ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘বটতলা সম্মাননা ২০১৬’ পেলেন রবিউল আলম

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬

‘বটতলা সম্মাননা ২০১৬’ পেলেন রবিউল আলম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রামের নাট্যচর্চার অগ্রপথিক নাট্যকর্মী, সৃজনশীল নাট্যজন রবিউল আলম। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এই নাট্যজনের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্বীকার করে তার হাতে বিশেষ সম্মাননা তুলে দিয়েছে নাট্য সংগঠন বটতলা। শুক্রবার সন্ধ্যায় বটতলা রঙ্গমেলার নবম দিনে তার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন দেশের বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লায়লা হাসান। বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় এক বাতিঘর ভাবীকালের মঞ্চকর্মীদের প্রেরণা রবিউল আলমকে সম্মান জানাতে পেরে আনন্দিত বটতলার কর্মীরা। প্রথিতযশা নাট্যব্যক্তিত্ব রবিউল আলমের জন্ম ১৯৪৬ সালের ৩ নবেম্বর বগুড়ায়। পিতা জসিমউদ্দিন আহমেদ ও মাতা জমিলা খাতুন। কর্মজীবনে তিনি টিএসপি ফার্টিলাইজার, ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও কোহিনূর কেমিক্যালে ৩৫ বছরের কর্মজীবন শেষে অবসরগ্রহণ করেছেন। হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা শেষে (১৯৬৫) জীবনের প্রথম রচিত নাটক বর সংকট প্রযোজনা করেন জন্মস্থান বগুড়ার বারপুর গ্রামে। আর নাটকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন চট্টগ্রামে। প্রথম কর্মস্থল টিএসপি ও পরে কল্লোল থিয়েটারে অভিনেতা-নাট্যকার রূপে (১৯৭২-৭৩)। অতঃপর তির্যক নাট্যগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার (১৯৭৪) মাধ্যমে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনে যুক্ত হন। তির্যকের প্রথম নাটক ‘জননীর মৃত্যু চাই’-এর রচয়িতা। এছাড়াও তির্যকের জন্য নাটক লিখেছেন সাতটি। এরমধ্যে ‘সমাপ্তি অন্যরকম’, ‘এক যে ছিল দুই হুজুর’, ‘আকাক্সিক্ষত একজন’, ‘বিপক্ষে বন্দুক’ অন্যতম। অনুবাদ করেছেন শেক্সপিয়ারের ‘এ্যাজ ইউ লাইক ইট’। তির্যক নাট্য ত্রৈমাসিকে প্রকাশিত হওয়ার সুবাদে সত্তর-আশির দশকে তার রচিত নাটক দেশের সর্বত্র মঞ্চস্থ হয়। দলের বাইরে তার রচিত নাটকের উল্লেখযোগ্য প্রযোজনার মধ্যে রয়েছে ‘নাপুস’, ‘রাজা সাহিত্য কারখানা’, ‘বিবি পাঠশালা’, ‘আকাশ পারের আগন্তুক এবং উল্টো ফাঁদে’, ‘মিশার কীর্তি’ এবং ‘চলন বিলে কলঙ্ক’। সম্প্রতি ঢাকার তিনটি দল তার তিনটি নাটকের নিয়মিত প্রযোজনা করছে। এগুলো হলোÑ ‘চলন বিল’, রবীন্দ্রনাথের গল্পের নাট্যরূপ ‘কঙ্কাল’ (নাট্যতীর্থ) এবং ‘নিঃসঙ্গ নিরাময়’ (নাট্যপ্রয়াস, মতিঝিল থিয়েটার)। উপরোল্লেখিত নাটকের বেশকিছুর নির্দেশক রবিউল আলম নিজে। রবিউল আলম বেতারে যুক্ত হন নাট্যকার হিসেবে ১৯৭৫ সালে। অতঃপর অভিনেতা ও পরে অতিথি প্রযোজক। তার বেশিরভাগ মঞ্চ নাটকের বেতার নাট্যরূপ প্রচার হয়েছে চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বেতার কেন্দ্র থেকে। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের অভিনেতা ও নাট্যকার। তার রচিত উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে- ‘বন্ধনহীন গ্রন্থি’, ‘অমি যখন বন্দী’, ‘পরাহত’, ‘শান্তা একদিন’, ‘কখনো সৈকতে’, ‘অজ্ঞাতবাস’, ‘ছায়াহীন বৃক্ষ’, ‘যার সাথে যার’, ‘বাঁধ ভেঙে দাও’ (বিটিভি); ‘নিভৃত নিবাস’ (একুশে), ‘উল্টো ফাঁদ’ (চ্যানেল আই), ‘এক সকালে’ ও ‘চন্দ্রাহত’ (এটিএন)। মঞ্চ, বেতার ও টিভি নাটক ছাড়াও রবিউল ‘আলগা নোঙর’, ‘হালদা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৪টি নাট্যগ্রন্থসহ রবিউলের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৮। এরমধ্যে শেক্সপিয়ার, মলিয়ের ও হ্যারল্ড পিন্টারের নাটকের তিনটি অনুবাদগ্রন্থও আছে। রবিউল আলম সম্পাদনা করেছেন তির্যক নাট্য ত্রৈমাসিক পত্রিকার (১৯৭৬-’৭৯), যার বারোটি সংখ্যায় পত্রস্থ হয় সে সময়ের ৩০টি নাটক। এছাড়া তার প্রতিষ্ঠিত তির্যক প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকজন নাট্যকারের দশটি গ্রন্থ। আন্তর্জাতিক যুববর্ষ পদক চট্টগ্রাম (১৯৮৫), বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন-বেঙ্গল ফাউন্ডেশন সংবর্ধনা (২০০৫), এ্যামবিশন সম্মাননা, বগুড়া (২০১০) ও আরণ্যক সম্মাননা (২০১৩) এবং নান্দীমুখ সংবর্ধনা (২০১৫) অনুষ্ঠানে তিনি সম্মাননা পান।
×