ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সন্তোষ দাস

দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ২১:১০, ২২ অক্টোবর ২০২০

দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা

পৃথিবী থেকে করোনা বিদায় নেয়নি। বরং আরও জেঁকে বসেছে এবং খুব দ্রুত বিদায় নেবে এমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। অ১৬ অক্টোবরের খবর অনুযায়ী গত চব্বিশ ঘণ্টায় পৃথিবীতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড ছুঁয়েছে-প্রায় চার লাখ জন। তার আগের দিন (১৫ অক্টোবর) ছিল ৩,৮৪,৫৫৯ জন। এটাও ছিল রেকর্ড। অর্থাৎ এখন প্রতিদিন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে বিশ্বে গড়ে প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ আক্রান্ত হচ্ছিল এবং মারা যাওয়ার সংখ্যা ছিল পাঁচ থেকে ছয় হাজার। গত বছর ডিসেম্বরে চীনে করোনার প্রাদূর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এ বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বমাহামারী ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। মার্চ-এপ্রিল নাগাদ আমাদের উপমহাদেশে করোনা হানা দেয়। ৮ মার্চ আমাদের দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে আক্রান্তের হার এবং মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে। মাঝের কয়েক মাস গড়ে প্রতিদিন তিন হাজার আক্রান্ত এবং পঞ্চাশ জন মৃত্যুবরণ করে। গত মাস দুয়েক আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজারের নিচে এবং মৃত্যুর সংখ্যা কুড়ির নিচে নেমে আসে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আমাদের দেশ ধীরে ধীরে করোনা মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। আসলে আমাদের এখানে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা কমানো হয়েছে অথবা মানুষই পরীক্ষার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তাই আপাত মনে হচ্ছে করোনা বিদায় নিয়েছে। অন্যদিকে করোনার লক্ষণ নিয়ে যারা মারা যাচ্ছেন এবং যারা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা হিসেবের বাইরে থেকে যাচ্ছেন। অনেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু লক্ষণহীন থাকছেন যাকে আমরা ‘এ্যাসিমটোমেটিক’ বলছি, এরাও গণনার বাইরে থাকছেন। সব মিলিয়ে মোদ্দা কথা হলো করোনাকাল যায়নি এবং বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা আসন্ন শীতে এর আক্রমণ বাড়তে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের আচরণ দেখে মনে হয় করোনা বলে কোথাও কিছু নেই। প্রায় আশি ভাগ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অন্যান্য বিধি মানা তো দূরের কথা, মাস্কটি পর্যন্ত পরছেন না। এরা নিজেরা যেমন আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন, তেমন অন্যদেরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হয়ত সরকার লকডাউন উঠিয়ে নিয়ে প্রায় সবকিছু স্বাভাবিক করে দিয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজকর্মে যোগ দেওয়াটাতো আমাদের দায়িত্ব। ক্ষেতে খামারে মিলে কলে কাজ না করলে কৃষিসহ অন্যান্য উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে দেশ ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে পড়তে পারে। তখন হয়ত করোনায় মৃত্যুর সঙ্গে অনাহারেও মানুষকে মরতে হবে। এখনও পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হলে এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে আমাদের কাজে কর্মে বেরোতেই হবে। শুধু প্রয়োজন সচেতনভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ কাজগুলো করে যাওয়া। প্রত্যেকটা সচেতন মানুষ তার নিজ নিজ পরিবারের সুরক্ষার দায়িত্ব যদি নিজে গ্রহণ করেন, তাহলে হয়ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে না। দ্বিতীয় ঢেউ নামে যে আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে তা আমরা মোকাবেলা করতে পারব। বিকে মেইন রোড, খুলনা থেকে
×