বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশ বাংলায় করে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) পরিচালনায় একটি আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি আইন ২০১৫’-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এদিকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত নেপালে সহায়তা দিতে বিদেশী ত্রাণবাহী বিমান বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষে আইনটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গত বছরের ৩১ মার্চ মন্ত্রিসভায় আইনটির খসড়া উপস্থাপিত হলে মন্ত্রিসভা কিছু অনুশাসন দিয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল।
১৯৮৬ সালের অধ্যাদেশ দিয়ে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড বা বার্ড গঠন করা হয়। উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী দুটি সামরিক শাসনামলে জারি করা সকল অধ্যাদেশ অবৈধ। জনগুরুত্বপূর্ণ আইনগুলোর বৈধতা দিতে এগুলো যুগোপযোগীসহ মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এজন্য এ আইনটি মন্ত্রিসভায় নিয়ে এসেছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ।
পল্লী উন্নয়ন একাডেমি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান অধিকতর প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা ভোগ করে। এজন্য আইনটি পাসের জন্য সংসদে যাবে।
একাডেমি একটি বোর্ডের অধীনে পরিচালতি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বোর্ডের চেয়ারম্যান হবে। তিনি সময় দিতে না পারলে ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং তিনিও না পারলে উপমন্ত্রী থাকলে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বোর্ডের সদস্য সচিব আর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১৮ সদস্যের বোর্ড গঠিত হবে। মহাপরিচালক বোর্ডের প্রধান নির্বাহী হবেন। প্রশিক্ষণ ও গবেষণা নিয়ে কাজ করে পল্লী উন্নয়ন বোর্ড।
বৈঠকে ‘১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জারিকৃত কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরকরণ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১৩’-এর তফসিল থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের উপযোজন (এ্যাপ্রোপ্রিয়েশন) বিষয়ক পাঁচটি অধ্যাদেশ বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উপযোজন (প্রজাতন্ত্রের তহবিল থেকে অর্থ খরচের ক্ষমতা) অধ্যাদেশগুলো একটা সময়ে বাজেটের জন্য জারি করা হয়েছিল। উপযোগিতা না থাকায় এখন আর এগুলো আইনে পরিণত করার আবশ্যকতা নেই, এজন্য অধ্যাদেশগুলো বাতিল করা হলো। গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির ঘটনোত্তর অনুমোদনও দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠকে সৌদি সরকারের সঙ্গে ‘এ্যাগ্রিমেন্ট অন ডমেস্টিক সার্ভিস ওয়ার্কার্স রিক্রুটমেন্ট বিটুইন দ্য গবর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ এ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য কিংডম অব সৌদি এ্যারাবিয়া’ শীর্ষক স্বাক্ষরিত চুক্তির অনুমোদন দেয়া হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের ইন্দোনেশিয়া সফর সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
নেপালের ভূমিকম্প ॥ এদিকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত নেপালে সহায়তা দিতে বিদেশী ত্রাণবাহী বিমান বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। ওই বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ট্রানজিট সুবিধার মাধ্যমে বিদেশী ত্রাণবাহী বিমান বাংলাদেশে নেমে নেপালে ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে পারবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম নেপালে ভূমিকম্পের বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে নেপালে ত্রাণবাহী বিমান অবতরণে সমস্যা হচ্ছে। ত্রাণ পরিবহনে বিমানের বাংলাদেশে ট্রানজিটের সুযোগ দিলে তাদের সুবিধা হতো। ত্রাণবাহী বিমানের বাংলাদেশে ট্রানজিটের সুযোগ দেয়ার জন্য প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বলে উপস্থিত ওই মন্ত্রী জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া দ্বিতীয় রাষ্ট্র নেপাল। নেপালকে সহায়তা দিতে যে কোন দেশের ত্রাণবাহী বিমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, তেজগাঁও বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের দেশেও ভূমিকম্প হতে পারে। তাই ভূমিকম্প মোকাবেলায় আমাদের সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। ভূমিকম্পপরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত শনিবার নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে। কেন্দ্রস্থলে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৯। ওই ঘটনায় নেপালে এ পর্যন্ত সোমবার দুপুর পর্যন্ত ৩ হাজার ৭০০ লোকের প্রাণহানি ও সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি লোক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গৃহহীন হয়েছে প্রায় ৬৬ লাখ লোক।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ থেকে নেপালে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের সমন্বয়ে ৩০ সদস্যের একটি দল ভূমিকম্পে আহতদের চিকিৎসা দিতে দ্রুত নেপালে যাচ্ছে বলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।