ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বই ॥ বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সংবিধান লঙ্ঘন

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ২৫ জুন ২০২১

বই ॥ বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সংবিধান লঙ্ঘন

বাঙালীর অধিকার ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এ দেশের গণমানুষের মুক্তির জন্য পরিচালিত সকল আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রধান চালিকাশক্তি। ১৯৭১ সালে তাঁর নেতৃত্বেই আমরা মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জন করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। বজ্রকণ্ঠের অধিকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা এক মহান পুরুষ। দীর্ঘ সংগ্রাম দ্বারা তিনি ইতিহাসের বরপুত্র হিসেবে তিনি বাংলাদেশের জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রী হন। দক্ষিণ এশিয়ায়, এমনকি সমগ্র বিশ্বেই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিশ্বের ইতহাসে আব্রাহাম লিংকন, মহাত্মা গান্ধী, জন এফ কেনেডি, মার্টিন লুথার কিং, ললুম্বা, শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী¯ তারা প্রত্যেকেই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিশ্বের যে কোন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পরিষ্কার পার্থক্য লক্ষণীয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, যা বিশ্বরাজনীতির ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল। বিশ্বরাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক নেতাকে এতটা নির্মমভাবে সপরিবারে পৃথিবী ত্যাগ করতে হয়নি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট রাতের অন্ধকারে এ জাতি হারিয়েছে তাদের জনককে। যদিও শেখ রাসেলসহ অনেকেই রাজনীতির বাইরে ছিলেন, তবুও কেন তাদের হত্যা করা হয়েছিল সে প্রশ্নে জবাব আজও অমীমাংসিত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি ধ্বংস করা হয়েছিল। খুনিদের বিচার না করে দায়মুক্তি দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হয়েছিল। তার ধারাবাহিকতায় সংবিধান লঙ্ঘন করে একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর এক বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে জিয়া বাংলাদেশের চারটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতি যথা- গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বিসর্জন দেন। তিনি বলেন, তার চারটি নীতি হলো- সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র প্রতি অবিচলিত বিশ্বাস, আত্মনির্ভরতা, সমাজের সকল স্তর কর্তৃক সমর্থিত প্রশাসন এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে ১৯৭৯ সালের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত মোশতাক, সায়েম ও জিয়া মোট ২৩টি অধ্যাদেশ জারি করেন। এর মধ্যে মোশতাক তিনটি, সায়েম ১০টি এবং জিয়া ১০টি অধ্যাদেশ জারি করেন। শুধু তাই নয় বরং সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ক্যান্টনমেন্টে নির্বিচারে হত্যা করা হয় অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের। খুনিদের পুরস্কৃত করা জিয়াউর রহমান নিজেও হত্যাকাণ্ডের নির্মম শিকার হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে জাতির জনকের খুনিদের, জেল হত্যার খুনিদের, যুদ্ধাপরাধীদের, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদেরসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করে প্রমাণ করেছেন, কেউ-ই আইনের উর্ধে নয়। অপরাধীদের দাম্ভিকতা চ‚র্ণ করে দিয়ে আইনের শাসন ফিরিয়ে এনেছেন। স্নেহের আইনজীবী ও গবেষক জাহাঙ্গীর আলম সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যা বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সংবিধান লঙ্ঘন গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু হত্যা বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সংবিধান লঙ্ঘন প্রসঙ্গ এবং আইনের শাসন ও মামলার সওয়াল জবাব নিয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর ওপর প্রাঞ্জল ভাষায় সংক্ষেপে; কিন্তু বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করেছে গ্রন্থটিতে। আবদুল বাসেত মজুমদার
×