ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত কমিটি গঠন

বাঁচানো গেল না বঙ্গবাহাদুরকে, বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৭ আগস্ট ২০১৬

বাঁচানো গেল না বঙ্গবাহাদুরকে, বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

আজিজুর রহমান ডল, সরিষাবাড়ী থেকে ফিরে ॥ বহু চেষ্টার পরও বাঁচানো গেল না বঙ্গবাহাদুরকে। উদ্ধারকারীদের চেতনানাশক ওষুধে দ্বিতীয় দফায় অচেতন হয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় সরিষাবাড়ী উপজেলার সোনাকান্দর গ্রামের ফসলি জমির মাঠে হাতিটি মারা গেছে। এদিকে হাতিটির মৃত্যু মানতে পারছেন না স্থানীয়রা। তারা উদ্ধারকারীদের শাস্তির দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। বিক্ষুব্ধদের রোষানল থেকে মুক্তি পেতে উদ্ধারকারীদের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। তবে বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক ও স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে কক্সবাজার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম মৃত হাতিটির সুরতহাল রিপোর্ট ও প্রাথমিক ময়নাতদন্ত শেষে হাতিটিকে ঘটনাস্থলেই সমাহিত করে। ভারতের অসম রাজ্যের শিশুমারা পাহাড়ী এলাকা থেকে ২৮ জুন দলছুট হয়ে বুনো হাতিটি বন্যার পানিতে বাংলাদেশে ভেসে আসে। এর পর হাতিটি বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা তীরবর্তী বিভিন্ন চরে দাপিয়ে বেড়ায়। ওই হাতিটি সিরাজগঞ্জের ছিন্নারচরে অবস্থানকালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা অঞ্চল ঢাকার বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিকের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি হাতি উদ্ধার দল ২০ জুলাই ছিন্নারচরে আসে। তারা একাধারে সাত দিন ছিন্নারচরে অবস্থান করে স্থানীয় পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং হাতিটির গতিবিধি ও স্বভাব-চরিত্র পর্যবেক্ষণ করে ঢাকায় ফিরে যান। এর পর বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিকের নেতৃতে প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ঢাকা অঞ্চলের ১৭ সদস্যের একটি উদ্ধার দল সরিষাবাড়ীতে এসে হাতিটিকে উদ্ধার করতে ৩০ জুলাই আবারও মাঠে নামে। সেদিন থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় দফার উদ্ধার তৎপরতা। বুনো হাতিটি উদ্ধারের জন্য ৩ আগস্ট বুধবার বিকেলে বাংলাদেশে আসেন ভারতের তিনজন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ। এর পর বাংলাদেশ ও ভারতীয় উদ্ধার দল যৌথভাবে হাতিটি উদ্ধারের জন্য সরিষাবাড়ীর ইজারাপাড়া এবং ভাটিয়ানী এলাকায় পরপর দু’দিন চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ভারতীয় দল হাতি উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে নিজ দেশে ফিরে যায়। ১১ আগস্ট বাংলাদেশের উদ্ধারকর্মীরা ট্রাঙ্কুলাইজারগান দিয়ে মেটাল ডার্টে শূট করে জাইলাজিন ও কেটামিন নামক চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করেন। ওই সময় হাতিটি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে হাতিটি কয়রা গ্রামের মনু ম-লের বাড়ির পাশে কচুরিপানাযুক্ত গভীর পানিতে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে। হাতিটির পা, গলা ও শুঁড় বেঁধে টেনে প্রায় এক শ’ মিটার দূরে ডাঙ্গায় তোলা হয়। পরে উদ্ধারকারীরা হাতিটির পেছনের দুই পা বেঁধে ফেলে এবং হাতিটিকে দুটি বৃহৎ আমগাছের সঙ্গে আটকে রাখে। এর ১০ ঘণ্টা পর হাতিটি চেতনা ফিরে পেয়ে কিছুটা সুস্থ হয়েই ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। এ ঘটনার তিন দিন পর ১৪ আগস্ট হাতিটি পায়ের রশি ছিঁড়ে দৌড়ে পাশর্^বর্তী সোনাকান্দর গ্রামের ফসলি জমির মাঠে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। এর পর ট্রাঙ্কুলাইজারগান দিয়ে মেটাল ডার্টের মাধ্যমে পরপর চারটি শূট করে দ্বিতীয় দফায় হাতিটিকে অচেতন করা হয়। এর পর হাতিটি আর চেতনা ফিরে পায়নি। অবশেষে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় তার মৃত্যু হয়। সোনাকান্দর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয়দের চোখ-মুখে বিষণœতার ছাপ। কয়রা গ্রামের মিনহাজ উদ্দিন উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, উদ্ধারকারী দলের অদক্ষতা ও গাফিলতির কারণেই হাতিটি মারা গেছে। একই সময় বুনো হাতিটি উদ্ধারের নামে হত্যার অভিযোগে দুই শতাশিক দর্শনার্থী বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। বিক্ষুব্ধরা উদ্ধারের নামে হাতিটিকে হত্যার অভিযোগ করেন এবং তারা উদ্ধারকারী দলের সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এদিকে সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
×