ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

তিনদিনের বিরামহীন বৃষ্টিতে পচে গেছে শীতকালীন শাক-সবজি

প্রকাশিত: ১৬:০৭, ২৫ অক্টোবর ২০২০

তিনদিনের বিরামহীন বৃষ্টিতে পচে গেছে শীতকালীন শাক-সবজি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ ১৬ শতক জমিতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে শসার আবাদ করেছিলেন চাষী সোহেল হাওলাদার। কেবল ফলন ধরেছে। এক বার তুলে হাজার পাঁচেক টাকা বিক্রি করেছেন। এখন সহস্রাধিক গাছের ফলনসহ সকল শসা গাছ শুকিয়ে নেতিয়ে গেছে। অন্তত দেড় লাখ টাকা বিক্রি করতে পারতেন। কুমিরমারা গ্রামের এই চাষী এখন নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এভাবে ৬৬ শতক জমিতে শসা ছাড়াও লাল শাক, মুলা, বেগুন, মরিচ এবং লাউয়ের আবাদ করেছিলেন্। এখন দু’চোখে সব অন্ধকার দেখছেন। সোমবার সকালে একজন কামলা নিয়ে বরবটির ক্ষেতের পরিচর্যা করছিলেন। জানালেন, অন্তত দশ মণ লাল শাক ক্ষেতেই পচে গেছে। নুর আলম হাওলাদার (৫৫) দেখালেন, প্রায় ১২ শ’ বোম্বাই মরিচ গাছে কেবল ফলন ধরেছে। এক দফা এক হাজার মরিচ তুলে সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। আরও ৬০-৭০ হাজার টাকা বিক্রির আশা ছিল এ কৃষকের। কিন্তু তিনদিনের বিরামহীন রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতে সব শেষ হয়ে গেছে। এচাষীর শসা গাছগুলোও মরে কুকড়ে গেছে। নেতিয়ে গেছে বেগুন চারাগুলো। এভাবে দুলাল চৌধুরির ৪৪ শতক জমির লাল শাক, লাউ, বেগুন গাছ সব নষ্ট হয়ে গেছে। এ কৃষক জানালেন প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করে এসব সবজির ক্ষেত করেছিলেন। নিম্নাচাপের প্রভাবে বিরামহীন বৃষ্টিতে সবজির গ্রাম খ্যাত কলাপাড়ার কুমিরমারা গ্রামের সকল চাষীর আগাম শীতকালীন সবজি ক্ষেতসহ পচে গেছে। সুলতান গাজী জানালেন ১৫ শতক জমির বেগুন চারা সম্পুর্ণভাবে পচে গেছে। জাকির হাওলাদার জানান, ছয় বিঘা জমির সবজির ক্ষেত সম্পুর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। একই দশা গ্রামের শাহজাহান মৃধা, মাসুদ গাজী, নুর আলম হাওলাদার, মিজানুরের। শুধু কুমিরমারা নয়, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মজিদপুর, এলেমপুর, ফরিদগঞ্জ, বাইনতলা গ্রামের শতকরা ১০০ জন চাষী এভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এসব মানুষ ধার দেনা করে সবজির আবাদ করেছেন। কুমিরমারা গ্রামের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ সবজির আবাদ করেছেন। বিরামহীন বৃষ্টিতে প্রত্যেক চাষীর গড়ে ৫০ হাজার থেকে দেড়-দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন দুই দিন বৃষ্টি নেই। রোদ উঠেছে। কিন্তু বৃষ্টির পানি নামেনি। মানুষগুলো নিঃস্ব হয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। নতুন করে ফের ক্ষেত তৈরিতে নামবেন তা অর্থসঙ্কটে পারছেন না। আমন ধানের তেমন একটা ক্ষতি হয়নি এই জনপদের। কিন্তু ১২ মাস সবজির আবাদ করা মানুষগুলো এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। কৃষক জাকির হাওলাদার জানান, এই মুহুর্তে তাঁদের বিনাসুদে কিংবা ৪-৫% সুদে ঋণ দেয়া প্রয়োজন। কোমর সোজা করে দাড়াতে বীজ কেনার মতো টাকা সংগ্রহ করতে না পারলে এসব সবজি চাষীরা আর ক্ষেত তৈরি করতে পারবে না। কৃষকরা এও জানান, এ বছর করোনাকালে সবজির দাম পাননি। এরপরে আমফানের তান্ডব, পরপরই অতিবৃষ্টির একটি বড় ধকল আগেই গেছে। এখন যেন সব শেষ হয়ে গেল। এসব কৃষকের এখন ঘরে নেই খোরাকির চাল, নেই ক্ষেত তৈরির জন্য কামলা মজুরি দেয়ার মতো সঙ্গতি। চোখে না দেখলে এসব চাষীর সর্বনাশা দৃশ্য বোঝার উপায় নেই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, সবজি চাষীদের বিনামূল্যে বীজসহ বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শীঘ্রই প্রকৃত চাষীদেরকে বিতরণ করা হবে।
×