লিখি, এর চেয়ে বড় সত্য নেই। কেন লিখি, কার জন্য, লেখা ও কথার দায় মেনে চলা— এসব নানা চিন্তা পেখম মেলে মনের কোণে। যুগের বেদনা বয়ে চলতে চলতে একদিন আলো এসেছিল সদ্য গোঁফের রেখা ওঠা কোন এক তরুণের চোখে, আর সেই থেকে সে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয় কোন এক মৌনমুখর বেলার গান। নিজস্ব ধোঁয়াশা শাদা পরচুল দিয়ে ঢেকে দিতে দিতে একদিন সেই ফাগুনের সন্তান আবিষ্কার করেছিল সবচেয়ে বড় সত্য অন্ধকার— আসলে একান্তই আপেক্ষিক! আর কবিতা, সে তো এক অতলান্তের ভ্রমণ। সেই ভ্রমণে কী সব ভাবনাচিত্র উড়ে আসে অকস্মাৎ অদ্ভুত আবেগে কী সব শব্দ হয়ে। ওগুলোই সাজায় যুবকের মন, চলে শব্দ বিন্যাস আর মনে আসে অবচেতনের গভীর বাণী— কবিতা লিখব বলেই হয়েছি আমার স্বপ্নের লিপিকার। এ স্বপ্ন প্রিয়ন্তিকার খয়েরি চুলের, যে চুলে মাটির গন্ধ আর মায়ের আশীর্বাদ। যার বিনুনিতে লেখা আছে বাংলা ভাষা ও দেশের ছায়াময় আশীর্বাদের গান! জনপদের যে রক্তের ইতিহাস তাকে তুলে ধরে বোবা চাবি গান, ঝুরো মৌতাতের সুরে সুরে চলতে থাকে লেখক জন্মের অন্তিম চাওয়া পাওয়ার বার্তাটুকু।
দুঃখ প্রস্থান ও অসুখী ঠোঁট- ছয়
এক ঝুড়ি পাপে ক’ফোটা গঙ্গাজল ছিটিয়ে
পুণ্য লিখতে এসে ভোরবেলায়
রং খেলতে শুরু করে প্রগলভ উচ্ছ্বাসের
আনাড়ি বালকটি!
আঙ্গিনার বাম হাতে দিলাম পুরনো কটা সুখ,
নিজস্ব সকাল আর কিছু পাখির পালক!
অনাদৃত অসুখগুলো সাজাতে বসি
বুকের খাঁচায়, যদি প্রতিষেধক এসে নেয়
অযাচিত আমন্ত্রণ!
পায়ে ঘুঙুর জড়িয়ে উঠোনে বালকটি
পালকের অপরূপ মিলে তৈরি পাখিদের শেখাচ্ছিল,
কবিতা পড়ার বিকেল খোঁজার মুদ্রা।
আংশিক সত্যের পৃথিবীতে ধুলো নামে
এ আমি বুঝে গেছি জন্মমাত্র চোখ মেলেই।
দোজখের দেরাজ খুঁজে খুঁজে পথ হারানো
অসুখী সকাল, কতবার এভাবে কাজল চোখে
একে যায় দুঃখ প্রস্থানের অর্কেস্ট্রা,
জানে না বিষাদ!
** বিষচুমু
ঠোঁটে বিষের লিপস্টিক
মেখে নেয় প্রিয়ন্তিকা, আমাকে
চুমু খাবে বলে।
ওতো জানে না, আজকাল
বিষচুমু খেতে খেতে অদ্ভুত কেমন এক
এন্টিবডি তৈরি করেছে শরীর,
বিষের চুমু খেলেই এখন
শুধু নেশা ধরে!
মনে হয়,
মরে গেলেই ভাল হতো!
দেখতে হতো না
আরেকটা বিষমাখা সকাল।
**সন্ধান
সারারাত চুম্বনের বিষগান শুনে, যুবতীর হৃদয়ে টোকা দিয়ে দেখি
ফেটে গ্যাছে কার্পাস ফুল, চেয়ে আছে পাপহীন ক্ষত; দংশিত ঠোঁট!
বলেছে সে উৎসুক মুখে, এঁকে দেই যদি রক্তটিকা গোপন প্রণয়ের
ফণা তুলে, হে অচেনা যুবক; লুকোবে কি শিকড়ে বুনোপালকের ওম?
তৃষ্ণার অবগুণ্ঠন খুলে নিলে মেটে কৌমার্য সঙ্কট! ইতিহাস হেসে তুলে যায়
উপভোগ্য সুর, ঘাস কেমন মাটি ছেড়ে ওঠে বুকের খাঁজে; আশ্চর্য মমতায়!
** পাপ
খুলে যাচ্ছে অর্গল, জানলার ওষ্ঠ ভরে যাচ্ছে
মিষ্টি রোদচুমুয়!
ভাঙা চশমার ফাঁকে, পলক ফেলে দেখি
রঙ পাল্টাচ্ছে কাঠের প্রজাপতি।
অথচ একাকীত্ব নিয়ে উপহাস করছে
র্যাকে রাখা পুরনো ব্লোট। নিষ্ঠুর বেঁচে থাকা,
খেলে যাচ্ছে
কুয়াশার পাশা। ও নিরাশ্রয়,
আর কত মহত্ত্ব দেখাবে তুমি?
আমাকে উল্টে দিয়ে অসমাপ্ত পুরাণের পথে
হে পুণ্য-
তুমি লিখেই চলেছ অবিশ্বাসের ধর্মগ্রন্থ!
অথচ ভাবলে না, পরাজিত পতঙ্গের পাপ
চুপচাপ লিখে রাখে, আনকোরা অভিশাপ!
** ইকারুস
একদিন ঘুম ভেঙে, আয়নায় চোখ রেখে
নিজেকে আবিষ্কার করি ঘাস ফড়িংয়ের চঞ্চলতায়...
সূর্যসঙ্গমের কিংবদন্তিতুল্য শিহরণে
উড়ে যেতে যেতে ঘাসের সমুদ্র ছেড়ে আগুন আকাশে
হঠাৎ আমি উপলব্ধি করি,
মোম ডানারা কেমন ধীরে ধীরে
যেন গলে যাচ্ছে অসহ্য সুখে!
হায় ঈশ্বর!
আমি বোধহয় আরেক ইকারুস!
অজ্ঞতার আগুনে পোড়াই নিজস্ব বিকেল,
অগুনতি মুদ্রাঙ্কিত রাত।