ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা অর্থ সহায়তার পূর্ণ স্বছতা নিশ্চিত করার দাবি

প্রকাশিত: ১৯:৩০, ৬ মে ২০২১

রোহিঙ্গা অর্থ সহায়তার পূর্ণ স্বছতা নিশ্চিত করার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বাস্তবায়িত কর্মসূচিগুলোকে টেকসই করতে কর্মসূচি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে স্থনীয়দের সক্রিয় অংশগ্রহণ অতি জরুরি। তাছাড়া প্রাপ্ত অর্থের সদ্বব্যবহারের জন্য মাঠ পর্যায়ে রোহিঙ্গা কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিতে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে, এতে করে পরিচালন ব্যয় কমে এবং রোহিঙ্গারা অধিকতর পরিামান প্রত্যক্ষ সহায়তা পেতে পারে। রোহিঙ্গা সাড়াদান পরিকল্পনা (জেআরপি) ২০২১ নিয়ে কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরাম আয়োজিত “রোহিঙ্গা সাড়াদান পরিকল্পনা (জেআরপি) ২০২১: প্রকৃত কার্যকর? নাকি শুধু নামেই কেবল পরিকল্পনাঃ ভবিষ্যতের চিন্তা করার এটিই সময়: স্থানীয়করণ এবং গণতান্ত্রিক মালিকানা" শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচকবৃন্দ এসব কথা বলেন। সংস্থাটির কো-চেয়ার রেজাউল করিম চৌধুরী এবং আবু মোর্শেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-২ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ, কক্সবাজার জেলায় কোভিড ১৯ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সেবা ও অন্যান্য সরকারি কর্মসূচির সমস্বয়কারী মোঃ হেলালউদ্দীন আহমেদ। ওয়েবিনারে অতিথি হিসেবে যোগদান করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, এভভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম, উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ আরও অনেকে। ওয়েবিনারে আয়োজকদের পক্ষ থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে কোস্ট ট্রাস্টের মো. মজিবুল হক মনির উল্লেখ করেন, ২০১৭ থেকে ২০২০ এর অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য গড়ে ৪২৮ ডলার অর্থ সহায়তা এসেছে। আমাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী প্রতিটি পরিবার খাদ্য এবং খাদ্য-বর্হিভূত ত্রাণ, আশ্রয়, বিভিন্ন উপকরণ ইত্যাদি সরাসরি সেবা ও ত্রাণ পেয়েছে ১৩০ ডলারের, অবশিষ্ট অর্থের কতটুকু অন্যান্য সেবাখাতে খরচ হয়েছে, কতটুকুই বা খরচ হয়েছে পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা খরচ হিসেবে- তার সুস্পষ্ট হিসাব স্বছতার সঙ্গে প্রকাশ করা জরুরি। রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাব দীর্ঘ, তাই স্বল্প সময়ের জন্য নয়, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পরিকল্পœনা গ্রহণ ও বাস্ততবায়নে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ না হলে কোনও উদ্যোগই টেকসই হবে না। তিনি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরেন, যেমন: রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি একক কর্তৃপক্ষ থাকতে হবে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো দু'তলা করার চিন্তা করতে হবে, রোহিঙ্গা কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত সকল সংস্থাকে কক্সবাজারের পরিবেশ পুনরুদ্ধার এবং স্থানীয়করণের পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে। সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, রোহিঙ্গা কর্মসূচির জন্য কোনটি প্রয়োজনীয় আর কোনটি বিলাসিতা সেটা চিহ্নিত করতে হবে, অপচয় রোধ করে অর্থের সদ্ব্যবহার করতে হবে। কক্সবাজারের উন্নয়নে সরকারের অনেকগুলো মেগা প্রকল্প আছে, কিন্তু‘রোহিঙ্গা সংকট সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য হুমকি তৈরি করছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্পদ্রায়ের এখন সবচাইতে গুরুত্ব দিতে হবে রোহিঙ্গাদেরকে নিজের দেশে ফেরত নেওয়ার জন্য মায়ানমারকে বাধ্য করার বিষয়ে। সিনিয়র সচিব মোঃ হেলালউদ্দীন আহমেদ বলেন, মায়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন সংকটে পড়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছে, কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের কষ্ট তাই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সংকট মোকাবেলায় কর্মসূচি গ্রহণে তাই স্থানীয়দের মতামত-অংশগ্রহণ প্রাধান্য দিতে হবে। জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, রোহিঙ্গা কর্মসূচিগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে সুসমš^য়ের কোনও বিকল্প নেই। এভভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট। রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, অথচ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণে তাদের কোনও মতামত নেওয়া হচ্ছে না। এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা যখন কক্সবাজারে আসে তখন স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি স্থানীয় এনজিওগুলো নিজেদের উদ্যোগে ঝাপিয়ে পড়েছিলো, তাই মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমগুলো স্থানীয় এনজিওর নেতৃতত্বেই হতে হবে, কারণ তারা স্থানীয়দের প্রতি জবাবদিহি করে। হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো কী পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করছে, কোন খাতে তা খরচ করছে তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা উচিৎ। সব পরিকল্পনাই গ্রহণ করতে হবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে। দুর্যোগ ফোরামের নঈম গওহর ওয়ারা বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খাদ্য পণ্য কক্সবাজার থেকেই সংগ্রহ করা উচিৎ। যেমন বাইরে থেকে যদি না এনে কক্সবাজার থেকেই লবণ, শুটকি ইত্যাদি সংগ্রহ করা হয়, তবে সেটা কক্সবাজারের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শরণার্থী বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, রোহিঙ্গা কর্মসূচিতে কাজ করার জণ্য যারা বিদেশ থেকে আসছেন, তাদেরকে স্থানীয়দের মধ্যে প্রযুক্তি ও দক্ষতা হস্তান্তর করতে হবে। অক্সফামের দেশীয় প্রধান দীপঙ্কর দত্ত বলেন, বাংলাদেশেই অন্যান্য অনেক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে স্থানীয়করণ নিশ্চিত করা গেছে, তাই রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনাতেও এটা সম্ভব। মাল্টিজার ইন্টারন্যাশনালের দেশীয় প্রধান রাজন ঘিমিরে বলেন, জেআরপি রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরতে পারে না, তহবিল এবং কর্মসূচির সামগ্রিক চিত্র জেআরপিতে আসা প্রয়োজন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ব্যারিস্টার মনজুর মোরশেদ বলেন, লোকালাইজেশন রোডম্যাপ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে প্রায় এক বছর আগে, এটা প্রকাশ করা উচিৎ। রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, স্থানীয়দের জন্য মোট বরাদ্দের ২৫ শতাংশ ব্যয় করার কথা ছিলো, কিন্ত সেটার বাস্তবতা অনেক দূরে। হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, জেধারপি’র অধীনে আসা অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, ২৫ শতাংশ স্থানীয়দের মধ্যে ব্যবহার বরা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং দল গঠন করতে হবে। ইপসার প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, স্থানীয়করণ কোনও দয়া দাক্ষিণ্যের বিষয় নয়, এটা বরং আমাদের অধিকার। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চুক্তিমালাার আলোকে এই নৈতিক অধিকারটি স্বীকৃত। জাতিসংঘ সংস্থাসমূহের পরিচালন ব্যয় প্রচুর, অথচ তারা যথন স্থানীয় এনজিওকে কোনও প্রকল্প দেয়, সেখানে কোনও পরিচালন ব্যয় দিতে চায় না। এটা উচিৎ নয়। মুক্তি কক্সবাজারের প্রথান নির্বাহী বিমল দে সরকার বলেন, জেআরপি ২০২১ স্থানীয়করণ পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে। অবিলম্বে লোকাইলাইজেশন রোডম্যাপ প্রকাশ করতে হবে এবং এর সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। হেলপ কক্সবাজারের আবুল কাশেম বলেন, স্থানীয় এনজিওগুলো স্বছতা-জবাবদিহিতার কথা বললেই নানাভাবে তাদেরকে এড়ানোর প্রবণতা দেখা যায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে। কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে আইএসিসিজ এবং জাতিসংঘকে অবশ্যই আইএএসসি নীতিমালা মেনে চলতে হবে। আইএসসিজি যেন সরকারের সমান্তরাল সংস্থায় পটরিণত না হয়, এটিকে বরং সরকারের সহযোগী সংস্থা হিসবে কাজ করতে হবে। ওয়েবিনারে আরও বক্তৃতা করেন, রাশেদা বেগম, সদস্য, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ, জনাব মোজাফফর আহমেদ, প্যানেল চেয়ারম্যান, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ, আবু তাহের সভাপতি এবং জনাব মুজিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার প্রেস ক্লাব এবং মোঃ মিজানুর রহমান, চেয়ারম্যান প্রত্যাশা ইয়ুথ ক্লাব/সোশ্যাল মিডিয়া কর্মী, একেএম জসিম উদ্দিন (এডাব), রফিকুল ইসলাম (এফএনবি), এইচ এম নজরুল ইসলাম (বাপা কক্সবাজার), এসএম আনোয়ার হোসেন (উখিয়া প্রেস ক্লাব)।
×