ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইতালিতে অভিবাসীদের জন্য দুঃসংবাদ, দেশটিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন ১০ বছর থেকে ৫ বছরে আনার প্রস্তাবের গণভোট বাতিল

প্রকাশিত: ১৭:২৩, ১০ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:২৪, ১০ জুন ২০২৫

ইতালিতে অভিবাসীদের জন্য দুঃসংবাদ, দেশটিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন ১০ বছর থেকে ৫ বছরে আনার প্রস্তাবের গণভোট বাতিল

ইতালিতে নাগরিকত্ব আইন শিথিল এবং শ্রমিকদের অধিকার বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত গণভোটটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে, কারণ এতে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ—যা ৫০ শতাংশ বাধ্যতামূলক সীমার অনেক নিচে।

গণভোটটি রবিবার শুরু হয়ে সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে। এতে মোট পাঁচটি প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, যার মধ্যে অন্যতম ছিল—কোনও ব্যক্তি ইতালিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন করতে কত বছর বসবাস করতে হবে, সেই সময়সীমা ১০ বছর থেকে কমিয়ে ৫ বছরে আনার প্রস্তাব।

গণভোটটি একটি নাগরিক উদ্যোগের মাধ্যমে আয়োজন করা হয় এবং এতে বিভিন্ন নাগরিক সমাজ সংগঠন ও শ্রমিক ইউনিয়ন ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে প্রচার চালায়। কিন্তু সিসিলি ও কালাব্রিয়ার মতো অঞ্চলে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২২ শতাংশে নেমে আসায় গণভোটের সমর্থকদের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা।

ইতালির ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বাধীন সরকার এই গণভোটের প্রতি উদাসীন ছিল এবং অনেক ক্ষেত্রেই জনগণকে ভোট না দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। প্রধানমন্ত্রী মেলোনি নিজেও ভোটদান থেকে বিরত ছিলেন, যদিও তিনি রোমে একটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক লরেঞ্জো প্রেগলিয়াসকো বলেন, “৩০ শতাংশ হোক বা তার নিচে, এটি একটি হতাশাজনক ফলাফল এবং গণভোট প্রচারকারীদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম।”

সরকারপন্থী দল ‘ব্রাদার্স অব ইতালি’ ফলাফলের পর এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বিরোধী নেতাদের ছবি দিয়ে লিখেছে: “তোমরা হেরেছ!” তারা আরও বলে, “এই গণভোটের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মেলোনি সরকারকে পতন ঘটানো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইতালীয়রাই তোমাদের পতন ঘটিয়েছে।”

বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির (PD) নেত্রী পিনা পিচিয়ার্নো এই ব্যর্থতাকে “গভীর, গুরুতর এবং এড়ানো সম্ভব ছিল” বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “৫০ শতাংশ সীমা না ছুঁতে পারা মেলোনি ও ডানপন্থীদের জন্য একটি বিশাল উপহার।”

বর্তমানে ইতালিতে একটি গণভোট আহ্বানের জন্য প্রায় পাঁচ লাখ স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। তবে ভোটের পর অনেকেই এই সীমা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন যাতে অপ্রয়োজনীয় গণভোট এড়ানো যায়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তায়ানি বলেন, “আমরা প্রবাসী ইতালিয়ানদের জন্য লক্ষ লক্ষ ব্যালট বিদেশে পাঠাতে অনেক অর্থ ব্যয় করেছি, যা এখন সম্পূর্ণভাবে অপচয় হয়েছে।”

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইতালিতে ৭৮টি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র অর্ধেকই বৈধতা অর্জন করতে পেরেছে। সর্বশেষ ২০১১ সালে পানির সেবাকে বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে হওয়া গণভোটটি বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণের শর্ত পূরণ করেছিল।

তবে এই সাম্প্রতিক ব্যর্থতা আবারও প্রমাণ করে, রাজনৈতিক উদাসীনতা এবং সরকারি অবজ্ঞার কারণে গণভোটের গুরুত্ব দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। 

রিফাত

আরো পড়ুন  

×