ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবির হাসান সুজন

নারী ও শিশু পাচাররোধে টিকটক, লাইকি বন্ধ করা জরুরী

প্রকাশিত: ২২:০৯, ১৭ অক্টোবর ২০২১

নারী ও শিশু পাচাররোধে টিকটক, লাইকি বন্ধ করা জরুরী

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন মানবজীবনকে নানা ক্ষেত্রেই সহজ করলেও এর অপব্যবহারে ভয়ঙ্কর বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে সমাজে। জীবনমান সহজ করার পাশাপাশি ও সুস্থ বিনোদনের জন্য এসব প্রযুক্তি পণ্যের উদ্ভাবন হলেও একশ্রেণীর মানুষ সেগুলো নেতিবাচক কাজেই বেশি ব্যবহার করছে। বর্তমান সময়ে সব বয়সের মানুষের মধ্যে ক্ষুদ্র ভিডিও শেয়ারিং এ্যাপ টিকটক ও লাইকির জনপ্রিয়তা ব্যাপক হারে বাড়ছে। যার ফলে সাইবার বুলিং, নারী পাচার, নির্যাতন, ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সমাজের অভিনয় জগত থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত জনপ্রিয় অনেককেই এই এ্যাপসগুলো ব্যবহার করতে দেখা যায়। টিকটকের যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। এটি ২০১৮ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড করা এ্যাপ্লিকেশন ছিল। টিকটক ভিডিও বাংলা, আরবী, ইংরেজী, হিন্দীসহ প্রায় ৪০টি ভাষায় প্রচলিত। অপরদিকে সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিগো টেকনোলজি ২০১৭ সালের জুলাইয়ে তৈরি করে লাইকি। বিশ্বের নানা দেশে প্রায় ৩৭টি ভাষায় তৈরি করা যায় লাইকি ভিডিও। দিন দিন টিকটক এবং লাইকি বিনোদনের পরিবর্তে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ভিডিওতে নিজের ব্যঙ্গাত্মক মুখভঙ্গি কিংবা রোম্য সংলাপের ঠোঁট মেলানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে তরুণ প্রজন্মসহ সব শ্রেণীর মানুষ। সমাজের একটি বৃহৎ অংশ টিকটক, লাইকির অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব এ্যাপসের ব্যবহার থেকে তাদের বের করে আনতে না পারলে জাতি খুব তাড়াতাড়ি নৈতিক অবক্ষয়ের করাল গ্রাসে ডুবে যাবে। সুস্থ ধারার ভিডিওর পাশাপাশি এই এ্যাপগুলোতে পাওয়া যায় যৌন উস্কানিমূলক ভিডিও, যা কোমলপ্রাণ তরুণদের মনে হতাশা সৃষ্টিসহ, নারীর প্রতি আসক্তি বাড়িয়ে দেয়। এমনকি টিকটকের মাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বাংলাদেশ থেকে ভারত, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নারী পাচার করতেও দেখা যায় অনেককে। টিকটক, লাইকি যেন এখন নারী ও শিশু পাচারকারীদের মূল সংগঠন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মান কিংবা বক্তব্য কোনটার ওপরে প্রাধান্য না দিয়েই তৈরি হচ্ছে ভিডিও। সে সব ভিডিওতে প্রাধান্য পায় শুধু যৌনতা, অশ্লীলতা। এ ছাড়া ট্রল, সহিংসতাসহ নানা রকম কুরুচিপূর্ণ আচরণ। মনোযোগ আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ ভিডিও তৈরি করা হয়। এমকি ধর্মীয় উস্কানিমূলক বিষয়ও পাওয়া যায়। যার ফলে দেশে জঙ্গী তৎপরতা বাড়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। রাজধানীর প্রায় সব বিনোদন কেন্দ্র এখন টিকটকারদের আস্তানা। রাতভর চলতে থাকে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা। অনেকেই না বুঝে রাতারাতি তারকা হওয়ার উদ্দেশ্যে যোগ দেয় এসব গ্যাং-এ। তারকা বানিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয় অনেক তরুণীকে। গ্যাংয়ের কবলে পড়ে মাদকাসক্তিতে আসক্ত হয়ে পড়ে অনেকেই। এসব এ্যাপের ব্যবহার তরুণ প্রজন্মকে বিপথগামী করছে। নষ্ট হচ্ছে নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। তরুণ ও কিশোররা এসব গ্যাংয়ে জড়িয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে, হয়ে উঠছে সহিংস। লাইভে এসে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দিয়ে এবং যৌনতার ফাঁদে ফেলে কৌশলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কাড়ি কাড়ি টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছে। টিকটক কিংবা লাইকির নেতিবাচক প্রভাব যে শুধু অনলাইনেই বিচরণ করছে তা নয়, বাস্তব সমাজেও পড়ছে। তাদের চুলের কালার, পোশাকের ভেতরেও নেই কোন মার্জিত ছাপ। সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে সামনে রেখে এর মধ্যেই ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো টিকটক এবং লাইকি নিষিদ্ধ করেছে। আগামী দিনে এমন ধরনের এ্যাপের নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাঁচতে এবং নতুন প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে আমাদের দেশেও টিকটক এবং লাইকি বন্ধ করতে হবে। জাতিকে আলোর পথ দেখাতে, নৈতিক শিক্ষা দিতে বা অপসংস্কৃতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এসব মাধ্যম বন্ধ করতে হবে। নতুবা সমাজ অন্ধকারে ধাবিত হবে, ভবিষ্যত প্রজন্ম মেধাশূন্য হয়ে যাবে। তাই ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচাতে আমাদের আরও তৎপর হতে হবে। লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]
×