্ঠু, সুন্দর ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে এখানে মোতায়েন করবেন, সেটার জোর দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অনেক শক্তিশালী, সেই আইনটি প্রয়োগ করার স্বদিচ্ছা এখন নির্বাচন কমিশনের। তিনি আরও বলেন, গণসংযোগ করার সময় মানুষ আমাদের প্রশ্ন করেছে যে তারা কি নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে? পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে? মানুষ, এই আশঙ্কার নিশ্চয়তা চায়। তাই জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আগে ভাগে পোলিং এজেন্টের নাম জমা দিতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার বিরোধিতা করে সাখাওয়াত বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি, পোলিং এজেন্টের নাম আগে জমা দিলে তারা চিহ্নিত হয়ে যান। তাদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি-ধমকি দেয়া হয় এবং গ্রেফতারের ভয় দেখানো হয়। সেজন্য আমরা পোলিং এজেন্টদের নাম নির্বাচনের দিন জমা দেয়ার কথা বলছি। ভোটের দিন কোন পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দিলে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। আইভীর গণসংযোগ ॥ বিকেলে আইভী ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বন্দরের নবীগঞ্জ, বাগেজান্নাত, কদমরসুল, কবিরের মোড়, হাটের ঘাট, ইস্পাহানী ও একরামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তার সঙ্গে স্থানীয় শত শত নারী-পুরুষ যোগ দেয় এবং ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। অনেকেই এ সময় আইভীর হাতে ফুলের তৈরি নৌকা তুলে দেন। আইভী এ সময় ভোটাদের নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। এ সময় আইভী আপার মার্কা ‘নৌকা’ ‘নৌকা’ বলে নানা সেøাগান দেয়। গণসংযোগকালে ওই এলাকার ভোটারদের বেশ উৎফুল্ল দেখা গেছে। সাখাওয়াতের গণসংযোগ ॥ সাখাওয়াত হোসেন সকালে নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সনাতন পাল লেন, পালপাড়া, নয়ামাটি এলাকায় গণসংযোগ করেন। বিকেলে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেওভোগ, বাবুরাইল, পাক্কা রোডসহ বিভিন্ন জায়গায় গণসংযোগ করেন। এ সময় উন্নয়নের না প্রতিশ্রুতি দেন। লাইসেন্সধারী অস্ত্র মালিকদের চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে আগামী ১৯ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ দিন নির্বাচনী এলাকায় সকল প্রকার লাইসেন্সধারী বৈধ অস্ত্র মালিকদের অস্ত্রসহ চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। বৃহস্পতিবার রাতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করেছেন বলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ এবং নিরপেক্ষ করার স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী এ আদেশ প্রদান করেছেন। আগামী ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এবং সরকারী ও আধা-সরকারী এবং বেসরকারী বিভিন্ন দফতর, প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাতে নিয়োজিত নিরাপত্তা প্রহরী এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাব্বী মিঞা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করেন, আদেশ লঙ্ঘনকারীদো বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×