ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের সফট পাওয়ার বা পরোক্ষ কূটনীতির ধারণা যিনি প্রথম দেন, সেই প্রখ্যাত পণ্ডিত জোসেফ নাই মৃত্যুর আগমুহূর্তেও এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। Financial Times-এ ৮ মার্চ প্রকাশিত এক লেখায় তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সফট পাওয়ার মূলত শেষ হয়ে গেছে। ৬ মে তার মৃত্যুর আগে, এই বাস্তবতা তাঁকে হতাশ করে গেছে।
নাই মনে করেন, ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি যুক্তরাষ্ট্রের উদারনৈতিক মূল্যবোধ ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র তার দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক আকর্ষণ ও প্রভাব হারাতে শুরু করেছে।
একসময় বিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্র মানেই ছিল ব্যক্তিস্বাধীনতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ, আইনের শাসন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতীক। এসব লিবারেল আদর্শই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সফট পাওয়ারের মূল ভিত্তি। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে এই মূল্যবোধগুলো ধীরে ধীরে ধ্বংস হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এগুলো থেকে সরে এসেছে।
২০১৬ সালে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে লিবারেলিজম বা উদারনীতি দুর্বল হতে থাকে। ২০২৫ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে এসে ট্রাম্প আরও আক্রমণাত্মকভাবে অ-উদারনৈতিক বা 'ইলিবারেল' নীতিগুলো বাস্তবায়ন শুরু করেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের দুই কক্ষ এবং সুপ্রিম কোর্টেই ট্রাম্পপন্থীরা শক্তিশালী অবস্থানে। এর ফলে তার অনুসৃত আদর্শ—যেমন শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ, খ্রিস্টীয় রক্ষণশীলতা, অভিবাসনবিরোধিতা ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক শাসন— মূলধারায় পরিণত হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি আত্মকেন্দ্রিক, একতরফা এবং বৈশ্বিক দায়িত্ব এড়ানো একটি দেশে পরিণত করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অস্বীকৃতি, বাণিজ্যে একতরফা শুল্ক আরোপ এবং মিত্রদের প্রতি অবজ্ঞার মাধ্যমে দেশটি তার আগের অবস্থান হারাচ্ছে।
বিশ্ববাসীর কাছে এই নতুন আদর্শের কোনো নৈতিক বা আদর্শিক আবেদন নেই। বরং এই চিন্তাধারা পশ্চাদপদ ও বর্ণবাদী বলেই বিবেচিত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সফট পাওয়ার, যা একসময় বিশ্বের বহু মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস ছিল, আজ তা দুর্বল ও প্রশ্নবিদ্ধ। ট্রাম্পের নেতৃত্বে দেশটি এখন ক্রমশ বিচ্ছিন্ন, অপ্রিয় ও অবিশ্বস্ত এক পরাশক্তিতে রূপ নিচ্ছে।
সূত্র: চায়না ডেইলি
এম.কে.
