ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শিক্ষা খাত

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২ মার্চ ২০২২

স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শিক্ষা খাত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঠিক দুই বছর আগে এমনই এক মার্চে দেশে ঘনিয়ে এসেছিল কালো ছায়া। সুদূর চীনের গ-ি পেরিয়ে বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশগুলো যখন কাবু হয়ে উঠেছিল মহামারী করোনার আঘাতে তখনও সুরক্ষিতই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হয়নি শেষ রক্ষা। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী। আর এরপর থেকেই লকডাউন, শাটডাউন, বিধিনিষেধের মতো শব্দগুলো দেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ওতপ্রোতভাবে। ব্যবসা, বাণিজ্য থেকে শুরু করে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সব খাতে। সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় দেশের শিক্ষাখাত। ওই বছরের মার্চেই বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে নানা সময় করোনার দাপট কমলে ধাপে ধাপে খুললেও পুরোপুরিভাবে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলেনি একবারও। তবে সম্প্রতি ওমিক্রনের দাপট কমায় স্বস্তি ফিরেছে দেশের সবগুলো খাতেই। এর মধ্যে অন্যতম দেশের শিক্ষাখাত। করোনার প্রকোপ কমায় ইতোমধ্যেই গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শুরু হয় সশরীরে পাঠদান। বাকি ছিল প্রাথমিক এবং কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। আজ থেকে খোলা শুরু হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয় আজ থেকেই শুরু হচ্ছে একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠদান কর্মসূচীও। মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয়েছে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ। এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনান খুব বড় আর কোন ঢেউ না এলে পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে ধীরে ধীরে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে আবারও শিক্ষাখাত স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে বলে মনে করছেন তারা। মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, আজ থেকে দেশের সব সরকারী-বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস শুরু হবে। তবে প্রাক-প্রাথমিকে (প্লে, নার্সারি, কেজি) ক্লাস শুরু হবে আরও দুই সপ্তাহ পর। ক্লাস পরিকল্পনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিদিন প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস হবে। স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রম শুরু হলেও ক্লাসে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। বিষয়টি নিশ্চিত করবেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। যেসব স্কুল একশিফটে পরিচালিত হয় তারা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে দুই শিফটে ক্লাস নিতে পারবেন। এ বিষয়টি তদারকি করেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে স্কুলগুলোকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুসারে প্রতিষ্ঠানে ক্লাস পরিচালনা করতে হবে। সকাল নয়টা থেকে বারোটা পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর এবং দুপুর বারোটা থেকে চারটা ১৫ মিনিট পর্যন্ত তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, আজই শুরু হচ্ছে একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস। এছাড়া আজ সকাল ৯টায় মতিঝিলিলের এনসিটিবি কার্যালয়ে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। যদিও এখনও শেষ হয়নি একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম। তবুও ক্লাস কার্যক্রম নির্ধারিত সময়েই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কান্তি সরকার। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমাদের ভর্তি কার্যক্রম প্রায় শেষ। বলা যায়, ৯৯ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে। সীমিত পরিসরে বাকি আছে কিছু শিক্ষার্থী। তারাও স্বল্পতম সময়েই ভর্তি হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি। এদিকে মঙ্গলবারই ঘোষণা করা হয়েছে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ। এ বিষয়ে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, মহামারী কাটিয়ে আমরা আবারও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছি। গত দুই বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের শিক্ষাখাত। এমনকি একবার পরীক্ষাও নেয়া যায়নি। ফলে অটোপাশের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের যেতে হয়েছে। এখন পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে। আমরা নতুন ছন্দ নিয়ে শুরু করছি সবকিছু। আশা করা হচ্ছে এবারের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে ১৯ জুন এবং এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে ২২ আগস্ট। ঘোষণা হয়েছে এসব পরীক্ষার সম্ভাব্য ফরম পূরণের তারিখও। এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরুর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ এপ্রিল থেকে, আর এইচএসসির ৮ জুন। ঘোষণায় আরও বলা হয়, এসএসসির প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা শুরু হবে ১৯ মে, এইচএসসির ১৪ জুলাই। একই সঙ্গে কোন কোন বিষয়ে পরীক্ষা, কোন কোন বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন, সিলেবাস, মানবণ্টন, পরীক্ষার সময়ও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে করোনার সতর্কতায় এ বছরও এসএসসি এবং এইচএসসির এসএসসি এবং এইচএসসিতে সব বিষয়ের পরীক্ষা হচ্ছে না। এসএসসিতে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং বিজ্ঞান এ চারটি বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে। আর এইচএসসিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়গুলোতে গতবারের মতো এবারও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস চলবে ২০ রমজান পর্যন্ত। ২১ রমজান থেকে শুরু হবে ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি। ঈদের ছুটি শেষে আবারও যথারীতি ক্লাস শুরু হবে জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের আঁধার কেটে গেছে। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রথম ডোজের টিকার আওতায় এসেছে প্রায় শতভাগ মানুষ। করোনার বিরুদ্ধে আমরা কঠিন একটা যুদ্ধ করে উত্তীর্ণ হয়েছি বলা যায়। যদিও আমরা করোনাকালীন সময়েও শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দূর করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ চালিয়ে গিয়েছি। তবে এবার থেকে সশরীরে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটবে বলে মনে করছি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন সময়েও বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে ধরা শেখ হাসিনার সরকারের অনন্য কৃতিত্ব। বিনামূল্যে সম্পূর্ণ রঙিন পাঠ্যপুস্তক বিতরণ বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। ওই বছরের শেষ দিকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা নিম্নমুখী হলেও ২০২১ সালের এপ্রিলের পর থেকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। আর ২০২২ সালের শুরুতেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আবারও চোখ রাঙাতে শুরু করে। দ্রুত বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যু। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে সরকারকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করতে হয়। এর আগে গত বছরের ২৯ মার্চ করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক নির্দেশনায় জরুরী সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারী, বেসরকারী অফিস, শিল্প কারখানা ৫০ ভাগ জনবল দিয়ে পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে গর্ভবতী, অসুস্থ ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের বাড়িতে অবস্থান করে কাজ করার ব্যবস্থা করতে বলা হয়। পরবর্তী সময়ে ৪ এপ্রিল থেকে সরকারী সব দফতরে অর্ধেক জনবলে অফিস কার্যক্রম শুরু হয়।
×