জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আল বদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ বহাল থাকায় পাবনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বক্তারা নিজামীর দ্রুত ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানান। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো।
পাবনা ॥ আল বদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ বহালের সংবাদে পাবনায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ মুক্তিযোদ্ধারা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে। নিজামীর এ রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে এক আনন্দ মিছিল বের করা হয়। আনন্দ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়ে এক সভায় মিলিত হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল রহিম লালের সভাপতিত্বে অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধী নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের দাবিতে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা শহীদুল্লাহ, বৈরাম খা, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রুহুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক, ছাত্রলীগ নেতা ডাবলু, রাফেল প্রমুখ। সভা শেষে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। নিজামীর এলাকা সাঁথিয়াতেও ছাত্রলীগের উদ্যোগে আনন্দ মিছিল হয়েছে। উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক স্বপনের নেতৃত্বে এ মিছিলে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেন।
অন্যদিকে সাঁথিয়ার মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকসহ শহীদ পরিবারের সন্তানরা কুখ্যাত রাজাকার নিজামীর লাশ সাঁথিয়াতে কবর না দেয়ার দাবি তুলেছেন। তাদের দাবি উপেক্ষা করে এ রাজাকারের লাশ সাঁথিয়ায় আনা হলে তা প্রতিহত করা হবে বলেও তারা হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলাম মাস্টার এ ব্যাপারে জানিয়েছেন, নিজামীর লাশ সাঁথিয়াতে দাফন করতে দেয়া হবে না। ’৭১ সালের ১৪ মে প্রায় ৮শ জনকে পাকিস্তানী সেনারা হত্যা করে। এছাড়া অর্ধ শতাধিক নারীকে ধর্ষণ করে। একই সঙ্গে পাবনা জেলা স্কুলের তৎকালীন শিক্ষক মাওলানা কসিম উদ্দিনকে ৪ জুন ধরে নিয়ে নিজামীর উপস্থিতিতে নূরপূরস্থ আর্মি ক্যাম্পে নির্মম নির্যাতন করা হয়। পরে ১০ জুন তাকে হত্যার পর শহরের ইছামতি নদীর পারে তার লাশ ফেলে রাখা হয়।
মামলার অপর সাক্ষী জামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, মতিউর রহমান নিজামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ১৭ নবেম্বর সাঁথিয়ার ধুলাউরি গ্রামে ৩০ জনকে হত্যা করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার জানিয়েছেন, তার নেতৃত্বে ৩ ডিসেম্বর বেড়ার হিন্দু অধ্যুষিত বৃশালিখা গ্রামে প্রায় ৭০ জনকে হত্যা করা হয়। শহীদনগর ডাব বাগানেও তার মদদে পাক সেনার হামলা চালায় সেখানেও শত শত মুক্তিকামী জনতাকে হত্যা করা হয়।
চট্টগ্রাম ॥ মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল থাকায় বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই মিছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে গণজাগরণ মঞ্চ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। আদেশে ফাঁসির দ- বহাল থাকায় তারা স্বস্তি প্রকাশ করেন এবং যত দ্রুত সম্ভব দ- কার্যকর করার দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার সকালেই গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা নগরীর চেরাগি পাহাড় মোড়ে জমায়েত হন। রায় ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেখান থেকে বের করা হয় আনন্দ মিছিল। মিছিলে নেতৃত্ব দেন গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডাঃ চন্দন দাশ ও সমন্বয়কারী শরীফ চৌহান। মিছিলটি আন্দরকিল্লা মোড় ঘুরে পুনরায় চেরাগী চত্বরে এসে শেষ হয়। সেখানে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা বলেন, নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় ফাঁসির দ- কার্যকরে আর কোন বাধা নেই। আমরা অতি দ্রুত রায় কার্যকর দেখতে চাই। রায় ঘোষিত হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডার মোঃ সাহাবউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় একটি সমাবেশ। এতে বক্তারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদের মতো যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করেছিলেন। স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়ে এ জাতিকে কলঙ্কিত করা হয়েছিল। চূড়ান্ত রায়ে নিজামীর ফাঁসির দ- বহাল থাকায় এ জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।
রাজশাহী ॥ আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে বিশাল আনন্দ মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আবারও দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন। এ সময় থেকে তারা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকরের দাবি জানান।