ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বৈচিত্র্যময় পরিবেশনায় শেষ হলো বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

বৈচিত্র্যময় পরিবেশনায় শেষ হলো বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক উৎসবে উঠে এলো সারা বাংলার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি। উপস্থাপিত হলো এই ভূখ-ের হাজার বছরের শিল্প-সংস্কৃতির গৌরবগাথা। এক আঙিনায় দেখা মিলল ৬৪ জেলার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যময় রকমারি পরিবেশনা। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে শিল্প-সংস্কৃতির আলো ছড়ানোর প্রত্যয়ে শেষ হলো বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে পয়লা জানুয়ারি থেকে শুরু হয় এ উৎসব। ৬৪ জেলা শিল্পকলা একাডেমির অংশগ্রহণে সৃজনশীল বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দিল উৎসবটি। আবহমান বাংলার শেকড়ের গভীরে প্রোথিত শিল্প-সংস্কৃতিকে মেলে ধরার আয়োজনে পরিবেশিত হলো সম্মেলক সঙ্গীত, সমবেত নৃত্য, একক সঙ্গীত, আবৃত্তি ও অভিনয়। সেই সঙ্গে ছিল প্রতিটি জেলার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিশেষ পরিবেশনা। ১৮ দিনব্যাপী চলমান বর্ণময় ও বিশাল এ অনুষ্ঠানমালার ইতি ঘটল সোমবার। এদিন বিকেলে উৎসব আঙিনা একাডেমির নন্দন মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী আয়োজন। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী। সম্মেলক কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু বলেন, বাঙালীর হাজার বছরের জাতিসত্তার ধারক হচ্ছে সংস্কৃতি। তাই গণমানুষের দেশজ সংস্কৃতির পথই হচ্ছে দেশের পথরেখা। তিনি আরও বলেন, দেশের প্রতি শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের মমত্ববোধ অনেক বেশি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অনেক সময় রাজনীতিবিদরা দাঁড়াতে ভয় পেলেও শিল্পীরা কখনই ভয় পায় না। সভাপতির বক্তব্যে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, এই উৎসবের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলার সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করা হয়েছে এক আয়োজনে। তৃণমূলের শিল্প-সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করা হলো কেন্দ্রে। তাই এটি শুধু একটি উৎসব নয়, সাংস্কৃতিক আন্দোলনও। আগামীতে এই ধারাবাহিকতায় ৪৮৯টি উপজেলার শিল্প-সংস্কৃতিকেও উপস্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত শিল্পকলা একাডেমি তাঁর স্বপ্নকে ধারণ ও বাস্তবানের লক্ষ্যে কাজ করছে নিরন্তর। সমাপনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় পরিবেশনা পর্ব। সমাপনী পরিবেশনায় অংশ নেয় চট্টগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, বরিশাল ও ঢাকা জেলা শিল্পকলা একাডেমি। প্রথমেই মঞ্চে আসে বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি। নদীমাতৃক জেলাটির পরিবেশনায় উঠে আসে নদীর প্রতি অনুরাগের বয়ান। অনেক কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে শোনায়- মোরা নদীর দেশের মানুষ ভাইরে নদীতে গান গাই...। গান গাইয়া আমার মনরে বুঝাই গানের সুরে পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য। একক কণ্ঠে গান মোনান জহুরুল হাসান। যুগলবন্দী সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নেন মুরাদুজ্জামান খান ও মালিহা আক্তার মুনা। সব শেষে পরিবেশিত হয় বরিশালের ঐতিহ্যবাহী বিশেষ পরিবেশনা রয়ানী গান। ঠাকুরগাঁও জেলা শিল্পকলা একাডেমি পরিবেশিত সম্মেলক গানগুলোর শিরোনাম ছিল- হামার গাঁও ঠাকুরগাঁও, ও আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি/শুনেছি তাদের কথা। রিমঝিম শুধু রিমঝিম ও রাঙামাটি লাল দোপাটি পলাশ বনের ধারে গানের সুরে পরিবেশিত হয় শিশুশিল্পীদের সমবেত নৃত্য। এ দলের শেষ উপস্থাপনা ছিল জেলার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনা টুঙ্গিপাড়ার সেই দামাল ছেলে/বঙ্গবন্ধু তুমি জন্মেছিলে...। চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি পরিবেশনার শুরুতে শিশুশিল্পীরা গেয়ে শোনায়- বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রীস্টান, বাংলার মুসলমান গানটি। এছাড়াও পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য, নজরুলসঙ্গীত, লোক নৃত্য ও চট্টগ্রামের লোক গান। সব শেষে ছিল জেলার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনা ‘ও ভাই আঁরা চাটগাঁইয়া নওজোয়ান’। ঢাকা জেলা শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেন শামীম আরা নীপা ও শিবলী মোহাম্মদ এবং নৃত্যাঞ্চলের শিল্পীবৃন্দ। সমীর বাউলের গাওয়া নাও ছাড়িয়া দে গানের সুরে নাচ করে নৃত্যাঞ্চলের শিল্পীরা। চলচ্চিত্র উৎসবের পঞ্চম দিনে ৪৭ ছবির প্রদর্শনী ॥ ‘বেটার ফ্লিম, বেটার অডিয়েন্স, বেটার সোসাইটি’ সেøাগানে চলা রেইনবো ফ্লিম সোসাইটি আয়োজিত ১৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পঞ্চম দিন ছিল সোমবার। এদিন রাজধানীর ৫টি ভেন্যুতে প্রদর্শিত হয় ৪৭টি চলচ্চিত্র। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে দেখানো হয় ৫টি ছবি। সিনেমা অব দি ওয়ার্ল্ড বিভাগে প্রদর্শিত হয় সুইজারল্যান্ডের ‘আনলাকি হিরোস (সুইজারস হেলডেন)’, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ‘সল্ট ব্রিজ’, যুক্তরাজ্য ও ইরানের ‘দি এডিট’ ও ইউএই, কাতার ও লেবাননের ‘চ্যাম্প অব দি ক্যাম্প’, তাজাখস্তানের ‘তাশফিয়া’। সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে দেখানো হয় ২২টি চলচ্চিত্র। প্রদর্শিত হয় আলবেনিয়ার ‘ওয়ান আই সাট’, অস্ট্রেলিয়ার ‘লং ওয়ে ডাউন’ ও ‘সিমোরাজ (দি ফোনিক্স), অস্ট্রিয়ার ‘কেচাপ কিড’, বাহরাইনের ‘রেইনবো’, বেলজিয়ামের ‘জেনী’ ও ‘ডি ভলয়েড’, চীনের ‘ক্লাউড এ্যান্ড মাড’, কিউবা ও ভেনিজুয়েলার ‘আনফিয়াবো’, ফ্রান্সের ‘লা শ্যালে ডি’এটেন্ট’, জার্মানির ‘দি হেভি লোড’, গ্রীসের ‘রেড হাল্ক’ ও পর্তুগালের ‘আগুয়া পারা টাবাটো (ওয়াটার টাবাটো)’, ইরানের ‘পিটিএসডি ১১’ ও ‘ইট হিটস আপন দি রুফ’, ইতালির ‘সেক্সি শপিং’, কসোভোর ‘সোনাটা’ ও ‘আনটোল্ড স্টোরি’, লাটভিয়ার ‘এ লিটল লংগার’, লুক্সেমবার্গের ‘অ্যান্টিনিও’, নেপালের ‘বন্ডেড লেবার’ ও ফিলিপিন্সের ‘কনসেনশিয়া’। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের (পাবলিক লাইব্রেরি) শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে দেখানো হয় ৮টি চলচ্চিত্র। চিলড্রেন বিভাগে দেখানো হয় ইরানের ছবি ‘দি এসকেপ ফ্রম দি ক্যাসেল’, অস্ট্রেলেশিয়া বিভাগে নেপালের ‘ট্রান্ডারো’, ইরাকের ‘দি সাইলেন্স অব দি শেপার্ড’, নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নরডিক বিভাগে বাংলাদেশের ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ ও ভারতের ‘দি থার্ড আই’, কানাডার ‘নো এ্যান্ড’, গ্রিসের ‘রেইনবো স্ট্রিট’ ও ফিনল্যান্ডের ‘মাই টার্ন’। ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে ৭টি চলচ্চিত্র দেখানো হয়। আজ মঙ্গলবার উৎসবের ষষ্ঠ দিন ৫টি ভেন্যুতে প্রদর্শিত হবে ৪০টি চলচ্চিত্র ।
×