ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লা স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ ॥ সালাউদ্দিন

প্রকাশিত: ০০:১৮, ২৪ জানুয়ারি ২০২১

কুমিল্লা স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ ॥ সালাউদ্দিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আদিনাম কমলাঙ্ক। এর অপভ্রংশ পদ্মফুলের দীঘি। কমলাঙ্ক থেকে কুমিল্লা। যে জেলার কথা বলা হচ্ছে তা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। খাদি কাপড় ও রসমালাইয়ের জন্য বিখ্যাত। ধর্মসাগর বাংলাদেশের কুমিল্লা শহরে অবস্থিত একটি বিশাল জলাধার। এটি একটি প্রাচীন দীঘি। এটি কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। ধর্মসাগরের আয়তন ২৩.১৮ একর। ত্রিপুরার অধিপতি মহারাজা প্রথম ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ সালে ধর্মসাগর খনন করেন। এই অঞ্চলের মানুষের জলের কষ্ট নিবারণ করাই ছিল রাজার মূল উদ্দেশ্য। মহারাজা ধর্মমাণিক্যের নামানুসারে এর নাম রাখা হয় ধর্মসাগর। কুমিল্লা জেলা স্টেডিয়াম অবস্থিত এই ধর্মসাগরের পাশেই। স্টেডিয়ামটি প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এটি মূলত প্রথম শ্রেণী ও লিস্ট ‘এ’ তালিকার ক্রিকেটের মাঠ। তবে এখন বর্তমানে স্টেডিয়াটি ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের জন্য। বসুন্ধরা কিংস এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এই স্টেডিয়ামকে তাদের হোম ভেন্যু করেছে। এই স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত’র (২ নবেম্বর, ১৮৮৬-২৯ মার্চ, ১৯৭১) নামে। যিনি একজন বাঙালী আইনজীবী, সমাজকর্মী, ভাষা সৈনিক ও রাজনীতিবিদ। ১৯৪৭ সালের পর একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিক হিসেবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে তিনি অধিবেশনের সকল কার্যবিবরণী ইংরেজী ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাতেও রাখার দাবি উত্থাপন করেন। তিনি পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তানে জনসংখ্যাই বেশি এবং তারা বাঙালী, সেহেতু অবশ্যই বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের সকল কার্যাবলীর জন্য ব্যবহার করা উচিত এবং পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া উচিত... এই দাবি উত্থাপন করেছিলেন। পরে তার এই দাবি থেকেই জন্ম হয়েছিল ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের। শনিবার কুমিল্লার এই স্টেডিয়াম ছবির মতো নয়নাভিরাম, অপরূপ সুন্দর মাঠ। অন্তত ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে অনেক সুন্দর তো বটেই। ১০৫/৬৮ মিটার আয়তনের চমৎকার এই মাঠটি তৈরি করেছেন মোহাম্মদ ইয়াহিয়া। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সাবেক প্রশাসক এবং সাবেক জাতীয় এ্যাথলেট জনকণ্ঠকে জানান, ‘এই মাসের ২ তারিখে মাঠটি তৈরির কাজ শুরু করি। শেষ হয় ১৭ জানুয়ারি। বসুন্ধরা কিংসই আমাকে মাঠটি তৈরির দায়িত্ব দিয়েছে। ৬৩ বছর বয়সী ইয়াহিয়া এর আগে শেখ জামাল ধানমন্ডি, বসুন্ধরা কিংস, আশুলিয়ার ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি মাঠ, ধানমণ্ডির সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব মাঠ, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এবং রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি মাঠসহ অনেক মাঠ তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, সঠিক পরিচর্যা থাকলে মাঠের আয়ুষ্কাল বেড়ে যাবে। সারা বছরই মাঠ পরিচর্যা করতে হবে। নইলে মাঠের অবস্থা মানহীন হয়ে পড়বে এবং তাতে খেলার মানও খারাপ হতে বাধ্য।’ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন শনিবার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে এসেছিলেন বুসন্ধরা কিংস-ব্রাদার্স ইউনিয়ন ম্যাচটি দেখতে। খেলা শুরুর আগে মাঠে ঢুকেই তার সঙ্গে ইয়াহিয়ার দেখা হয়। দেখা হতেই তিনি বলেন, ‘মাঠ দেখে বুঝেছি মাঠটি তুমিই বানিয়েছ।’ সালাউদ্দিনের এই কথাকে প্রশংসা হিসেবেই নিয়েছেন ইয়াহিয়া । সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘আমাদের যে নতুন ভেন্যুগুলো হয়েছে সেগুলো নিজের চোখে দেখে এটা কেমন সেটা দেখতে এসেছি। এখানকার মাঠের কন্ডিশন খুবই ভাল। গ্যালারিও ভাল। করোনাভাইরাসের জন্য তো গ্যালারি তো ক্লোজড ঝিল। তবে আজকে দেখলাম প্রচুর দর্শক এসেছে। এটা অবশ্য ইতিবাচক। তাদের সঙ্গে আলাপ করে সেটা বুঝলাম এবং আমিও আশাকরি ভবিষ্যতে ফুটবলের জন্য এটা ভাল একটা ভেন্যু। আয়োজকদের এ জন্য ধন্যবাদ জানাই। ভবিষ্যতে এখানে দু’চারটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ আমরা খেলব।’ সালাউদ্দিন আরও যোগ করেন, ‘আমি তাদের (কুমিল্লা ডিএফএ) সঙ্গে আলাপ করব যেন প্রেসবক্সটা একপাশে নিয়ে আসে।’
×