ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

উপার্জনের অবলম্বন হারিয়েছে কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়ার কয়েকশ ব্যবসায়ী

বাঁশ ব্যবসায় মন্দা

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

বাঁশ ব্যবসায় মন্দা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গুনিয়া ॥ চাহিদা কমে যাওয়ায় কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কয়েকশ ব্যবসায়ী বাঁশের চালান নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে। কাপ্তাই জেটিতে পানি বিদ্যুত কেন্দ্রের কার্গোর কাছে দিগন্ত বিস্তৃত লেকের পানিতে ভাসছে বাঁশের চালী। কিন্তু বাঁশের বাজারে ক্রেতা নেই। বাঁশের ব্যবসা মন্দায় রাঙ্গুনিয়ার ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে আর্থিক দুরবস্থা। জানা গেছে, কর্ণফুলী পেপার মিলের কাগজ উৎপাদনে ব্যবহারকারী কাঁচামাল হিসেবে এবং দেশের বাঁশ বেত ভিত্তিক কুঠির ও ক্ষুদ্র শিল্প কারখানার উৎপাদনে বাঁশের ব্যাপক ব্যবহার হতো। বাড়িঘর নির্মাণ, ঘেরা বেড়া ও গৃহস্থালির নানা কাজে ব্যবহার হতো বাঁশ। সর্বত্র ব্যাপক চাহিদায় কাপ্তাইয়ে ছিল জমজমাট বাঁশের বাজার। এ বাজারের বেশির ভাগই বাঁশ যেত কর্ণফুলী কাগজ কলে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যাপক চাহিদায় বাঁশের রমরমা বাণিজ্যে কাপ্তাই ছিল চঞ্চল। কাপ্তাইয়ের বাঁশের বাজারে অনেকাংশেই রাঙ্গুনিয়ার ব্যবসায়ীদের ছিল আধিপত্য। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর, চন্দ্রঘোনা, রাজানগর, হোসনাবাদ, পারুয়া, নিশ্চিন্তাপুরসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক লোকজন বাঁশের ব্যবসায় স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে চাহিদা নেই অনেকাংশে বাঁশের ব্যবসা থমকে গেছে। ব্যবসায়ীরা উপার্জনের অবলম্বন হারিয়ে অর্থকষ্টের শিকার হয়েছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, কর্ণফুলী কাগজ কল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাঁশ বাজারের বিশাল পরিমাণের চাহিদা কমে গেছে। বাঁশের বদলে টিন এবং প্লাস্টিকের ব্যবহারে অন্যন্য ক্ষেত্রেও বাঁশের ব্যবহার কমেছে। এতে কাপ্তাইয়ে বাঁশের ব্যবসায় ধস নামে। কাপ্তাইয়ের বাঁশের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কার্গোরে নিকটে হয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলের বাঁশকেন্দ্র জুড়ে দিগন্ত বিস্তৃত কাপ্তাই লেকে বাঁশের চালীতে একাকার হয়ে পড়েছে। সোনালি দৃশ্যে পানিতে ভাসছে বাঁশের চালী। বাজারের ব্যবসায়ী রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা লিচুবাগানের বাবুল বড়ুয়া ও আব্দুল কুদ্দুছ জানান, কেনাকাটা কমে যাওয়ায় বাঁশের চালী নিয়ে চরম দুরবস্থার সম্মুখীন হয়েছি। এক সময় কর্ণফুলী পেপার মিলে বাৎসরিক কোঠায় বাঁশ সরবরাহ করেছি। গত ৩/৪ বছর ধরে মিলের উৎপাদন বন্ধ থাকায় বাজারে বাঁশের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। তদুপরি পেপারমিলে সরবরাহ করা বাঁশের মূল্য বাবদ ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার বিল পরিশোধ করেনি। তাই রাঙ্গুনিয়ার শত শত বাঁশ ব্যবসায়ী আর্থিক দুরবস্থায় পড়েছে। বর্তমানে কাপ্তাইয়ের বাজারে বাঁশ আসলেও ব্যবসা নেই। দুর্গম বনাঞ্চল থেকে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ বাজারজাত করতে ব্যয় বেড়েছে দুই- তিনগুণেরও বেশি। তাই বাজারে দামও বেড়েছে। চট্টগ্রাম টেকনাফ ঢাকা ও অন্যান্য স্থানে কিছু কিছু বাঁশের চাহিদার ভিত্তিতে কাপ্তাইয়ে বাঁশের বাজার টিকে রয়েছে। কাপ্তাই জল বিদ্যুতকেন্দ্রের কার্গোতে পারাপার করে বাঁশের চালী কর্ণফুলী নদী পথে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য স্থানে বাণিজ্যিক চালান হয়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিপূর্ণ ও জীর্ণ কার্গোতে স্বাভাবিক পারাপার কার্যক্রম চলেনা। তাছাড়া লেকের অপরপ্রান্তে বাঁধের ওপারে কর্ণফুলী নদীতে সব সময় স্বাভাবিক পানির স্তর থাকে না বিধায় কার্গো পারাপার ব্যাহত হয়। এতে কাপ্তাই বাজারে বাঁশের ব্যবসা জিম্মি হয়ে পড়েছে। কার্গো চালকেরা জানান, বিয়ারিং নষ্টসহ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কার্গো অচল থাকে। স্বাভাবিক পারাপার কার্যক্রম চলে না। বাঁশ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন , দীর্ঘদিন ধরে পানিতে পড়ে থাকায় কার্গোর কাছে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে মূল্যবান বাঁশ পঁচে নষ্ট হচ্ছে। প্রবীণ বাঁশ ব্যবসায়ী চন্দ্রঘোনা সিকদার পাড়া গ্রামের শামশুল আলম জানান, ব্যবসা অচল হয়ে পড়ায় রাঙ্গুনিয়া অনেক বাঁশ ব্যবসায়ী এখন বেকার হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে উৎপাদিত বাঁশ, কাঠসহ বিভিন্ন বনজদ্রব্য দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ ভূমিকা রাখে। ডলু, মুলি, ওড়া.টেংরা ইত্যাদি হরেক প্রজাতির প্রচুর বাঁশ প্রাকৃতিক উপায়ে বনাঞ্চলে উৎপাদন হয়। পাশাপাশি কর্ণফুলী পেপার মিলের সংরক্ষিত বিশাল বিশাল বাঁশঝাড়ও রয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলের কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি, নানিয়ারচর, ফরোয়া, খাগড়াছড়ি, কাচালং, মারিশ্যা, বরকলসহ বিভিন্ন পার্বত্য বনাঞ্চলে রয়েছে প্রাকৃতিক বাঁশঝাড়। কুঠির ও ক্ষুদ্র থেকে শুরু করে বৃহত্তর শিল্পকারখানার উৎপাদনে ব্যবহার্য কাঁচামাল হিসেবে এসব বাঁশের কদর ছিল। বিদেশেও বাঁশের চালান দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সহায়ক ভূমিকা রাখে। দেশ বিদেশে ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্নস্থানে গড়ে উঠে বাণিজ্য কেন্দ্র। ব্যবহার কমে যাওয়ায় বনাঞ্চলে বাঁশঝাড়গুলো অবহেলিত হয়ে পড়েছে। ভূমির দখল বেদখলের দৌরাত্ম্যে বাঁশঝাড় বিলুপ্ত হতে বসেছে। অভিজ্ঞমহলের মতে চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত কর্ণফুলী পেপার মিলে বাঁশের ব্যবহারে পার্বত্যাঞ্চলের বাঁশ সম্পদ সমৃদ্ধ হবে। এতে সহজলভ্য প্রাকৃতিক বাঁশের কাঁচামালে পেপার মিলও লাভজনক হওয়া সম্ভব।
×