ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

চাঙ্গা কংগ্রেস শিবির

মোদির বিরুদ্ধে অনাস্থা ॥ চমক দেখালেন রাহুল

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২২ জুলাই ২০১৮

মোদির বিরুদ্ধে অনাস্থা ॥ চমক দেখালেন রাহুল

ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী শুক্রবার পার্লামেন্টে দলীয় কর্মীদের জন্য এক অসাধারণ মনোবল সহায়তাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এমনকি তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। যদিও তা সাময়িক ছিল। দ্য হিন্দু। শুক্রবার রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রমাণ করে দিলেন লোকসভায় তিনি এখনও সংখ্যাধিক্যের দিক দিয়ে বেশি তারপরও কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী সব আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন। তিনিই ঠিক করলেন পার্লামেন্ট কিভাবে চলবে। যদিও তা কোন এজেন্ডায় ছিল না তবুও ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে এটি একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়ে দিলেন। তিনি ঘৃণা ও নৃশংসতা না ছড়িয়ে বরং ভালবাসা ও সহনশীলতা দিয়ে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পথ দেখালেন। প্রকৃতপক্ষে সত্য ও অহিংসতার গান্ধী আদর্শের কোন বিকল্প নেই। কয়েক মিনিট আগেই রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী মোদিকে পাশ কাটিয়ে যান। পার্লামেন্টে বক্তব্য দানকালে রাহুল বলেন, আপনারা আমাকে ঘৃণা করতে পারেন। আমার ওপর ক্ষুব্ধ হতে পারেন, আমাকে পাপ্পু বলে ডাকতে পারেন। আমাকে কঠিন গালাগাল দিতে পারেন কিন্তু আপনাদের জন্য আমার কোন রাগ বা ঘৃণা নেই। আমি কংগ্রেস এবং সব বিরোধীরাই কংগ্রেস হচ্ছে। এই অনুভূতি কংগ্রেস সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেস এই জাতিকে সৃষ্টি করেছে। আপনারা তা ভুলতে পারবেন না। প্রত্যাশা অনুযায়ী বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে পর্যুদস্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। বিপক্ষের মতকে ধূলিসাৎ করে যে নিরঙ্কুশ জয় পেতে তিনি সাধারণভাবে অভ্যস্ত, ঠিক তেমনটা ঘটল না শুক্রবার। সকালে হঠাৎই আলিঙ্গন করে যে লড়াইটা ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শিবিরে পৌঁছে দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী, নিজের বক্তব্যে মোদি তার জবাব দেবেন এমনটাই আশা ছিল শাসক পক্ষের। রাত ৯টার পরে প্রধানমন্ত্রী যখন বলতে উঠলেন, তখন দেখা গেল, মোদি ঠিক মোদিতে নেই। রাজনীতির ময়দানে সাধারণভাবে নিজের নিয়মে চলতে পছন্দ করেন মোদি। শুক্রবার তাকে চলতে হলে রাহুলের ঠিক করে দেয়া পথে। প্রতি পদক্ষেপে বোঝা গেল, তিনি ঠিক স্বচ্ছন্দবোধ করছেন না। কটাক্ষের সুরে রাহুলের আলিঙ্গনের জবাব দিলেন ঠিকই তা প্রধানমন্ত্রী সুলভ হলো না। তারপরেও প্রায় এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট ধরে যা বললেন, সেটা তার সরকারের সাফল্য গাথা ছাড়া আর কিছুই না। যা দেশে বিরোধীদল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটা বড় অংশের মতে সেটা ঠিক ‘ঘুমপাড়ানি’ গানের মতো। ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন এমনকি বিজেপির পার্লামেন্ট সদস্যরাও। অবশ্য দিনের শেষে বিজেপির ঝুলিতে একেবারে কিছুই নেই, এমনটাও নয়। প্রথমত, অনাস্থা ভোট বিপুল ব্যবধানে জিততে চেয়েছিলেন অমিত শাহরা। সেজন্য দলের অসুস্থ সদস্য পি এল পটেলকে লোকসভা কক্ষের বাইরে স্ট্রেচারে শুইয়ে পর্যন্ত রেখেছিলেন তারা। যাতে একটা ভোটও হাতছাড়া না হয়। অমিত শাহর ফোনের পরেও শিবসেনার মতো সবচেয়ে পুরনো শরিক পুরো অনাস্থা পর্ব বয়কট করেছে ঠিকই। ভোটদাতা পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন পেয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে, বিরোধী দলের অনেক সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। বিতর্ক বয়কট করেন বিজু জনতা দল (বিজেডি) সদস্যরা। ফলে সব মিলিয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে অনাস্থা ভোটের ফল বিজেপির মনোবল বাড়াবে। রাতেই মোদি টুইট করেন, ‘লোকসভা ও ১২৫ কোটি ভারতীয়ের সমর্থন এনডিএ-র সঙ্গে রয়েছে। যেসব দল আমাদের সমর্থন করেছে, তাদের ধন্যবাদ। দেশ বদলের এবং যুব প্রজন্মের স্বপ্নপূরণের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।’ বিজেপি সূত্র বলছে, এই জয়ে বলীয়ান হয়ে উত্তরপ্রদেশের জনসভা থেকে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারাভিযান শুরু করবেন মোদি।
×