ফিরোজ মান্না ॥ জনশক্তি রফতানির বাজার চাঙ্গা করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ বছর নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ জন্য বাংলাদেশের পুরনো শ্রমবাজারগুলোতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। সম্প্রতি সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে নতুন বাজারের সন্ধান চালিয়ে যাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েকটি টিম কাজ করবে। এ বছর ৬ লাখের বেশি কর্মীকে বিদেশ চাকরি নিয়ে যাওয়ার টার্গেট ধরা হয়েছে। টার্গেট পূরণে মন্ত্রণালয় বছরের শুরু থেকেই কাজ শুরু করেছে। মন্ত্রণালয় আশা করছে, বেশ কয়েকটি দেশে নতুন বাজার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন বাজার সৃষ্টি হলে জনশক্তি রফতানির হার গত বছরের তুলনায় অনেক বাড়বে। গত বছর দেশ থেকে চাকরি নিয়ে বিদেশ গেছেন ৪ লাখ ১৮ হাজার ৪৪৯ জন, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ হাজারের মতো কম।
সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, জর্দানসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশই বাংলাদেশের জনশক্তির পুরনো শ্রমবাজার। এসব দেশে জনশক্তি রফতানি মাঝখানে অনেক কমে গিয়েছিল। এখন আবার এই বাজারগুলো চাঙ্গা করতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে নানা উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। যাতে বাজারগুলোতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। বেশ কয়েকটি দেশ কর্মী নিয়োগের জন্য প্রস্তাবও দিয়েছে। ঠিক কোন কোন দেশ কর্মী নিয়োগ করবে তা বলা হয়নি। তবে মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করেছে পুরনো শ্রমবাজারগুলো চাঙ্গা করার কাজ শুরু হয়েছে। এই বাজারগুলো চাঙ্গা হলে কর্মী নিয়োগ গত বছরের তুলনায অনেক বেড়ে যাবে। পুরনো বাজারগুলোতে কর্মীর প্রয়োজন থাকলেও তারা নানা কারণে কর্মী রফতানিকারক বেশ কয়েকটি দেশ থেকে নিয়োগ বন্ধ রেখেছিল। তবে এটা সাময়িক। বন্ধ থাকা বাজারগুলো থেকেই কর্মী নিয়োগের বেশি প্রস্তাব আসছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে প্রস্তাব রয়েছে। সৌদি আরবে জনশক্তি বন্ধ না হলেও সেখানে গত কয়েক বছর ধরে কর্মী নিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ থেকে কয়েক লাখ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। কিছু শর্ত সাপেক্ষে কর্মী নিয়োগ করতে চায় দেশটি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করবে বলে জানানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইতালি, সাইপ্রাস, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে জনশক্তি রফতানির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবও বিপুলসংখ্যক শ্রমিক নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। পুরনো এসব শ্রমবাজারের পাশাপাশি জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধির হার ধরে রাখতে নতুন শ্রমবাজারের সন্ধানেও কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সরকার। ২০০৯ সালে যেখানে এদেশ থেকে ১৩২টি দেশে শ্রমশক্তি রফতানি হতো সেখানে এখন ১৬২টি দেশে রফতানি হচ্ছে। এসব নতুন দেশের মধ্যে ভুটান, সিসিলি, সোয়াজিল্যান্ড, ঘানা ও জাম্বিয়ার জনশক্তি নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। সাইপ্রাস ও যুক্তরাজ্যে রেস্তরাঁয় কাজের দক্ষ কর্মীর ব্যাপক চাহিদা আছে। সেসব দেশে সরকার বাংলাদেশী দক্ষ কর্মী পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এ কারণে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে দক্ষতা উন্নয়ন তহবিলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কর্মী রফতানি চালু হলে এ দু’টি দেশে কয়েক হাজার কর্মী নিয়োগ হতে পারে। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও শ্রমিক পাঠানোর চেষ্টা করছে সরকার। নিউজিল্যান্ডে মূলত কৃষিভিত্তিক কাজের জন্য কর্মী পাঠানো হবে। ইতালিতে মৌসুমী কর্মী নিয়োগের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে বেশ আগেই। তবে ইতালিতে মৌসুমী কর্মী গিয়ে ফিরে না আসায় দেশটির কর্তৃপক্ষ দুই বছর মোসুমী কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছিল। বর্তমানে ইতালিতেও মৌসুমী কর্মী নিয়োগের অনুমতি মিলেছে।
এদিকে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র জানিয়েছে, সরকার চলতি বছরের শুরু থেকেই জনশক্তি রফতানি বাড়ানোর কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। জিটুজি পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠানোর অংশ হিসেবে প্রতিমাসেই মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পুরনো বাজার হিসেবে সৌদি আরবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল প্রতিমাসেই সফর করবে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে সৌদি আরবের একটি প্রতিনিধিদল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ওই আলোচনার পর মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলোচনা সফল হয়েছে। সৌদিতে অচিরেই লোক নিয়োগ শুরু হতে পারে। বাংলাদেশের লোক পাঠানোর ধরন পাল্টানোয় সৌদি প্রতিনিধিদল খুশি। কারণ জনশক্তি রফতানিকারদের মাধ্যমে একজন কর্মীকে সৌদি যেতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। কিন্তু সরকারের নতুন নিয়মে এই খরচ অর্ধেকের কমে নিয়ে আসা হয়েছে। জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে খরচ কমানোর জন্য কর্মী নিয়োগকারী দেশগুলো আগে থেকেই বলে আসছিল।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন সম্প্রতি বলেছেন, জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে পুরনো ও নতুন বাজারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে পুরনো বাজারগুলো থেকেই কর্মী নিয়োগের আগ্রহ দেখানো হয়েছে।
মন্ত্রণায় সূত্র জানিয়েছে, গত বছর সৌদি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ইতিবাচক বৈঠকে হয়েছে। তবে তারা বাংলাদেশ থেকে কত সংখ্যক লোক নিয়োগ করবে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে নানা কারণে এই বাজার বন্ধ ছিল। সৌদি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে বাজারটির বিষয়ে একটি ‘পজেটিভ’ মনোভাব তৈরি হয়েছে। এটি বন্ধের পিছনে নানা বিষয় কাজ করেছে। বাজারটি খুলে গেলে দেশের বিপুল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান হবে।