
ছবি: সংগৃহীত
নিউইয়র্কের একটি ফেডারেল আপিল আদালতে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলোচিত ‘হাশ মানি’ মামলাকে ঘিরে শুরু হয় উত্তপ্ত আইনগত বিতর্ক। ট্রাম্পের দাবি—এই মামলার রায় রাজ্য নয়, বরং ফেডারেল আদালতে পর্যালোচনা হওয়া উচিত। আর সাম্প্রতিক এক সুপ্রিম কোর্টের রায় তার এই দাবিকে কিছুটা জোরও দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিচারকেরা।
“আমরা এক এমন মামলার মুখোমুখি, যা প্রেসিডেন্সিয়াল দায়মুক্তির পুরো খেলা বদলে দিয়েছে,”—মন্তব্য করেন সার্কিট জজ মিরনা পেরেজ, যিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনোনীত। তার মতে, প্রেসিডেন্টের দায়মুক্তির সীমারেখা এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
মূল প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে থাকা ৩৪টি ভুয়া ব্যবসায়িক নথি তৈরির অভিযোগের মামলাটি রাজ্য আদালত থেকে ফেডারেল আদালতে সরিয়ে নিতে পারবেন কি না। কারণ তিনি দাবি করছেন, মামলায় ব্যবহৃত কিছু প্রমাণ—বিশেষ করে হোয়াইট হাউসের সাবেক কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর হোপ হিকসের সাক্ষ্য—সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্সিয়াল ইমিউনিটি সংক্রান্ত রায়ের পরিপন্থি।
ট্রাম্পের পক্ষে আইনজীবী জেফ্রি ওয়াল বলেন, “এই ধরনের সাংবিধানিক দায়মুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার শুধু ফেডারেল আদালত ও সুপ্রিম কোর্টের, রাজ্য আদালতের নয়। এ মামলার প্রতিটি দিকই ফেডারেল আদালতে ওঠার দাবি রাখে।”
গত বছর সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট তার দাপ্তরিক কাজ নিয়ে ফৌজদারি মামলায় দায়মুক্ত হবেন এবং এমন কোনো প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা যাবে না যা তার অফিসিয়াল কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আদালত সতর্ক করেছিল, এমন প্রমাণের সুযোগ দেওয়া হলে দায়মুক্তির প্রকৃত মানেই নষ্ট হয়ে যাবে।
তবে এই প্রশ্ন উঠে এসেছে—হিকস এবং ট্রাম্পের সাবেক সহকারী ম্যাডেলিন ওয়েস্টারহাউটের সাক্ষ্য ও তার প্রেসিডেন্ট থাকার সময় করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টগুলো কি সেই দায়মুক্তির সীমানা অতিক্রম করেছে?
তিন বিচারকের আপিল প্যানেল, যারা প্রত্যেকেই ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্টদের মনোনীত, এ বিষয়ে দুই পক্ষকেই কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়েছেন। শুনানি এক ঘণ্টা পার হলেও আদালত কী সিদ্ধান্ত দেবে, তা স্পষ্ট হয়নি। বিচারকরা জানতে চান, কেন এই প্রমাণগুলো সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আওতায় বাদ পড়বে না।
জজ সুসান কার্নি বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু প্রমাণ সংক্রান্ত দায়মুক্তি নিয়ে খুবই বিস্তৃতভাবে কথা বলেছে।”
তবে ম্যানহাটানের জেলা অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগের কার্যালয় পাল্টা যুক্তি দেয়—এখন মামলা ফেডারেল আদালতে নেওয়ার সময় পার হয়ে গেছে, কারণ ট্রাম্প ইতিমধ্যে দণ্ডিত হয়েছেন।
ব্র্যাগের আইনজীবী স্টিভেন উ বলেন, “হিকস হয়তো হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা ছিলেন, কিন্তু তার বক্তব্য ছিল ট্রাম্পের ব্যক্তিগত কাজে যুক্ত থাকার বিষয়ে। আর যেহেতু এখন সাজা ঘোষণা হয়ে গেছে, তাই মামলাটি স্থানান্তরের জন্য ‘যথেষ্ট কারণ’ নেই।”
উ ট্রাম্পের দাবি তুলনা করেন এমন এক পোস্ট অফিস কর্মচারীর সাথে, যে ছুটির দিনে অপরাধ করে এবং সোমবার অফিসে এসে বসকে জানায়। এমন স্বীকারোক্তি পোস্ট অফিসে ঘটলেও, সেটি সরকারি কাজে রূপান্তরিত হয় না।
তার কথায়, “ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ছিল পুরোপুরি ব্যক্তিগত এবং দাপ্তরিক নয়।”
উল্লেখ্য, ট্রাম্প জানুয়ারিতে দণ্ডিত হলেও তাকে কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। অভিযোগ ছিল, তিনি তার সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনকে অর্থপ্রদান সংক্রান্ত একটি লেনদেন ভুলভাবে নথিভুক্ত করেন, যাতে করে কোহেন কর্তৃক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে দেওয়া $১,৩০,০০০ অর্থ লুকানো যায়—যার উদ্দেশ্য ছিল ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে এক সম্পর্কের গুঞ্জন চাপা দেওয়া। যদিও ট্রাম্প সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন।
মামলাটি ফেডারেল আদালতে সরানোর আবেদন আগেই খারিজ করে দেন জেলা বিচারক অ্যালভিন হেলারস্টেইন, যিনি প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মনোনীত। তবে ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, নিউইয়র্কের বিচারক জুয়ান মার্চান তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন এবং তিনি চান “একটি নিরপেক্ষ ফেডারেল আদালতে” তার আপিল শোনা হোক।
Mily