ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমেরিকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশের হামলা, গ্রেপ্তার প্রায় অর্ধশত

প্রকাশিত: ২২:০১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

আমেরিকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশের হামলা, গ্রেপ্তার প্রায় অর্ধশত

বিক্ষোভরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বেদম পেটায় পুলিশ।

‘গাজাকে মুক্ত করো, প্যালেস্টাইনিদের মুক্তি দাও’। ইজরায়েল-বিরোধী স্লোগানে উত্তপ্ত আমেরিকা। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রিন্সটন, নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটি— আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। 

ক্ষোভের আঁচ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে কলেজগুলোতে। বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন অধ্যাপকেরাও। পরিস্থিতি সামলাতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চলে আসে পুলিশের বড় বাহিনী। চলল বেপরোয়া লাঠিচার্জ। মাটিতে ফেলে পিছমোড়া করে হাতকড়া পরানো হল বিক্ষোভরত পড়ুয়া-অধ্যাপকদের। বহু ক্যাম্পাস থেকে গ্রেপ্তার করা হলো কয়েকশো পড়ুয়াকে। ইজরায়েল-বিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার জন্য প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির দুই ভারতীয় পড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আজ। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

গতকাল শুক্রবার সকালে প্রিন্সটন চত্বরে তাবু খাটিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। সেখান থেকেই পরে তামিলনাড়ুর বাসিন্দা অচিন্ত্যা শিবলিঙ্গন এবং হাসান সইদকে গ্রেপ্তার করা হয়। অচিন্ত্যা ‘পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ইন ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’ নিয়ে স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা করছেন। হাসান পিএইচডি স্কলার। দুই পড়ুয়ার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অনুপ্রবেশের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের ক্যাম্পাসে ঢোকার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। 

প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র জেনিফার মোরিল বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তাঁবু খাটিয়ে নিয়ম ভেঙেছে ওরা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য এক মুখপাত্র মাইকেল হচকিস অবশ্য জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার হওয়া কোনো পড়ুয়াকেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে না। ছাত্রাবাসেও থাকতে দেওয়া হবে। মোরিল বলেন, ‘বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের বারবার সতর্ক করা হয়েছিল। ওঁরা শোনেননি। আইন-শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য এখন ওঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ভিডিও ছড়িয়েছে। আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটির একটি ভিডিও ঘিরে প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ভিডিওয় দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। আচমকাই পড়ুয়াদের গ্রেপ্তার করা শুরু করে পুলিশ। এক পড়ুয়াকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরে তারা। এ সময় এক অধ্যাপিকা প্রতিবাদ করতেই তার উপরেও ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। 

ক্যারোলিন ফোলিন নামে ওই নারী চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমি অধ্যাপিকা।’ কিন্তু, কেউ শোনেনি। মাটিতে ফেলে তাকে চেপে ধরে দুই-তিন জন পুরুষ পুলিশ। তারপর পিছমোড়া করে হাতকড়া পরানো হয়। আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটি থেকে আজ ২৮ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের একাংশের অভিযোগ, তাদের লক্ষ্য করে জিনিস ছুড়েছিল শিক্ষার্থীরা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে নাকি কোনো রাসায়নিক ছুড়ে পুলিশ এবং রবার বুলেট ছোড়ার কথাও শোনা যায়। আটলান্টা পুলিশও তা অস্বীকার করেছে। নোয়েল ম্যাকাফি নামে এক ছাত্রী দাবি করেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ চলছিল। হঠাৎ পুলিশ চলে আসে। এক মিনিটের মধ্যে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে।’

ইজরায়েল-বিরোধী বিক্ষোভের জেরে লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া তাদের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছে আজ। আশপাশের বিভিন্ন কলেজে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি থেকে ৩৩ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের ক্যাম্পাস থেকে বার করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই পুলিশে খবর দেন। কিছুটা ভিন্ন ছবি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের। গত সপ্তাহ থেকেই সেখানে ইজরায়েল-বিরোধী বিক্ষোভ চলছে। 

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট গাজার যুদ্ধে অর্থ ঢেলে যাচ্ছেন। অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে গাজায় নৃশংস হামলা থেকে বিরত করতে হবে ই‌জরায়েলকে। 

 

এম হাসান

×