ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

ইরান এতো ভয়ংকর হলো যে কারণে

প্রকাশিত: ১৩:৪৩, ১৫ জুন ২০২৫

ইরান এতো ভয়ংকর হলো যে কারণে

ছবি: সংগৃহীত

 

বৃহস্পতিবার (১৩ মে) গভীর রাতে শুরু হওয়া ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্য যেন রূপ নিয়েছে এক ভয়ংকর যুদ্ধক্ষেত্রে। ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর জবাবে মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ইরান চালিয়ে দেয় ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’। এই অভিযানে শতাধিক ড্রোন ও ব্যালিস্টিক মিসাইল একযোগে আঘাত হানে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে। আকাশে আগুনের লেজ, নিচে ধ্বংসস্তূপ—শহরের বুক কেঁপে উঠেছে আতঙ্কে, ধ্বংসে।

ইরানের এই অভিযানে ইসরায়েলের গর্বিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা 'আয়রন ডোম' পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। একযোগে বহু দিক থেকে, বিভিন্ন উচ্চতা ও গতিতে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর বেশ কিছু গন্তব্যে পৌঁছে যায়। রামাতগান শহরের জনবহুল এলাকায় আঘাত হেনে ধ্বংস করে হাসপাতালের পাশে অ্যাম্বুলেন্স, যানবাহন ও বসতি এলাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধুই সামরিক পরাজয় নয়; প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ব্যর্থতার একটি বাস্তব উদাহরণ। যুদ্ধের প্রযুক্তিগত অহংকার ভেঙে দিয়েছে ইরানের কৌশল।

ইরানি আক্রমণের কিছুক্ষণ পরেই ইসরায়েল ছুঁড়ে দেয় পাল্টা বার্তা। গোপন অভিযানে এফ-৩৫ জেট ঢুকে পড়ে তেহরানের আকাশে। লক্ষ্যবস্তু বানায় মেহরাবাদ বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ইরানের দাবি—তারা দুটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যদিও এর সত্যতা যাচাই হয়নি।

তবে সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে ইসরায়েল ধ্বংস করেছে ইরানের নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) নিশ্চিত করেছে, এ স্থাপনাটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইসরায়েলের বহু দিনের স্বপ্ন ছিল—ইরানের পরমাণু স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দেওয়া।

তেহরানে সাধারণ মানুষ এই ‘প্রতিশোধের আঘাত’ উদযাপন করছে। হাতে আইআরজিসির পতাকা, মুখে স্লোগান—‘মৃত্যু ইসরাইলে, বিজয় শহীদদের’। অন্যদিকে, একটি গোপন বেসমেন্টে আইআরজিসির এক শীর্ষ জেনারেল হাতে ধরে রেখেছেন একটি ব্ল্যাকলিস্ট, যার শীর্ষে আছে ডিমোনা নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটি।

ইরান সরাসরি জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে—তাদের ভাষায়, "ওয়াশিংটন কূটনীতির মুখোশ পরে ছুরিকাঘাত করেছে।" তবে যুক্তরাষ্ট্র তা অস্বীকার করে বলেছে, “ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ছিল আত্মরক্ষামূলক ও যৌক্তিক।”

বিশ্ব বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত আর শুধু দুটি দেশের সীমায় নেই। এর পেছনে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, এমনকি ভারতও ছায়ার মতো ঘোরাফেরা করছে। চীন চাইছে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যস্ত রাখতে, রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে জ্বালানি বাজারের। ভারত শান্ত থাকলেও ইসরায়েলের সাইবার ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে যুক্ত রয়েছে।

তেলআবিবে ইসরায়েলি গোয়েন্দা ইউনিটের স্ক্র্যাম্বলারে ধরা পড়ে একটি শব্দবার্তা—
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, পরবর্তী ধ্বংসে শুরু হোক ইতিহাসের নব অধ্যায়।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু মিসাইল নয়, যুদ্ধ আসছে তথ্য ও বিশ্বাসঘাতকতার হাত ধরে—এক নতুন স্ক্রিপ্টের পরমাণু যুগে।

আঁখি

×