ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দুনিয়া? যুদ্ধবিরতির পরেও থমথমে তেহরান-তেলআবিব!

প্রকাশিত: ১৯:২৭, ২৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৯:২৭, ২৫ জুন ২০২৫

পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দুনিয়া? যুদ্ধবিরতির পরেও থমথমে তেহরান-তেলআবিব!

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের বিরুদ্ধে “ঐতিহাসিক বিজয়” দাবি করলেও, যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে—যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে পেরেছে।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে ইরান-ইসরায়েলের ১২ দিনের পাল্টাপাল্টি হামলার অবসান ঘটে এবং উভয় পক্ষ একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। ট্রাম্প দাবি করেন, তার নির্দেশে চালানো বাঙ্কার-বাজার বোমা হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়েছে।

তবে একটি গোপন গোয়েন্দা মূল্যায়নে বলা হয়েছে, এসব হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কার্যকারিতা কিছুটা কমেছে বটে, তবে পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। বেশিরভাগ সেন্ট্রিফিউজ ও সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ রয়ে গেছে। কিছু সুবিধার প্রবেশপথ ধ্বংস করা হলেও, ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো আসলে অক্ষত রয়ে গেছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এই রিপোর্টের সত্যতা স্বীকার করলেও একে “সম্পূর্ণ ভুল” বলে দাবি করেছেন।

যুদ্ধবিরতির পর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, “ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেওয়া হবে না।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প ব্যর্থ করে দিয়েছি। কেউ যদি এটিকে পুনর্গঠন করতে চায়, আমরা একই তীব্রতা ও সংকল্প নিয়ে তা প্রতিহত করব।”

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তাদের বোমা হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে “বছরখানেক পিছিয়ে দিয়েছে।” তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (DIA) বলছে, এর প্রভাব সাময়িক।

ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেছেন, তার দেশ পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পুনরায় আলোচনায় আগ্রহী, তবে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির বৈধ অধিকার থেকে পিছু হটবে না।

হামলা-পাল্টা হামলায় ইরানের কমপক্ষে ৬১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ৪,৭০০ জন আহত হয়েছেন বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ছিল ইসরায়েলকে সহায়তা করার অংশ হিসেবে। ইসরায়েলের দাবি, তারা বিজ্ঞানী ও উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

ট্রাম্প ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়াকে “দুর্বল” আখ্যা দিয়ে বলেন, তারা আগেভাগেই জানিয়ে হামলা করেছে বলে তার প্রশাসন দ্রুত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিতে সক্ষম হয়।

ইসরায়েলি সামরিক প্রধান আয়াল জামির জানান, এখন তাদের ফোকাস আবার গাজায় ফিরবে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানালেও অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে—ইরান ভবিষ্যতে গোপনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করতে পারে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ইরানের পক্ষ থেকে গোপন পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু হওয়ার ঝুঁকি “আরও বেড়েছে।”

তেহরান ও তেল আবিবে শান্তির ডাকের মাঝে, অনেকেই প্রশ্ন করছেন—এই যুদ্ধবিরতি কি টিকবে? ইরানি নাগরিক আমির বলেন, “আমি জানি না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কি না, কিন্তু মনে হয় না সবকিছু আগের মতো হয়ে যাবে।”

ইসরায়েলি বিরোধী দল, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এবং গাজায় বন্দি ইসরায়েলিদের পরিবারের সংগঠনগুলো গাজা যুদ্ধবিরতিও দাবি করেছে।

আবির

আরো পড়ুন  

×