ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে ডেঙ্গু সমস্যা

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০

করোনাকালে ডেঙ্গু সমস্যা

বর্তমানে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। ক্রমেই বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। একই সঙ্গে গত বছরের মতো মারাত্মক আকারে না হলেও ডেঙ্গুজ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। জ্বর, শরীর ব্যথা, হঠাৎ খাবারের প্রতি অনীহা উভয় রোগেরই প্রাথমিক লক্ষণ। কোন কোন শিশু আবার রক্তক্ষরণ, হঠাৎ নিম্নগতির ব্লাড প্রেসার নিয়েও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে একটি বেসরকারী হাতপাতালে ডেঙ্গু শক সিন্ড্র্রোম নামক সমস্যায় শিশুমৃত্যু বর্তমান পরিস্থিতির ভয়াবহতাকেই জানান দেয়। গত কয়েক বছর বর্ষাপরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু সমস্যা দেখা গেলেও এ বছর মশাবাহিত এর রোগটি শীতের শুরুতে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বর মানেই করোনার ভয় থাকায় বেশিরভাগ শিশু প্রাথমিক অবস্থায় শুধুমাত্র অনলাইন চিকিৎসার দ্বারস্থ হন। অনলাইনে উপসর্গ শুনে পরামর্শ দেয়া সম্ভব হলেও শারীরিক পরীক্ষা করার সুযোগ নেই। ডেঙ্গুজ্বর প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণ জ্বর বলে মনে হলেও পরবর্তীতে অনেক শিশু ব্লাড প্রেসারের নিম্নগতি, পেটে-বুকে পানি জমাসহ নানা ধরনের ঝুঁকি দেখা দেয়। আবার বার বার ডেঙ্গুজ্বর হলে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শিশুর জীবন মারাত্মক শঙ্কার মাঝে পতিত হয়। তাই সামান্য জ্বর, গায়ে র‌্যাশ, শারীরিক দুর্বলতা পরিলক্ষিত হলে দ্রুত শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। এ সময় শিশুকে ঘন ঘন তরল খাবার দিতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা ভাল। যথাসম্ভব দ্রুত চিকিৎসা শুরু করবেন যাতে মারাত্মক ও জটিল ডেঙ্গুরোগ হতে রক্ষা পাওয়া যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে এসব শিশুর জন্য নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র তথা পিআইসিইউ প্রয়োজন। আমাদের দেশে পিআইসিইউ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অপ্রতুলতার কারণে এ ধরনের শিশুদের চিকিৎসা ব্যাহত হয়। ইদানীং কিছুসংখ্যক শিশু করোনা ও ডেঙ্গুজ্বর উভয় ভাইরাসজতিন রোগে আক্রান্ত হয়। এরা বেশি চিকিৎসা ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। রক্তক্ষরণ, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট অথবা নিস্তেজ হয়ে যাওয়া শিশুর চিকিৎসা যেমন ব্যয়বহুল তেমনি সাধারণ হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল এবং অনেক ক্ষেত্রে সম্ভবপর হয় না। শিশুর জ্বর হলে অবশ্যই শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। শীতের শুরুতে এমনিতেই শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা, জ্বর-সর্দি দেখা দেয়। তাই শিশুর সামান্য সমস্যা দেখা দিলেও অবহেলা না করে সতর্ক থাকুন, ডেঙ্গুর প্রকোপ হতে বাঁচার জন্য মশার বংশবিস্তার রোধ করা প্রয়োজন। নিয়মিত ঘরের আশপাশের জলাশয় পরিষ্কার রাখা, টবে পানি জমতে না দেয়া, অযথা বালতিতে পানি ধরে না রাখাসহ কতিপয় সতর্কতা ডেঙ্গু থেকে রেহাই দিতে পারে। আর করোনা থেকে রক্ষার জন্য শিশুকে ঘরে রাখুন। পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার দিন। যথাসম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। মাস্ক ব্যবহার করুন। সর্বোপরি ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ ও শিশুদের রক্ষা করুন। ডেঙ্গু ও করোনামুক্ত বিশ্বের অপেক্ষায় বেড়ে উঠুক আমাদের শিশুরা ডাঃ মানিফা আফরিন এমবিবিএস, ডিসিএইচ, এমডি (শিশুরোগ) উ"চতর প্রশিক্ষণ শিশুরোগ আইসিইউ (আইপিজিএমআর, চণ্ডীগড়, ভারত) শিশু ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক (সিসি)-শিশু ও নবজাতক বিভাগ ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা মোবাইল : ০১৯১৫৪৪৮৫০০
×