ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আসাম বিধানসভায় হিমন্ত বিশ্ব শর্মা

বিদেশি মনে হলেই সরাসরি পুশব্যাক করা হবে বাংলাদেশে

প্রকাশিত: ০৮:১৭, ১০ জুন ২০২৫

বিদেশি মনে হলেই সরাসরি পুশব্যাক করা হবে বাংলাদেশে

আসাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) সরাসরি ‘বিদেশি’ বলে মনে করলে কাউকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারবেন, এর জন্য আর ফরেনার্স ট্রাইবুনালে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। সোমবার (৯ জুন) আসাম বিধানসভার এক বিশেষ অধিবেশনে তিনি এই ঘোষণা দেন।

হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দাবি করেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে আসাম সরকারকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এ সিদ্ধান্ত ১৯৫০ সালের ‘ইমিগ্রান্টস (এক্সপালশন ফ্রম আসাম) অ্যাক্ট’ অনুযায়ী কার্যকর হবে।

তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চকে নাগরিকত্ব নির্ধারণের শেষ সময়সীমা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু একাধিকবার আদালত বলেছে, এই তারিখের পর যারা আসামে এসেছেন, তাদের কোনওভাবেই রেহাই দেওয়া যাবে না। এদের অবশ্যই ফেরত পাঠাতে হবে। ১৯৫০ সালের আইনের মাধ্যমে যদি কোনো ডিসি মনে করেন, যে কেউ বিদেশি, তাহলে তাকে ফেরত পাঠানোর অধিকার রয়েছে। এর জন্য ফরেনার্স ট্রাইবুনালের প্রক্রিয়ায় যাওয়ার দরকার নেই।”

হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আরও বলেন, “এই আইনের আওতায় ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে আসা ব্যক্তিরা পড়বেন না। তবে যাদের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক প্রাথমিকভাবে বিদেশি বলে মনে করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সম্প্রতি ফরেনার্স ট্রাইবুনাল কর্তৃক বিদেশি ঘোষণা করা ৩৩০ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, “এই ধরনের ‘পুশব্যাক’ অভিযান আরও জোরদার হবে। কারণ, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি মৌলবাদীরা যেভাবে আসামে অনুপ্রবেশ করছে, তা রুখতে আমাদের আরও সক্রিয় হতে হবে। এমনকি কারও নাম এনআরসিতে থাকলেও ফেরত পাঠানো হবে, যদি ডিসি তাকে বিদেশি মনে করেন।”

বিরোধীদের তীব্র আপত্তি

হিমন্তের এই বক্তব্যের পর বিধানসভায় বিরোধী দলের সদস্যরা তীব্র আপত্তি জানান। কংগ্রেস নেতা জাকির হোসেন সিকদার প্রশ্ন করেন, “ডিসি কীভাবে নির্ধারণ করবেন কে বিদেশি?” জবাবে হিমন্ত বলেন, “ডিসি যাকে বিদেশি বলে মনে করবেন, সেটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।”

এই উত্তরে আরও হইচই শুরু হয় বিধানসভায়। বিরোধী দলীয় নেতা দেবব্রত শইকিয়া বলেন, “এই আইনে ‘পুশব্যাক’ শব্দটির কোনো উল্লেখ নেই। কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে বলেছেন, কোনো বিদেশিকে ফেরত পাঠানোর আগে তার জাতীয়তা নিশ্চিত হতে হবে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতি।”

তিনি আরও জানান, ১৯৫০ সালে প্রথমবার এই আইন কার্যকর করা হলেও তা মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই বন্ধ করে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। কারণ এতে আসামের বহু পুরোনো বাঙালি মুসলিম অধিবাসীর ওপর অযথা চাপ আসে।

বর্তমান ব্যবস্থা বনাম ১৯৫০ সালের আইন

বর্তমানে আসামে বিদেশি চিহ্নিতকরণের জন্য রয়েছে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল (এফটি)। সীমান্ত পুলিশ অথবা ভোটার তালিকায় ‘ডি-ভোটার’ হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এফটি-তে মামলা হয়। ট্রাইবুনাল যদি কাউকে বিদেশি ঘোষণা করে, তাহলে সেই ব্যক্তি উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন।

তবে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বক্তব্য অনুযায়ী, এখন থেকে এই প্রক্রিয়া বাইপাস করে সরাসরি জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্তে কাউকে বিদেশি ঘোষণা করে ফেরত পাঠানো যাবে।

সুপ্রিম কোর্টের ২০২৪ সালের অক্টোবরে দেওয়া এক রায়ে বলা হয়েছে, আসাম চুক্তির ৬(ক) ধারা বৈধ এবং এর সঙ্গে ১৯৫০ সালের বহিষ্কার আইনটিকেও পাঠ করা উচিত। রায়ে উল্লেখ রয়েছে, ১৯৫০ সালের আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার বা তাদের মনোনীত কোনো কর্মকর্তা যদি মনে করেন, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপস্থিতি জনস্বার্থের পরিপন্থী, তাহলে তাকে আসাম বা ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে।

এই নির্দেশনার আলোকে আসাম সরকার এখন আইন কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে, যার ফলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অঙ্গনে।


হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বাধীন আসাম সরকার নতুন করে ১৯৫০ সালের বিতর্কিত আইন কার্যকর করতে যাচ্ছে, যার ফলে রাজ্যে বিদেশি চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া আরও কঠোর হবে। তবে এতে নাগরিক অধিকার এবং আইনত প্রক্রিয়া নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে বিধানসভায় ও রাজ্যের রাজনৈতিক পরিসরে।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/yc7655ye

আফরোজা

×