ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নে জোর দেওয়ার আহ্বান তিন অর্থনীতিবিদের

প্রকাশিত: ১৯:১৮, ১৭ এপ্রিল ২০২১

কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নে জোর দেওয়ার আহ্বান তিন অর্থনীতিবিদের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা ও করোনাভাইরাস মহামারী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নে জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের তিন অর্থনীতিবিদ। শনিবার দুপুরে ‘শিল্পায়ন: শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ শিরোনামে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত এক ওয়েব সেমিনারে অংশ নিয়ে এ আহ্বান জানান তারা। অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় এতে আলোচক হিসেবে অংশ নেন ঢাকা স্কুল অব ইকনোমিকস-এর পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিক-উজ জামান এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান। গণমানুষের অর্থনীতিবিদ হিসেবে খ্যাত অধ্যাপক আবুল বারকাতের সদ্য প্রকাশিত ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ গবেষণাগ্রন্থটির বিষয়বস্তু ঘিরে ১৩ সিরিজের আলোচনা সভার এ ষষ্ঠ পর্বটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, একসময় বাংলাদেশের ময়মনসিংহ থেকে কলকাতা পর্যন্ত রেললাইন করা হয়েছিল কেবল পাট পরিবহনের জন্য, মানুষের জন্য নয়। আবুল বারকাত তার বইয়ে যে কথাটা বলেছেন আমি তার সঙ্গে একমত যে প্রাকৃতিক সম্পদে সবারই সমান মালিকানা থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ পরিস্থিতি এড়াতে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নে আমাদের ফিরে যেতে হবে। স্বাধীনতার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পায়নের বৈষম্য তুলে ধরে কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, “ওই সময়ের মিল মালিকরা ছিলেন সবাই পশ্চিম পাকিস্তানের। আমাদের পাটচাষীরা দাম পেতো কম। এই শোষণ ও সম্পদ বন্টনে বৈষম্য আবুল বারকাতের বইয়ে উল্লেখ আছে।” অধ্যাপক ড. শফিক-উজ জামান বলেন, “প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে কার্লস মার্ক্সের একটা কথা আছে এমন যে- আমরা কখনও প্রকৃতিকে জয় করতে পারবো না। প্রকৃতিকে জয় করলে তার ক্ষতি হবে, বরং প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান করতে হবে। আজ করোনাভাইরাসের প্রকোপে আমরা যখন ঘরবন্দি তখন মার্ক্সের এ কথাটা অনেক প্রাসঙ্গিক। আগে পাট ছিলো আমাদের শিল্পায়নের মাধ্যম, কিন্তু আশির দশকের শেষদিক থেকে পোশাকশিল্প হয়ে গেলো আমাদের শিল্পায়নের মূল মাধ্যম। এটা সঠিক যে এ খাতটি নারীদের জন্য ব্যাপক আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করেছে। কিন্তু আজ নদী দূষণের পেছনে শিল্পকারখানা ও তার বর্জ্য ভূমিকা রাখছে, মিঠা পানি ও উর্বর ভূমি ধ্বংস হচ্ছে প্লাস্টিকে। কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নের সুবিধাগুলো উল্লেখ করে অধ্যাপক শফিক-উজ জামান বলেন, এতে কৃষিপণ্যের দাম বাড়বে। কৃষক আরও টাকা পাবে। কৃষকের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে। মনে রাখতে হবে কৃষক একইসঙ্গে উৎপাদক ও শিল্পপণ্যের ক্রেতা।
×